দেশের মার্কেটগুলোতে ওয়ালটন খুবই জনপ্রিয় এবং সুপরিচিত একটি ব্র্যান্ড । স্মার্টফোনটি দেশীয় পণ্য হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের নিকট ডিভাইসটি ব্যবহার করার আগ্রহ অনেকাংশেই বেশি । ওয়ালটন কোম্পানির প্রিমো সিরিজ গুলোর চাহিদা অনেক হারে বেশি । প্রিমো সিরিজের মধ্য দিয়ে এই ব্রান্ডটি স্বল্প মূল্যে ভালো মানের অনেকগুলো মডেল মার্কেটে রিলিজ করেছে । তাদের মধ্যে অন্যতম একটি মডেল হলো Walton Primo N5 । দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং আকর্ষণীয় ফিচার নিয়ে ওয়ালটনের শ্বাসরুদ্ধকর মডেল প্রিমো ফাইভ জনপ্রিয়তার দিক থেকে মার্কেটে অনেকটা এগিয়ে । স্বল্প বাজেটের মধ্যে থাকা এই মোবাইলটি ফাস্টেস্ট ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা দিতে পারবে কি ? গেম খেলার জন্য যোগ্য কিনা ? মোবাইলটি ব্যবহার করে কি কি সুবিধা এবং অসুবিধার মুখোমুখি হতে হবে ? একনজরে বিস্তারিত জেনে নেই ।
ডিসপ্লে স্পেসিফিকেশন এবং অপারেটিং প্ল্যাটফর্ম
মোবাইলটির ডিসপ্লের উপর পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই মডেলটিতে ভি টাইপ নচ ডিসপ্লে প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে । আইপিএস এলসিডি টাইপ ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন চোখে পড়ার মতো । টাচ স্ক্রিনে সাপোর্ট করবে 16M কালার । এই স্মার্টফোনটিতে ব্যবহৃত ডিসপ্লের সাইজ রয়েছে 6.82 ইঞ্চি । মোবাইলটির ডিসপ্লে অনেকটাই বড় বলা চলে । ডিসপ্লের রেজুলেশন অপশনে রাখা হয়েছে 720×1640 পিক্সেল । এইচডি রেজুলেশন ব্যবহার করার পরেও আমরা এখানে কিছুটা শার্পনেস এর অভাব দেখতে পাবো । এলসিডির ঘনত্ব 263 পিপিআই এবং এর সাথে 20:9 অ্যাসপেক্ট রেটিও লক্ষ্য করা যায় । সবদিক ঠিকঠাক থাকলেও মোবাইলটির ব্রাইটনেসে তুলনামূলক কম পারফরম্যান্স দেখা যায় । মোবাইলটির অপারেটিং সিস্টেমে গুগোল এর লেটেস্ট ভার্সন অ্যান্ড্রয়েড 11 ব্যবহার করা হয়েছে । মডেলটির চিপসেটের রাখা হয়েছে Mediatek Helio G25 SoC , 2 গিগাহার্টজের আকর্ষণীয়মানের প্রসেসর এর সাথে জিপিইউতে রয়েছে PowerVR GE8320 ।
রেম ও রোম
মোবাইলটির মেমোরিতে 4 জিবি রেম এর পাশাপাশি 64 জিবি রোম ব্যবহার করা হয়েছে । ফোনটির মেমোরি কার্ড স্লটে ডেডিকেটেড এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ।
ফোনটির ঠিক নিচের দিকে ওটিজি ক্যাবল ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে । ওটিজি ক্যাবল ব্যবহার করে 256 জিবি পর্যন্ত রোম ব্যবহার করা যাবে অনায়াসেই ।
এই বাজেটে অন্যান্য মডেলগুলি হয়তো মেমোরি পারফরম্যান্স এতটা ভালো দিবে না । বাজেটের ওপর মিল রেখেই মডেলটিতে স্টোরেজের ব্যবহার করা হয়েছে বলে আমি মনে করি । তবে কিছু কিছু অ্যাপস অথবা সফটওয়্যার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ধীরগতি ও লেক করার সম্ভাবনা রয়েছে । যা এই বাজেটের মডেল গুলোর মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু নয় । আমরা আমাদের স্মার্টফোনটিতে প্রয়োজনীয় তথ্য অথবা ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট রেখে থাকি বা রাখতে পছন্দ করি । Walton Primo N5 ডিভাইসটিতে 64 জিবি স্টোরেজ রয়েছে যেখানে সীমিত আকারে মুভি , নাটক , সিনেমা ইত্যাদি সংগ্রহ করে রাখতে পারব । ইন্টার্নাল মেমোরিতে থাকছে 4 জিবি রেম ব্যবহারের সুবিধা যা ফাস্টেস্ট স্পিড দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা পালন করবে ।
বডি লুক এবং ডিজাইন
222 গ্রামের এই মোবাইল ফোনটি হাতে নিয়ে ব্যবহারে করতে একটু ভারী মনে হতে পারে । হাই কোয়ালিটি বডিবিল্ডের পাশাপাশি পাওয়া যাবে দারুন ফিনিশিং । বডির ডানপাশে দেখা মিলবে পাওয়ার বাটন এবং ভলিউম বাটনের । পাওয়ার বাটনে আকর্ষণীয় একটি লুক দেওয়া হয়েছে , পাওয়ার বাটনের ঠিক উপরে অরেঞ্জ কালারের একটি প্রলেপ দেওয়া হয়েছে যা দেখতে অনেকটাই ভালো লেগেছে । বডির উপরের দিকে রয়েছে হেডফোন জ্যাক এবং নিচে পাওয়া যাবে micro-usb ও লাউডস্পিকার । মোবাইলটি আকারে অনেকটা মানিয়ে নেওয়ার মতো যার দৈর্ঘ্যে রয়েছে 172.8 মিলিমিটার এবং প্রস্থ রয়েছে 78.5 মিলিমিটার এবং 9.65 মিলিমিটার পুরুত্ব । মোবাইলটিকে কালো, সবুজ, লাল এবং নীল কালারের ভিন্ন চারটি রঙে মার্কেটে পাওয়া যাবে । মোবাইলটিতে প্রটেকশন হিসেবে 2.5D গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে । বডি বিল্ডে রয়েছে গরিলা গ্লাসের মতো শক্তিশালী প্রটেকশন গ্লাস , প্লাস্টিক ব্যাক এবং প্লাস্টিক ফ্রেম ।
প্রাইমারি এবং সেলফি ক্যামেরা সেটআপ
মোবাইলটির প্রাইমারি ক্যামেরা সেটআপে ট্রিপল রেয়ার ক্যামেরার ক্যামেরার উপস্থিতি নজরকাড়া । ওয়াইড ক্যামেরায় রয়েছে 13 মেগাপিক্সেলের এর একটি ওয়াইড এঞ্জেল প্রাইমারি ক্যামেরা , 5 মেগাপিক্সেলের আরেকটি আল্ট্রা ওয়াইড ক্যামেরা এবং 2 মেগাপিক্সেলের একটি ডেপ্ট ক্যামেরা । প্রাইমারি ক্যামেরাগুলোর রেজুলেশন 4208×3120 পিক্সেল । ক্যামেরা গুলো দিয়ে শার্প এবং কালারফুল শট , ডিজিটাল জুম , টাচ ফোকাস , ফিঙ্গার ক্যাপচার , নরমাল মোড , বিউটি ফেস কাটসহ আরো বিভিন্ন মোডে ইমেজ তোলা যাবে । প্রাইমারি ক্যামেরার সাথে এলইডি ফ্ল্যাশ লাইট সংযুক্ত রাখা হয়েছে । সেলফি তোলার সুবিধার জন্য ফ্রন্ট ক্যামেরায় 13 মেগাপিক্সেলের একটি ক্যামেরা রয়েছে । সেলফি ক্যামেরার ফিচারে দেখা যায় নরমাল মোড , ফিল্টার মোড , ওয়াটারমার্ক বিউটি ভিডিও সহকারে হরেক রকমের মোড । প্রাইমারি ক্যামেরা এবং সেলফি ক্যামেরা দিয়ে ফুল এইচডি ভিডিও 1080 পিক্সেলে রেকর্ডিং এবং দেখা যাবে ।
নেটওয়ার্ক কানেকশন স্পীড
মোবাইলটি দিয়ে 2 জি ও 3 জি নেটওয়ার্কের পাশাপাশি 4 জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যাবে খুব সহজেই এবং স্বচ্ছন্দ্যভাবে । ফোরজি নেটওয়ার্কের ভার্সনগুলো হলো
1,2,3,4,5,7,8,20,28,38,40,41 । ফোরজি নেটওয়ার্কে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ 42.2 এমবিপিএস নেটওয়ার্ক স্পিড উপভোগ করা যাবে এবং চালানো যাবে । 4.2 মডেলের ব্লুটুথ এর পাশাপাশি অন্যান্য তারবিহীন নেটওয়ার্কগুলো চালানো গেলেও ব্যবহার করা যাবে না এনএফসি । nano-sim এর পাশাপাশি ডুয়েল সিম ব্যবহারের সুবিধা দেওয়া হয়েছে । অনেক সময়ই আমাদেরকে দুটি সিম এর সাহায্যে ফোন চালাতে হয় যা এই ফোনটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । ফাস্টেস্ট স্পিড নেটওয়ার্ক কানেকশন ফোরজি উপভোগ করার সুবিধার কারণে দেশের সর্বত্র স্থান জুড়েই উন্নত নেটওয়ার্ক কানেকশন সংযোগে মোবাইলটিকে রাখা যাবে । ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কখনো ধীরগতিসম্পন্ন নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মুখোমুখি হতে হবে না আশা করা যায় ।
ব্যাটারি পারফরম্যান্স
মোবাইলটিতে non-removable ব্যাটারি টাইপ রয়েছে যার ক্যাপাসিটিতে রয়েছে মোটামুটি ভালো মানের শক্তিশালী পাওয়ার 5500 এমএএইচ । এটা জোর দিয়ে বলা যায় যে মোবাইলটির দাম অনুযায়ী ব্যাটারি পারফরম্যান্স তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো । মোবাইলটির সাথে যে চার্জার রয়েছে সেটি দিয়ে ফুল চার্জ হতে প্রায় 3 ঘন্টা সময় নিতে পারে । ব্যাটারীটির লাইফটাইম অনেকটা ভাল বলা যায় । মোটামুটি কোয়ালিটির ভিতরে অনেকটা ভালো মানের ব্যাটারি পারফরম্যান্স দেওয়া হয়েছে মোবাইলটিতে । ব্যাটারি ফিচার প্রায় সবার কাছেই ভালো লাগবে বলে আশা করা যায় । টকটাইম ব্যবহারে আপ টু 40 ঘণ্টা , ইন্টারনেট সংযোগ কানেকশনে সংযুক্ত রেখে প্রায় 16 ঘন্টা এবং ভিডিও প্লেব্যাক ব্যবহারে প্রায় 20 ঘণ্টা ব্যাটারিটি পাওয়ার দিতে সক্ষম । মোবাইলটি সম্পর্কে দেওয়া তথ্যে তারবিহীন চার্জিং সিস্টেম এবং রিভার্স চার্জিং সিস্টেমের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি ।
সিকিউরিটি সেন্সর
মার্কেটে রিলিজ করা প্রায় প্রতিটা স্মার্টফোনেই আমরা সিকিউরিটি ব্যবস্থা দেখতে পাই । প্রাইভেসির কথা চিন্তা করে স্মার্টফোনগুলোতে সিকিউরিটি সিস্টেম চালু করা হয়েছে । সিকিউরিটি ব্যবস্থা গুলোর মধ্যে খুব জনপ্রিয় এবং নির্ভুল ভাবে সনাক্ত করার জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর গুরুত্ব অপরিসীম । মোবাইলটির সিকিউরিটি পদক্ষেপে চমৎকার পারফরম্যান্স উপলব্ধি করা যায় । মোবাইলটির ঠিক রেয়ার মাউন্টেডে সেট করা হয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর । তবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি একটু স্লো কাজ করবে এবং সেন্সরটি একটু নিচে দিলে ভালো হতো । প্রক্সিমিটি, একসিলেরোমিটার , গায়রো এবং অন্যান্য সিকিউরিটি সিস্টেম গুলো অনেকটাই জনপ্রিয় এবং সঠিকভাবে শনাক্তকরণে সাহায্য করবে বলে আমি আশাবাদী ।
মোবাইলটির গেমিং পারফরম্যান্স কেমন ?
মোবাইলটি দিয়ে অফলাইন গেম গুলো ভালোভাবে খেলা গেলেও অনলাইন প্রথম সারির গেমগুলোকে ভালো গ্রাফিক্স এর সাথে খেলা যাবে না । অনলাইন গেম গুলি খেলার সময় ফোনটি অনেকটা হ্যাং করে থাকবে কেননা ফোনটিতে আলাদা করে গেমিং প্রসেসর ব্যবহার করা হয়নি । টেম্পল রান এবং লুডু খেলা গুলো খেলতে পারলেও ফ্রী ফায়ার এবং পাবজি গেম গুলো ভালো গ্রাফিক্স এর সাথে খেলা যাবে না বললেই চলে । ব্যাটারি পারফরমেন্স অনেকটা ভালো হওয়ার কারণে ডিভাইসটি দিয়ে দীর্ঘক্ষন গেম প্লে করা যাবে । মেমোরি এবং স্টোরেজ ফিচার মিডিয়াম কোয়ালিটির হওয়ায় গেম প্লে করার জন্য ফাস্টেস্ট স্পিড অথবা মুভমেন্ট কিছুটা কম পাওয়া যাবে । স্মার্টফোনটিতে আলাদা করে গেমিং প্রসেসর না থাকার কারণে ভালো মানের গ্রাফিক্স ডিজাইন সাপোর্ট করবে না । ভালো মানের ফিচার না পাওয়া গেলেও স্টান্ডার্ড মুডে গেম প্লে করা যাবে । গেম প্লে করার জন্য আমরা যারা এই মোবাইলটিকে টার্গেট করবো তাদের অবশ্যই জানা উচিত ডিভাইসটি দিয়ে গেমিং পারফরম্যান্স ততটা ভালো পাওয়া যাবে না ।
ফোনটিকে কি অনলাইন থেকে অর্ডার করা যাবে ?
বর্তমান এই সময়ে অনলাইন থেকে কেনাকাটা করা একটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস । বিশ্ববাজারে ই-কমার্সের উন্নতির ফলে প্রায় প্রতিটি দেশেই এখন ঘরে বসেই স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপ দিয়ে যেকোনো পণ্য এবং নিত্য সামগ্রি খুব সহজে অর্ডার করা যায় । এই মডেলটিকেও খুব সহজেই অনলাইন থেকে অর্ডার করা অথবা ক্রয় করা যাবে । তবে একটা কথা মাথায় রাখা প্রয়োজন যে ওয়েবসাইট থেকে আমরা ফোনটি কিনব সে ওয়েবসাইটটির সততা জেনে নেওয়া প্রয়োজন নয়তো ধোকা খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
রিলিজের সময় এবং প্রাইস
মে , 2021 Walton Primo N5 দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো রিলিজ করা হয় । ফোনটিকে বর্তমানে অফিশিয়াল ভাবেই ওয়ালটন শোরুম এবং মার্কেটগুলোতে পাওয়া যাবে । বাংলাদেশের মার্কেটে মডেলটির অফিসিয়াল বাজার মূল্য ৳12,499 টাকা । আপনি যদি এই মোবাইলটিকে অনলাইন থেকে অর্ডার করতে চান তাহলে কিছুটা বেশি খরচ গুনতে হবে । আনঅফিসিয়াল স্মার্টফোনটির মূল্য আলাদা আলাদা দোকানে ভিন্ন হতে পারে ।
Beautiful
উত্তরমুছুন