মার্কেট গুলোর অন্যতম আকর্ষণ রিয়েলমি ব্র্যান্ড । ম্যাক্সিমাম মানুষের হাতে আমরা একটি স্মার্টফোনের দেখা পেয়ে যাই । স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে না এমন লোকের সংখ্যা খুব কমই রয়েছে । যোগাযোগ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকি । বিভিন্ন ব্র্যান্ডকে বিভিন্ন সময় আমরা বিভিন্ন বাজেটের স্মার্টফোন মার্কেটে রিলিজ করতে দেখি । আর সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ব্র্যান্ড হলো আমাদের চিরচেনা রিয়েলমি । পথে যাত্রার শুরুর দিকে তেমন একটা চাহিদা না থাকলেও জনপ্রিয়তা অর্জন করতে কোম্পানিটির বেশিদিন সময় লাগেনি । এখন আমরা বিশ্বজুড়ে অনেক রিয়েলমি লাভার দেখতে পাই , যারা কিনা মার্কেটে নতুন ডিভাইস লঞ্চ হওয়ার অপেক্ষায় থাকে । 14 ফেব্রুয়ারি 2022 ভালোবাসা দিবসে ভালবাসার সাথে রিয়েলমি তাদের নতুন মডেলটি মার্কেটে রিলিজ করলো তাদের গ্রাহকদের জন্য । এখন আমরা মডেলটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানব । এক নজরে জেনে নেওয়া যাক কোম্পানিটি এই মডেলটিতে কি কি অফার করছে ।
ডিসপ্লে সেকশন
সর্বপ্রথম আলোচনা করা যাক স্মার্টফোনটির ডিসপ্লে নিয়ে । 90 হার্জ রিফ্রেশ রেট এর সাথে ফুল এইচডি প্লাস কোয়ালিটির ডিসপ্লে রয়েছে যা কিনা আমরা 20 হাজার টাকা বাজেটে খুব কম মডেলেই দেখতে পেয়ে থাকি । আইপিএস এলসিডি টাচ ডিসপ্লে রয়েছে যার পিক্সেল দেন্সিটি 400 পিপিআই । ডিসপ্লে সেকশনের দিকে বিশেষ করে এই মডেলটিতে রিয়েলমি খুব ভালো নজর রেখেছে এটা বলা যায় । 6.6 ইঞ্চি সাইজের ডিসপ্লে রয়েছে যেখানে সাপোর্ট করবে ফুল এইচডি রেজুলেশন । multi-touch ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে । অনেকের মনেই একটা প্রশ্ন জাগতে পারে এখানে রিয়েলমি কেন 120 হার্জের রিফ্রেশ রেট রাখলো না ? এখানে কোয়ালকম স্নাপড্রাগণ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে যেটা কিনা সর্বোচ্চ 90 হার্জ রিফ্রেশ রেট সাপোর্ট করে থাকে । সুতরাং এখানে রিয়েলমি চাইলেও 120 হার্জ দিতে পারতো না । আইপিএস এলসিডি ব্যবহার করা হয়েছে যেটা কিনা মোটামুটি ভালই শার্পনেস ধরে রাখতে পারবে । ব্রাইটনেস এর পরিমাণ 480 নিটস যার পারফরম্যান্স ইনডোর এবং আউটডোরে তুলনামূলকভাবে বেশ ভালো ।
ক্যামেরা পারফরম্যান্স
ক্যামেরা সেটআপ এর দিকে যদি একটু তাকাই তাহলে দেখতে পাব এখানে তিনটি রেয়ার আইটেমের ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে । 50 মেগাপিক্সেল এর ওয়াইড সেন্সরের সাথে 2 মেগাপিক্সেল এর ম্যাক্রো এবং ডেপট দুইটি সেন্সর রয়েছে । ক্যামেরা পারফরম্যান্সের বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ নেই তবে এখানে 2 মেগাপিক্সেল এর দুইটি ক্যামেরা ব্যবহার না করে 8 মেগাপিক্সেলের একটি আল্ট্রা ওয়াইড ফাংশন ব্যবহার করলে হয়তো ভালো হতো । মেইন ক্যামেরা 50 মেগাপিক্সেল দিয়ে ভালো মানের ছবি ক্যাপচার করা যাবে । যেহেতু এখানে ডেপট সেন্সর রয়েছে বলা যেতে পারে পোর্ট্রেট মোডে মনোরঞ্জক ছবি তোলা যাবে । এটা বলা যায় যে ক্যামেরা গুলোর মাধ্যমে কালারফুল ছবি তোলা যাবে । 1080 পিক্সেলে ভিডিও রেকর্ড করা যাবে । সেলফি তোলার জন্য সামনের ক্যামেরায় 16 মেগাপিক্সেল দেওয়া হয়েছে , যারা কিনা সেলফি লাভার রয়েছে তাদের জন্য এই ক্যামেরাটি খুব ভালো পারফরর্মেন্স দিতে পারবে ।
বডি ডিজাইন
Realme 9i মডেলটির বডি ডিজাইন পলিকার্বন বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি । স্মার্টফোনটির বডি ডিজাইন দেখতে অনেকটা ভালো লাগে , পিছনের অংশে আর বডি ডিজাইন এবং এর ফিনিশিং খুবই সুন্দর ভাবে দেওয়া হয়েছে যদিও এটি প্লাস্টিকের তৈরি । হাতে নিয়ে ব্যবহার করার সময় একটা অন্যরকম ফিলিংস অনুভব করা যাবে । তার কারণ হলো চারদিকের গ্রাউন্ড ফিনিশিং খুবই স্লিম যা হাতে ব্যবহার করার সময় কোনরূপ সমস্যা সৃষ্টি হবে না বলে ধারণা করা যায় । অপরদিকে মাত্র 190 গ্রামের এই ডিভাইসটিতে ডাবল স্পিকার ব্যবহার করা হয়েছে যা কিনা আমরা অন্যান্য ডিভাইস গুলোতে খুব কমই দেখতে পেয়ে থাকি এই বাজেটের মধ্যে । ডাবল সিম কার্ড স্লট এর সাথে একটি মেমোরি ডেডিকেটেড স্লট দেওয়া হয়েছে । ব্লু এবং ব্ল্যাক কালারের সাথে মডেলটিকে পাওয়া যাবে ।
ব্যাটারি পাওয়ার
শক্তিশালী 5000 মিলি এম্পিয়ার ব্যাটারীর সাথে 33 ওয়াটের চার্জার রয়েছে । যার মাধ্যমে আমরা 30 মিনিটে 47% চার্জ করে নিতে পারব এবং সম্পূর্ণ চার্জ করতে স্মার্টফোনটি সময় নেবে এক ঘণ্টা 17 মিনিটের মত । এখন অনেকের মনে একটি প্রশ্ন চিমটি কাটতে পারে আর সেটি হল 5 হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি ব্যবহার করার পরেও স্মার্টফোনটি অনেকটা চিকন অথবা স্লিম এটা কিভাবে সম্ভব ? হ্যাঁ এটা সম্ভব । স্মার্টফোনটিতে মোটামুটি ভালো মানের মিলি এম্পিয়ার এর ব্যাটারি ব্যবহার করার পরেও সর্টফোনটির ওজন কিন্তু অনেকটাই কম এবং স্লিম । এখন আপনি যদি হেভি ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে এই স্মার্টফোনটি আপনি সম্পূর্ণ চার্জে দেব দিন ব্যবহার করতে পারবেন বলে ধারণা করা যায় আর যদি নরমাল ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে কিন্তু খুব সহজেই দুইদিন ব্যবহার করে নিতে পারবেন ফুল চার্জে ।
অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ
মিড রেঞ্জের বাজেটের মধ্যে আমরা যে স্মার্টফোনগুলো মার্কেটে দেখতে পেয়ে থাকি সেগুলো মূলত দুইটি ভেরিয়েন্টে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি । Realme 9i মডেলটিতে দেখতে পাওয়া যাবে দুইটি ভেরিয়েন্ট । যার একটি হলো 4/64 এবং অন্যটি 6/128 । এখন আমরা জেনে নিব ভেরিয়েন্ট অনুযায়ী কোন মডেলটি আমাদের জন্য ব্যবহারের সুবিধা বয়ে আনবে । এমনিতে স্মার্টফোনটির অ্যাপ ওপেনিং এবং ক্লোজিং পারফরম্যান্স বেশ ভালো বলা যেতে পারে তার পরেও আপনি যদি আরও ফাস্ট স্পিড খুঁজতে চান তাহলে আপনাকে 6/128 মডেলটি বেছে নিতে হবে । তার কারণ হলো স্টোরেজের পরিমাণ যত বেশি আপনার স্মার্টফোনটি মুভমেন্ট স্পিড ঠিক ততটাই বেশি । তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে আমাদের স্টোরেজের পরিমাণ প্রয়োজন হয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে আপনি স্মার্টফোনটিকে সর্বোচ্চ 6 জিবি রেম পর্যন্ত বাড়িয়ে নিতে পারবেন । অভ্যন্তরীণ স্টোরেজের ক্ষেত্রে এই স্মার্টফোনটির পজিশন মোটামুটি ভালো লেভেলেই বলা যায় ।
অনলাইন গেমিং পারফরম্যান্স
মিড রেঞ্জের মধ্যে আমরা বিভিন্ন কোম্পানিকে উন্নত মানের স্মার্টফোন রিলিজ করতে দেখেছি । রিয়েলমি কোম্পানি এই স্মার্টফোনটির মাধ্যমে আমাদের কেমন অনলাইন গেমিং পারফরম্যান্স দিতে পারবে ? এই বিষয়ে অনেকেরই একটি প্রশ্ন থেকে যায় । 20 হাজার বা তার আশেপাশে থাকা বাজেট গুলোর মধ্যে মিডিয়াটেক হেলিও প্রসেসর এর যে স্মার্টফোনগুলো মার্কেটে দেখতে পেয়েছি সেগুলোর পারফরম্যান্স অনেকটা ভালো বলা যাবে । কিন্তু , রিয়েলমি 9i স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা তেমন একটা পারফরম্যান্স বা স্পেশাল লক্ষ করিনি । তবে একেবারেই পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে না এমনটা কিন্তু নয় , 20,000 টাকার আশেপাশে অন্যান্য কোম্পানিগুলো এর থেকে আরো ভালো কিছু অফার করেছে বেশ কিছুদিন আগেই । অনলাইন গেমস গুলো যেমন ফ্রী ফায়ার , পাবজি ছাড়াও অন্যান্য অনলাইন গেম গুলোর মুভমেন্ট ভালো পাওয়া গেলেও তা দীর্ঘস্থায়ী নয় । কিছুক্ষণ গেম খেলার পর অর্থাৎ একশন মুভমেন্টে যাওয়ার সময় কিছুটা লেক চোখে পড়তে পারে । এছাড়া গ্রাফিক্স ডিজাইন মোটামুটি ভালই পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যায় । আমার কাছে মনে হয়েছে এই স্মার্টফোনটির গেমিং পারফরম্যান্স অনুযায়ী দাম কিছুটা বেশি ।
অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার
সময় বাঁচিয়ে এখন ঘরে বসে আপনি চাইলে আপনার রিয়েলমি 9i হ্যান্ডসেটটিকে পেয়ে যাবেন । ইতিমধ্যেই আমরা অনেকে এই মডেলটিকে অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার করে ফেলেছি আবার কেউ কেউ ভাবছি অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার করবো । রিয়েলমি কোম্পানির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট রয়েছে সেখানে তাদের রিলিজ করা প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোন আপনি পেয়ে যাবেন । চাইলেই অর্ডার করে নিতে পারবেন Realmi 9i । যারা একেবারে নতুন অর্থাৎ আগে কখনো অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য অথবা স্মার্টফোন ক্রয় করেনি । তাদের কাছে বিষয়টা হয়তো কিছুটা ঝামেলার বলে মনে হতে পারে । তাছাড়া আপনি যদি অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে অর্ডার না করে ডুবলিকেট ওয়েবসাইট থেকে অর্ডার করে ফেলেন তাহলে কিন্তু ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি বলা যেতে পারে । তাছাড়া রিয়েলমি এখন দেশের মার্কেটের প্রায় প্রতিটি অনলাইন শপিং সেন্টারে পাওয়া যাচ্ছে যেখান থেকে আপনি চাইলে খুব সহজেই আপনার উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতিতে অর্ডার করে নিতে পারেন ঘরে বসেই । এতে করে কিন্তু আপনাকে মার্কেটে যেতে হচ্ছে না ফলে বেঁচে যাচ্ছে আপনার সময় ।
স্মার্টফোনটির প্রাইস বা মূল্য
রিয়েলমি কোম্পানির স্মার্টফোনগুলোর বেশ চাহিদা রয়েছে গ্রাহকদের কাছে । তার পরেও কোম্পানিটি কাস্টমারদের জন্য খুব স্বল্প মূল্যের ভেতরে ভালো পারফরমেন্সের স্মার্টফোন অফার করে থাকে । Realmi 9i স্মার্টফোনটিকে রিয়েলমি কোম্পানি দুইটি ভ্যারিয়েন্টে রিলিজ করেছে । 4/64 জিবি যে ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে সেটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে 17,500 টাকা । এছাড়াও 6/128 জিবির যে ভেরিয়েন্ট রয়েছে সেটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে 19,500 টাকা । স্মার্টফোনটি মার্কেটে যেহেতু নিউ কালেকশন সে ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে কিছুদিন পর এর প্রাইস কিছুটা হলেও ডাউন হতে পারে । তবে সেটা নির্দিষ্ট করে বলা খুব মুশকিল । গ্রাহকদের কাছে এর চাহিদা বেশি হলে মূল্য কমার কিন্তু তেমন কোনো ভরসা থাকছে না । এখন চাহিদার উপর ডিপেন্ড করবে প্রাইস আপ ডাউন ।
সুবিধা এবং অসুবিধা
উপরের আলোচনায় আমরা স্মার্টফোনটির সম্পূর্ণ স্পেসিফিকেশন এবং ফিচার সম্পর্কে জানতে পারলাম । সেখানে আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি এই স্মার্টফোনটি ব্যবহারের বিভিন্ন সুবিধা এবং অসুবিধা । অতএব রিয়েলমি কোম্পানির নতুন এই মডেলটি ব্যবহারে আমাদের কি কি সুবিধা রয়েছে এবং কি কি অসুবিধা মুখোমুখি হতে হবে । বডি ডিজাইন , ব্যাটারি ফিচার , ডিসপ্লে কালেকশন , চার্জার সিস্টেম এবং নেটওয়ার্কিং সিস্টেম মোটামুটি সবগুলো বিষয়ে আপডেট হিসেবে কিছু না পাওয়া গেলেও পারফরমেন্সের দিক দিয়ে মোটামুটি মানিয়ে নেওয়া যায় । স্মার্টফোনের ক্যামেরা পারফরম্যান্স এবং মূল্য কিছুটা বেশি হওয়ার কারণে অনেকের হাতের বাইরে চলে যেতে পারে অর্থাৎ বেশি বাজেটের কারণে অনেকের বাজেট বিরোধী স্মার্টফোন হওয়ার কারণ হতে পারে । প্রাইস কিছুটা কম হলে হয়তো অনেকেই এই স্মার্টফোনটি ব্যবহার করার আগ্রহ প্রকাশ করতো । পরিশেষে বলা যেতে পারে পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে তবে প্রাইসটা কিছুটা নামিয়ে আনলে হয়তো অনেকেই ব্যবহার করার আগ্রহ দেখাতো ।