দেশের বাজারে শাওমি রেডমির ব্যাপক চাহিদা দেখতে পেয়ে যাই । আর এই জন্যই তারা কিন্তু তাদের মডেল গুলোকে মার্কেটে কিছুদিন পরপরই আপডেট করে নেয় । শাওমি রেডমির যদি অন্যতম একটি সিরিজের কথা আমরা বলতে যাই তাহলে কিন্তু সর্বপ্রথম নোট সিরিজের কথাই চলে আসে । তাদের দেওয়া অ্যাডভার্টাইজমেন্টে তারা উল্লেখ করেছিল কিছুদিনের মধ্যেই তাদের নতুন মডেল Redmi Note 11 নিয়ে হাজির হবে । অবশেষে ফেব্রুয়ারি , 2022 নিয়ে কাস্টমারদের মুখে হাসি ফুটিয়ে এক অন্যতম রূপে হাজির Redmi Note 11 । দেশের বাজারে মডেলটি এখন অ্যাভেলেবল । বেশ কিছুদিন ধরে আমরা নোট সিরিজে ব্যাপক আপডেট লক্ষ করে আসছি । তার কারণ হলো মার্কেটগুলোতে মিড রেঞ্জের চাহিদা তুলনামূলকভাবে একটু বেশি । আর অপরদিকে শাওমি তাদের কাস্টমারদেরকে অফার করে থাকে স্বল্পমূল্যের ভিতরে মোটামুটি একটি ভালো মানের স্মার্টফোন । তবে কেবলমাত্র স্বল্পমূল্যের ভিতরে নয় হাই কোয়ালিটির আমরা কিছু স্মার্টফোন দেখতে পেয়ে যাব যেগুলোর চাহিদাও অনেক বেশি । যা হোক কথা না বাড়িয়ে চলুন দেখে নেওয়া যাক নতুন এই স্মার্টফোনটির ভেতরে কি কি স্পেসিফিকেশন এবং ফিচার দেওয়া হয়েছে ।
বক্সে যা যা থাকছে
রেডমি নোট 11 মডেলটিকে একটি সুন্দর বক্সে সেট করা হয়েছে । সাদা কালারের বক্সের ভেতরে আমরা রেডমি নোট 11 মডেলটিকে পেয়ে যাব । বক্সের ভেতরে স্মার্টফোনটিকে বেশ ভালোই লাগবে । আমরা সকলেই হয়তো জানি বক্সের ভেতরে আসলে কি কি পাওয়া যায় । বক্স খোলার পর সর্ব প্রথম চোখে পড়বে স্মার্টফোনটি এবং এর সাথে রয়েছে চার্জার কেবল । স্মার্টফোনটির ইউজার ম্যানুয়াল কার্ড দেখতে পাওয়া যাবে । বক্সের ভেতরে স্মার্টফোনটিকে দেখে মোটামুটি একটা দারুণ ভাব চলে আসবে ।
বডি ডিজাইন
বডি ডিজাইন নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে একটি বিষয় না বললেই নয় আর সেটি হল স্মার্টফোনটি দেখতে কিন্তু অনেকটাই সুন্দর । রেয়ার প্যানেলটি দেখতে আসলেই অনেকটাই মনমুগ্ধকর যা আপনার দৃষ্টিশক্তিকে খুব সহজেই আকর্ষিত করে দিতে পারবে । তবে এই স্মার্টফোনটি দেখতে আসলে যতটা সুন্দর বডি ফিনিশিংয়ে আসলে ঠিক ততটা মজবুত নয় । প্লাস্টিকের ফ্রেমে আবদ্ধ থাকা এই মডেলটির ডান পাশে থাকছে হোম বাটন । আর এখানে একটি মজার বিষয় হলো হোম বাটনটিকে আমরা স্ক্যানার অর্থাৎ ফিঙ্গারপ্রিন্ট হিসেবেও কাজে লাগাতে পারবো । আর ঠিক হোম বাটন এর উপরের দিকেই দেখা মিলবে ভলিউম বাটনের । আমার মতে হোম বাটন এবং ভলিউম বাটনের অবস্থান ঠিকঠাক বলা যেতে পারে । স্মার্টফোনটিকে আমি যখন প্রথমবার দেখেছিলাম তখন আমার কাছে মনে হয়েছিল এই স্মার্টফোনটি আসলে অনেককেই স্লিম । তবে অনেকটা যে মোটা এমনটা কিন্তু নয় , মোটামুটি ব্যবহার করার মতোই । ওজনের কথা যদি বলি তাহলে কিন্তু ওয়েট ব্যালেন্স খুব একটা বেশি নয় । হাতে ব্যবহার করার জন্য মানানসই । স্মার্টফোনটির বডির নিচের দিকে থাকছে সাউন্ড সিস্টেম এবং 3.5 এমএম হেডফোন জ্যাক ।
ক্যামেরা পারফরম্যান্স
শাওমি কোম্পানিটিকে আমরা সচরাচর যে স্মার্টফোনগুলো রিলিজ করতে দেখি সেগুলো থেকে ক্যামেরা পারফরম্যান্সে বেশ আপডেট আনা হয়েছে রেডমি নোট 11 মডেলটিতে । রেডমি নোট 11 সিরিজটির ক্যামেরা সেটআপ এর দিকে আমরা যদি তাকাই তাহলে দেখতে পাবো এক ব্যতিক্রমী চিত্র । প্রথম দেখায় আপনার কাছে হয়তো মনে হতে পারে যে এখানে পাঁচটি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে । প্রথম দেখায় আমারও এমনটা মনে হয়েছিল কিন্তু পরে দেখতে পেলাম এখানে দেওয়া হয়েছে মেইন ক্যামেরাসহ চারটি ক্যামেরা কালেকশন । মেইন ক্যামেরায় থাকছে 50 মেগাপিক্সেল , আল্ট্রা ওয়াইড ফাংশনে থাকছে 8 মেগাপিক্সেল , ম্যাক্র ক্যামেরা 2 মেগাপিক্সেল এবং ডেপট সেন্সরে 2 মেগাপিক্সেলনিচের ক্যামেরাটির সাথে রাখা হয়েছে ভিডিও রেকর্ডার আইকন এবং ফ্লাসলাইট । আমার মতে স্মার্টফোনের ক্যামেরা মডারেটর পিছনের বডি অনেকটা জায়গা জুড়ে নিয়েছে । এখানে যদি আরেকটু ছোট করে ক্যামেরা সেটআপ করা যেত তাহলে হয়তো দেখতে একটু গর্জিয়াস বলে মনে হতো । এছাড়াও থাকছে সেলফি তোলার জন্য সামনের ক্যামেরায় 13 মেগাপিক্সেল এর একটি আকর্ষণীয় মানের সেলফি ক্যামেরা । যেটির মাধ্যমে আউটডোরে এবং ইনডোরে খুব ভালো মানের ছবি ক্যাপচার করা যাবে বলে ধারণা করা যায় ।
ডিসপ্লে সাইজ এবং রেজুলেশন
ডিসপ্লে সেকশনের দিকে তাকালে দেখতে পাবো 6.6 ইঞ্চি একটি বিশাল আকৃতির ডিসপ্লে সাইজ দেওয়া হয়েছে রেডমি নোট 11 মডেলটিতে । এখানে অবশ্য আইপিএস এলসিডি টাইপ ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে । এখানে কিন্তু একটি কথা থেকে যায় আর সেটি হল আইপিএস এলসিডির পরিবর্তে সুপার এমোলেড ব্যবহার করা হলে অন্যান্য মডেলগুল থেকে এখানে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যেত । বর্তমানে এখন গ্রাহকেরা সুপার এমোলেড টাইপের ডিসপ্লে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বেশ আকর্ষণ খুঁজে পেয়েছে । তবে 90 হার্জের রিফ্রেশ রেট ব্যবহার করা হয়েছে এবং পিপিআই দেন্সিটি থাকছে 399 পিক্সেল । এইচডি রেজুলেশনের ডিসপ্লেটি ভিডিও তারতম্য ধরে রাখতে সক্ষম এবং যেকোনো এইচডি ভিডিও রেকর্ডিং করার জন্য এই স্মার্টফোনটির ডিসপ্লে নিখুঁতভাবে ধরা দিবে বলে ধারণা করা যায় আর এমনটাই আমার মনে হয়েছে । স্মার্টফোনটির টাচ স্ক্রিন এর কথা যদি বলি তাহলে সেখানে কিছুটা ধীর গতি পাওয়া যায় । বাই দ্যা ওয়ে স্মার্টফোনটিকে প্রটেকশনের জন্য কর্নিং গরিল্লা গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে ।
স্টোরেজ / মেমোরি
স্মার্টফোন গুলোর মধ্যে যে কয়টি বিষয়ে গ্রাহকদের আকর্ষণ একটু বেশি বলা যায় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ অর্থাৎ রেম এবং রোম । উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ধরুন আপনি রেডমি নোট 11 মডেলটিকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন তাহলে এই স্মার্টফোনটিতে কত জিবি অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ এবং ইন্টারনাল স্টোরেজ ব্যবহার করা হয়েছে সে বিষয়টি জানার একটা কৌতুহল থেকে যাবে । দুইটি ভেরিয়েন্ট এর সাথে রেডমি নোট 11 মডেলটিকে মার্কেটে রিলিজ করা হয়েছে । রেম ব্যবহার করা হয়েছে 4 এবং 6 জিবি এবং রোম ব্যবহার করা হয়েছে 64 এবং 128 জিবি । দুইটি ভেরিয়েন্ট এর মধ্যে কোন কোয়ালিটিটি আপনার কাছে ভালো বলে মনে হতে পারে এটি নির্ভর করবে আপনার ব্যবহারের উপর । আপনি যদি স্মার্টফোনগুলোকে বেশি ব্যবহার করে থাকেন অর্থাৎ আপনার যদি বেশি অ্যাপস এবং সফটওয়্যার এর প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলে কিন্তু আপনি 4 জিবির মাধ্যমে তেমন স্পিড বাড়াবেন না এজন্য প্রয়োজন হবে 6 জিবি রেম এর । এছাড়াও অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে । বাড়ানোর জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারবেন ওটিজি ক্যাবল ।
গেমিং সাইট
বর্তমান প্লাটফর্মে আমরা বিভিন্ন ধরনের অনলাইন গেমস দেখে থাকি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ফ্রী ফায়ার , পাবজি এবং অন্যান্য আরো গেমসমূহ । স্মার্টফোনটি আসলে অনলাইন গেম খেলার জন্য ততটা হাই লেভেলের পারফরম্যান্স দিতে পারবে না তবে আপনি মোটামুটি ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য স্মার্ট ফোনটি ভালো হবে বিশেষ করে গেম খেলার জন্য । ফ্রী ফায়ার খেলার সময় আপনি হাই লেভেলের গ্রাফিক্স ডিজাইন পাচ্ছেন না । যা কারণ হলো এ স্মার্টফোনটিকে আদালতের গেমিং প্রসেসর না থাকার কারণে অনলাইন গেমস গুলো খেলার সময় মাঝে মাঝে ফ্রেম লক দেখতে পাওয়া যেতে পারে । যে বিষয়টি অনেকটা খারাপ বলে লাগতে পারে আমাদের কাছে কারণ গেমস খেলার সময় ফ্রেম লক হয়ে যাওয়াটা অনেকটা দুর্ভাগ্যের একটা ব্যাপার । তবে গেমিং মুভমেন্ট এবং স্পিড খুব ভালো পাওয়া যাবে সেটা ধারণা করা যায় ।
ব্যাটারি পাওয়ার
এবার যদি আমরা স্মার্টফোনের ব্যাটারি সম্পর্কে নিয়ে আলোচনা করি তাহলে দেখা যাবে এখানে রয়েছে 5000 মিলি এম্পিয়ারের ব্যাটারি পাওয়ার । ব্যাটারি পাওয়ার দেখে দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে এই স্মার্টফোনটির ব্যাটারি পারফরমেন্সে মোটামুটি ভাল বলা যায় । এই ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করার কোন প্রশ্নই আসে না তার কারণ হলো স্মার্টফোনটি সাথে রয়েছে 33 ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং সিস্টেম ব্যবস্থা । এক কথায় বলা যেতে পারে আমরা যারা হাইলেবেলের ইউজার রয়েছি তাদের জন্য এই মডেলটির ব্যাটারি অনেকটা ব্যাকআপ দিতে পারবে ইনশাল্লাহ । তবে যে বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করেছি সেটি হল এই বাজেটের মধ্যে থাকা অন্যান্য স্মার্টফোনগুলোতে আমরা এর থেকে বেশি ব্যাকআপ লক্ষ্য করতে পেরেছি । তবে এটাও বলে রাখি এই বাজেটে রেডমি নোট 11 মডেলের ব্যাটারি ব্যাকআপ যে খারাপ সেটা কিন্তু বলা যাবে না । 5000 মিলি এম্পিয়ার ব্যাটারি রয়েছে তার সাথে থাকছে 33 ওয়াট এর ফাস্ট চার্জিং ব্যবস্থা এককথায় মোটামুটি ভালই বলা যেতে পারে ।
অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার করা যাবে কি ?
শাওমি কোম্পানির বেশ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে এবং শোরুম রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে । আমরা কিন্তু সেখান থেকে অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার করে নিতে পারব । অর্ডার করার জন্য আমাদের তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হবে না আশা করি তার কারণ হলো এই স্মার্টফোনটি পৃথিবী জুড়ে প্রায় প্রতিটি দেশেই রিলিজ করা হয়েছে যার কারণে আমাদের অনলাইন থেকে অর্ডার করতে কোনরূপ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না । কিন্তু অনেক সময় আমরা দেখতে পেয়েছি যে অনলাইনে আমাদের পছন্দ করা জিনিস অর্ডার করার পরেও অন্য পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে টাকা মেরে চলে গেছে কোম্পানি অথবা ওয়েবসাইট । এসব মাথায় রেখেই আমাদেরকে অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে রেডমি নোট 11 মডেলটিকে অর্ডার করতে হবে সে ক্ষেত্রে আপনার সময় অনেকটা বাচবে আপনাকে যেতে হবে না মার্কেটে । এজন্য আপনাকে কিছুটা বাড়তি খরচ করতে হবে বিশেষ করে ডেলিভারি ফি এর জন্য ।
মডেলটির সুবিধা এবং অসুবিধা
রেডমি নোট 11 মডেলটির সাথে যদি আমরা অন্যান্য পাঁচটি কিংবা দশটি স্মার্টফোনের সাথে তুলনা করি তাহলে দেখা গেছে এই মডেলটি অন্য একটি মডেল থেকে কোন এক দিয়ে ভালো আবার কোন এক দিয়ে খারাপ । এমনটা কিন্তু হতে পারে । উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে রেডমি নোট 11 মডেলটির প্রিভিয়াস জেনারেশন অর্থাৎ রেডমি নোট 10 , সেখানেও কিন্তু ডিসপ্লে প্রটেকশন গরিল্লা গ্লাস 3 ব্যবহার করা হয়েছে আবার রেডমি নোট 11 এখানেও আমরা সেম জিনিস দেখতে পাই । আবার কিছু কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে রেডমি নোট 10 ভালো অফার করেছে আবার কিছু কিছু জায়গায় রেডমি নোট 11 ভালো অফার করেছে কাস্টমারদের জন্য । এখন ডিসিশন আপনার স্মার্টফোনটির আমরা বেশ কিছু সুবিধা এবং বেশ কিছু অসুবিধা দেখতে পেয়েছি যেগুলো বিবেচনা করেই আমাদের স্মার্টফোন ব্যবহার করা উচিত ।
রেডমি নোট 11 প্রাইস
রেডমি নোট 11 প্রথম দিকে যখন মার্কেটে লঞ্চ হবে হবে একটা ভাব ছিল তখন আমি মনে করেছিলাম এই স্মার্টফোনটির মূল্যও 17 থেকে 20 হাজার টাকার মধ্যে থাকবে । কিন্তু মডেলটি যখন মার্কেটে আমাদের জন্য রিলিজ হল তখন এই স্মার্টফোনটির মূল্য দেখতে পেলাম 16,500 টাকা । যদিও আমার আইডিয়া স্মার্টফোনটির প্রাইজের আশেপাশে ছিল বাট স্মার্টফোনটি কাস্টমারদের অফার করছে তার থেকেও কম । শাওমি কোম্পানি তাদের রিলিজ করা মডেল রেডমি নোট 11 স্মার্টফোনটির প্রাইস দেশের বাজারে রেখেছে মিড রেঞ্জের মধ্যে অর্থাৎ 16 হাজার 500 টাকা ।