গ্লোবাল মার্কেটে সব থেকে বেশি জনপ্রিয় যে ব্রান্ডটি রয়েছে সেটি আমাদের সবারই চিরচেনা আইফোন । অনেকের কাছে আইফোন ব্যবহার করা একটা ড্রিমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ । তাদের জন্য বিভিন্ন কোম্পানি আইফোন এর ডিজাইন স্বরূপ মার্কেটে রিলিজ করে থাকে বিভিন্ন পারফরম্যান্সের স্মার্টফোন । অপ্রতিরোধ্য পারফরমেন্সের সাথে পাল্লা দিয়ে এখন আইফোনের বিকল্প ডিজাইন হিসেবে মার্কেটে এক পা এগিয়ে রিয়েলমি । 10ই ফেব্রুয়ারি, 2022 রিয়েলমির হাত ধরে মার্কেটের নিজের পথ যাত্রা শুরু করে রিয়েলমি C35 । স্মার্টফোনটির আউটলোক দেখে অনেকেই এটিকে আইফোনের বিকল্প হিসেবে অভিহিত করেছে বিশেষ করে বডি ডিজাইনের জন্য । ডিজাইন থেকে শুরু করে পারফরম্যান্সের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো । সেখানে আমরা স্মার্টফোনটির ভালো মন্দ দিকগুলো জানতে পারবো এবং তার পাশাপাশি ডিসাইড করে নিতে পারবো এই স্মার্টফোনটি ক্রয় করা আমাদের উচিত হবে কিনা ।
রিয়েলমি C35 মডেলটির মূল আকর্ষণ হলো বডি ডেকোরেশন এবং আউটলুক । ডিভাইসটি হাতে নিয়ে ব্যবহার করার সময় প্রিমিয়াম একটা ফিল পাওয়া যাবে । এখানে যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে সেটি হল স্মার্টফোনটির সম্পূর্ণ বডি পলি কার্বন দিয়ে তৈরি যার কারণে এটিকে ব্যবহার করার সময় অবশ্যই ব্যাক কভার ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে করে বডিতে দাগ লেগে না যায় । প্রথম নজরে আপনার কাছে মনে হবে আইফোন এলিভেন প্রো কিন্তু মডেলটি আসলে রিয়েলমি C35 । হালকা গ্রীন এবং কালো কালারের এই মডেলটিকে মার্কেটে পাওয়া যাবে যদিও পারসোনালি ভাবে আমার কাছে গ্রীন কালারটি ভালই লেগেছে । প্লাস্টিকে আবদ্ধ এই মডেলটিতে বডি প্রটেকশন এর পাশাপাশি থাকছে না পানিরোধক সিস্টেম । হাতে নিয়ে ব্যবহার করার সময় প্রিমিয়াম লুক চোখের নজরে আসবে এবং যার ওজন মাত্র 189 গ্রাম । সিঙ্গেল স্পিকারের সাথে থাকছে 3.5 এমএম হেডফোন জ্যাক ।
মেমোরি পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই মডেলটি । রিয়েলমি C35 স্মার্টফোনটিতে দুইটি ভেরিয়েন্টের মেমোরি পারফরম্যান্স দেখা যাবে । যার প্রথমটিতে থাকছে 4 জিবি রেম এবং অপরটিতে থাকছে 6 জিবি রেম । তার সাথে সাথে রোম থাকছে 64 জিবি এবং 128 জিবি । এই ডিভাইসটিতে একটি ইন্টারেস্টিং বিষয় যুক্ত করা হয়েছে সেটা হল ওটিজি ক্যাবল । যার মাধ্যমে আপনি এক্সটার্নাল স্টোরেজ অথবা ইন্টারনাল স্টোরেজ আপনার সুবিধামতো বাড়িয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন । এটি একটি খুবই ভালো দিক । দেখা গেল আপনার 4 জিবি ভেরিয়েন্টের স্মার্টফোনটি ব্যবহার করার সময় কিছু অসুবিধা চোখে পড়লো অথবা আপনার বাড়তি স্টোরেজের প্রয়োজন হল ঠিক তখন কিন্তু আপনি ওটিজি ক্যাবলের মাধ্যমে সুবিধাটি গ্রহণ করে নিতে পারবেন খুব সহজেই । এই সুবিধাটি থাকার কারণে মেমোরি পারফরম্যান্স আমার কাছে কিছুটা গর্জিয়াস বলেই মনে হয়েছে ।
ব্যাটারি এবং চার্জিং সিস্টেম নিয়ে কথা বলতে গেলে সবার প্রথমেই চলে আসে ব্যাটারি ব্যাকআপ এর কথা । 5000 মিলি এম্পিয়ার পাওয়ার এর বেশ চিকন একটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে যার কোয়ালিটি lithium-polymer । ব্যাটারি পারফরম্যান্স তেমন আহামরি কিছু নয় জাস্ট বাজেট হিসেবে চাঞ্চল্যকর । এবার কথা বলা যাক চার্জিং সিস্টেম এর বিষয়ে । চার্জিং সিস্টেমে এই স্মার্টফোনটির সাথে 18 ওয়াট ফাস্ট চার্জিং একটি ক্যাবল দেওয়া হয়েছে । এখানে কিছুটা ঘাটতি আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি । মিনিমাম 25 বা 30 ওয়াট চার্জিং সিস্টেম রাখা হলে হয়তো ভালো হতো । যার কারণে আমরা চার্জিং স্পিড কিছুটা স্লো পাবো । ম্যাক্সিমাম এই বাজেটের মধ্যে আমরা ওয়ারলেস চাজিং সিস্টেম দেখতে পাই না আর সে দিক বিবেচনায় রিয়েলমি কোম্পানি হয়তো এখানে ওয়ারলেস চাজিং সিস্টেমের প্রয়োজন মনে করেনি । পরিশেষে বলা যেতে পারে স্মার্টফোনটিতে যে ব্যাটারি ব্যাকআপ দেওয়া হয়েছে সেটি নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্ট থাকা যাবে ।
এখন আমরা আলোচনা করবো স্মার্টফোনটির ডিসপ্লে সম্পর্কে । আকারে বেশ বড় একটি ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে যার সাইজ 6.5 ইঞ্চি । 60 হার্জ রিফ্রেশ রেট এর সাথে থাকছে ফুল এইচডি প্লাস ডিসপ্লে । এই বিষয়টি অনেকটা অবাক করার মতো । ওয়াটার ড্রপ নচ টাইপ এর ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে 180 হার্জ টার্চ স্যাম্পলিং রয়েছে । যার জন্য খুব ভালো টার্চ পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে । 600 নিটস ব্রাইটনেস পাওয়া যাবে যার ফলশ্রুতিতে স্বল্প আলোতে ভালো কালার পাওয়া গেলেও রোদের মধ্যে কিছুটা অসুবিধা হবে । এছাড়াও থাকছে আই প্রটেকশন সিস্টেম । ফুল এইচডি রেজুলেশন রয়েছে 1080×2400 । পিক্সেল দেন্সিটির পরিমাণ 401 । থাকছে না নোটিফিকেশন এলইডি । সবমিলিয়ে ডিসপ্লে পারফরম্যান্স যথেষ্ট মনমুগ্ধকর । খুব ভালো কালার ফুলের একটি ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে যেটি দিব্যি আরামেই ভালো মানের কালার ধরে রাখতে সক্ষম ।
ক্যামেরা পারফরমেন্সের দিক দিয়ে রিয়েলমি অনেকটা এগিয়ে বলা যায় তার কারণ হলো রিয়েলমি তাদের রিলিজ করা এই মডেলটিতে চমৎকার একটি ক্যামেরা পারফরম্যান্স গিফট করেছে । মেইন ক্যামেরায় 50 মেগাপিক্সেল রাখা হয়েছে যা কিনা এই বাজেটে অন্যান্য মডেলগুলোতে আমরা সচরাচর দেখতে পাই না । কোম্পানিটি এদিকে খুব ভালো নজর রেখেছে এটা বলা যায় । ম্যাক্রো এবং বি এন্ড ডব্লিউ সেন্সরে দুই-মেগাপিক্সেল করে দুইটি ক্যামেরার মধ্য দিয়ে ট্রিপল রেয়ার আইটেম অফার করলেও আল্ট্রা ওয়াইড ফাংশনের মিসিং গ্রাহকদের কাছে কিছুটা হলেও বেদনাদায়ক মনে হতে পারে । সেলফি তোলার জন্য সামনের ক্যামেরায় 8 মেগাপিক্সেল এর একটি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে । ক্যামেরা পারফরমেন্সে আমরা বিভিন্ন ধরনের ফিচার দেখতে পেয়েছি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম কিছু হল ফিল্টার , এইচডিআর , সিঙ্গেল এলইডি ফ্ল্যাশ , নাইট মোড , এআই বিউটি ইত্যাদি ইত্যাদি । এছাড়াও থাকছে 1080 পিক্সেলে ইমেজ ক্লিক করার সুবিধা ।
Realme C35 স্মার্টফোনটিকে এন্ড্রয়েড ভার্সন 11 এর মাধ্যমে চালনা করা হয়েছে । Unisoc প্রসেসর এর সাথে গেমিং গ্রাফিক্স রান করবে Arm Mali G57 । অপারেটিং সিস্টেমের আপডেট আনলেও এখানে আমরা কিন্তু মিডিয়াটেক হেলিও এর অনুপস্থিতি দেখতে পাই । ডুয়েল সিম কার্ড ব্যবহারের পাশাপাশি একই সাথে ডাবল সিমে ফোরজি নেটওয়ার্ক কানেকশন রেখে ব্রাউজিং করা পসিবল । হ্যাঁ অবশ্যই যে বিষয়টি না বললেই নয় সেটি হলো সর্বোচ্চ ফোরজি নেটওয়ার্ক স্পিড পাওয়া যাবে এই ডিভাইসটির মধ্য দিয়ে । তারবিহীন নেটওয়ার্ক গুলোর মধ্যে প্রায় প্রতিটি সেক্টরে বেশ ভালো পারফরর্মেন্স পাওয়া যাবে বিশেষ করে wifi-direct , ব্লুটুথ , হটস্পট , জিপিএস ইত্যাদি । ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট এর উপস্থিতি বেশ ভালো লেগেছে । এখানে থাকছে না এনএফসি ব্যবহারের সুবিধা । কানেকটিভিটিতে দারুন সংযোগের দেখা মিলবে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকেই ।
স্মার্টফোনটির রেয়ার মাউন্টেডে অর্থাৎ গুগোল অ্যাসিস্ট্যান্ট বাটন এর বিকল্প হিসেবে ফিজিক্যাল স্ক্যানার সেট করা হয়েছে । ফিজিক্যাল স্ক্যানার হিসেবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক বেশি । যা আমরা এখানে পেয়ে যাচ্ছি । ফিজিক্যাল স্ক্যানার হিসেবে যে সেন্সর দেওয়া হয়েছে সেটির কার্যক্ষমতা এককথায় ভালো বললেই চলে । ফাস্ট এবং একুরেট ভাবে শনাক্তকরণে যার অবদান অনস্বীকার্য । বিলাসিতা ছোঁয়ায় এখন মানুষ ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে তাদের পছন্দ করা স্মার্টফোন অর্ডার করে নিতে পারে । এখন আপনি যদি অনলাইন থেকে এই ডিভাইসটি অর্ডার করার চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন তাহলে কিন্তু সেটি সম্ভব । রিয়েলমি কোম্পানির অফিশিয়াল পেইজ থেকে নিয়ম মেনে খুব সহজে স্মার্টফোনটি অর্ডার করে নিতে পারবেন সেক্ষেত্রে কোন ঝামেলা নেই । তবে অবশ্যই আপনাকে চোখ কান খোলা রেখে কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে ।
অনলাইন গেমিং এর কথা বললেই আমাদের মাথায় চলে আসে ফ্রী ফায়ার এবং পাবজির নাম । ম্যাক্সিমাম মানুষ স্মার্টফোনের মাধ্যমে গেম প্লে করে থাকে সেটা হোক ফ্রী ফায়ার বা পাবজি । এখন কথা হল স্মার্টফোন গেম প্লে করার জন্য কতটা প্রস্তুত সেটা নির্ভর করবে আপনার চাহিদার উপর । আপনি যদি প্রফেশনাল মানের গেমার হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে একটি ভালো স্মার্টফোন চয়েজ করে নিতে হবে সেখানে মিডিয়াম রেঞ্জা থাকা স্মার্টফোনগুলো আপনার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে না । অপরদিকে আপনি যদি টুকটাক গেম প্লে করে থাকেন তাহলে এই মডেলটি আপনাকে ভালো পারফরম্যান্স দিতে পারবে বলে আশা করা যায় । ফ্রী ফায়ার এবং পাবজির মতো জনপ্রিয় অনলাইন গেম গুলো এই মোবাইলটির সাহায্যে আপনি খুব সহজে রান করাতে পারবেন এবং গেম প্লে করতে পারবেন , যদি আপনি একজন ছোটখাটো গেমার হয়ে থাকেন ।
আমরা অনেকেই অধীর অপেক্ষায় বসে আছি এই স্মার্টফোনটির প্রাইস জানার জন্য । ডিভাইসটি গ্লোবাল মার্কেটসহ দেশের বাজারে অফিশিয়াল ভাবে রিলিজ হয়েছে । রিলিজের সময় দেশের বাজারে এই মডেলটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে 16,990 টাকা । উপরে আমরা এই স্মার্টফোনটির স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছি । আর সেখান থেকে জানা তথ্য মতে এটা বলা যেতে পারে যে পারফরম্যান্স অনুযায়ী এই ডিভাইসটির মূল্য ততটা বেশি নয় । কোম্পানিটি তাদের গ্রাহকদের জন্য বেশ ভাল পারফরম্যান্স দিয়ে প্রাইসের মাত্রা অনেকটাই কমিয়ে রেখেছে বলা যায় । 20,000 টাকার মধ্যে একটি ভালো পারফরর্মেন্স এর স্মার্টফোন মার্কেটে খুঁজছেন ? তাহলে রিয়েলমির পক্ষ থেকে এই মোবাইলটি আপনাকে অফার করছে দারুণ পারফরমেন্সের সিরিজ C35 । 15 থেকে 20 হাজার টাকার মধ্যে অনেকে স্মার্টফোন রয়েছে দেশের মার্কেট জুড়ে সেগুলো থেকে এই মডেলটিকে আমার কাছে বেস্ট বলে মনে হয়েছে । যার রয়েছে এক অবিশ্বাস্য বডি ডিজাইন ।
Tags:
রিয়েলমি মোবাইল