স্বল্প খরচে আমরা যদি ভাল মানের পারফরম্যান্স খুঁজে থাকি তাহলে আমি বলবো রিয়েলমি কোম্পানির অবদান অনেক জোড়ালো । কোম্পানিটি গ্রাহকদেরকে মিডিয়াম অ্যামাউন্টে খুব ভালো মানের পারফরম্যান্স অফার করে থাকে । রিয়েলমি তার নারজো সিরিজের মধ্য দিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সফল হয়েছে । নারজো সিরিজের বেশ কয়েকটি মডেল আমরা ইতিমধ্যেই মার্কেটে রিলিজ হতে দেখেছি । আর সেগুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে লেটেস্ট যে ভার্সনটি রয়েছে সেই মডেলটির স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে সম্পূর্ণ রিভিউতে । বর্তমান সময়ে রিয়েলমির লেটেস্ট সেই ভার্শনটির নাম হল রিয়েলমি নারজো 50 । তো ফাইনালি অফিশিয়াল ভাবে গ্লোবাল মার্কেট এর পাশাপাশি দেশের মার্কেটগুলোতেও রিয়েলমি নারজো 50 লঞ্চ হয়ে গেল । রিয়েলমি লাভারদের জন্য এটি অত্যন্ত একটি সুখবর । সম্পূর্ণ রিভিউতে আলোচনা করবো ডিভাইসটির পারফরম্যান্স নিয়ে সেখানে কি কি সুবিধা এবং অসুবিধা থাকছে ।
বডি বিল্ড কোয়ালিটি
রিয়েলমি নারজো 50 ডিভাইসটি গ্লাস ফ্রন্ট এবং প্লাস্টিকের ফ্রেমে সজ্জিত । রিয়েলমির নতুন এই মডেলটি ব্ল্যাক এবং ব্লু কালারে রিলিজ করা হয়েছে । কালার দুটি স্ট্যান্ডার্ড বলা যেতে পারে । 194 গ্রামের এই হ্যান্ডসেটটি ওজনে বেশি বা কম নয় , পারফেক্ট বলেই মনে হয়েছে । গুগোল অ্যাসিস্ট্যান্ট বাটন এর সাথে পাওয়ার বাটনের অবস্থান সঠিক অথবা পারফেক্ট জায়গায় দেওয়া হয়েছে যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই হাতের নাগালে সেগুলোকে রাখতে পারবেন এবং আকারের ক্ষেত্রেও সেগুলো যথেষ্ট চিকন । হেডফোন জ্যাক এবং স্পিকার বা সাউন্ড সিস্টেম ভালো পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যায় । যেহেতু এই ডিভাইসটির প্রাইস 10 হাজার টাকার উপরে সেহেতো বলা যেতে পারে এখানে সেকেন্ডারি মাইক্রোফোন রাখাই যেতো । কোম্পানি হয়তো প্রয়োজন মনে করেনি তবে দিলে ভালো হতো । আর হ্যাঁ স্মার্টফোনটি ব্যবহার করার সময় বডিতে দাগ লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কারণ এখানে ম্যাড ফিনিশিং দেওয়া হয়নি । ব্যবহার করার সময় অবশ্যই একটি ব্যাক কভার ইউজ করতে হবে ।
মেমোরি পারফরম্যান্স
দেশের বাজারে এই মডেলটিকে একটি ভেরিয়েন্টে রিলিজ করা হয়েছে । ডিভাইসটির মেমোরি সেক্টরে রাখা হয়েছে 4 জিবি রেম । নরমালি আমরা দেখতে পাই 10,000 টাকার বেশি বাজেটের স্মার্টফোন গুলোতে 6 জিবি ভেরিয়েন্ট রাখা হয়ে থাকে । যা আমরা এই ডিভাইসটিতে দেখতে পাবো না । যার কারণে বিভিন্ন high-performance এর সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করার সময় অসুবিধা চোখে পড়তে পারে । এছাড়া সফটওয়্যার ইন্সল অথবা আনইন্সটল করার সময় তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না আশা করা যায় ।মেইনলি এখানে 6 জিবি রাখা হলে অসাধারণ পারফরম্যান্স পাওয়া যেত । এছাড়াও থাকছে ডেডিকেটেড স্লট যেখানে আপনি চাইলে সর্বোচ্চ 128 জিবি রোম ব্যবহার করতে পারবেন । কোম্পানিটি যদি এই মডেলটিতে কিছুটা বাড়তি মেমোরি পারফরম্যান্স দিত তাহলে হয়তো বেস্ট পারফরম্যান্স গ্রাহকদের জন্য নিশ্চিত হতো ।
ক্যামেরা ইফেক্ট
ক্যামেরা ডিজাইন যেভাবে রাখা হয়েছে আমি প্রথম দেখায় ভেবে নিয়েছিলাম এখানে হয়তো কোয়াদ ক্যামেরা ফাংশন রাখা হয়েছে । কিন্তু পরে জানতে পারলাম প্রাইমারি সেক্টরে ট্রিপল ক্যামেরা আইটেম দেওয়া হয়েছে । প্রাইমারি ক্যামেরার ওয়াইড সেন্সরে থাকছে 50 মেগাপিক্সেল এর মত একটি আকর্ষণীয় ফাংশন । যার মাধ্যমে আমরা যথেষ্ট পরিমান কালারফুল ফটোশুট করতে পারেবো । ওয়াইড সেন্সরটি বিশেষ করে সাদা , হলুদ এবং নীল এই তিনটি কালারকে ভালোভাবে ধরে রাখতে সক্ষম । ম্যাক্রো সেন্সরে দুই-মেগাপিক্সেল এবং ডেপট সেন্সরে দুই-মেগাপিক্সেল করে ত্রিপল ক্যামেরা রেয়ার কালেকশন অনেকটা মনোরঞ্জক । স্বল্প আলোতেও প্রাইমারি ক্যামেরা ফাংশন গুলো খুব ভালো একটা কালার ধরে রাখতে পারবে ইনশাল্লাহ । আরো একটি আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে প্রাইমারি ক্যামেরা ফাংশন গুলোর মাধ্যমে আপনি 8150×6150 পিক্সেল রেজুলেশনে ইমেজ ক্লিক করতে পারবেন । সেলফি তোলার জন্য সামনের ক্যামেরায় দেওয়া হয়েছে 16 মেগাপিক্সেল যেটি 4616×3464 রেজুলেশনে ছবি ধারণ করার ক্ষমতা রাখবে । এছাড়াও প্রাইমারি ক্যামেরা এবং সেলফি ক্যামেরায় আমরা জনপ্রিয় ফিচারগুলোর ছোঁয়া পেয়ে যাবো ।
ব্যাটারি পাওয়ার
Realme Narzo 50 স্মার্টফোনটিতে মোটামুটি মিডিয়াম সাইজের একটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে । মিডিয়াম সাইজের ব্যাটারি থাকার কারণে ডিভাইসটির ওজন তুলনামূলকভাবে কম । স্মার্টফোনটিতে দেওয়া হয়েছে 5000 মিলিঅ্যাম্পিয়ার পাওয়ারের মিডিয়াম একটি ব্যাটারি ব্যাকআপ । 15 থেকে 20 হাজার টাকা বাজেটের মধ্যে যে স্মার্টফোনগুলো মার্কেটে সচরাচর লঞ্চ করা হয় সেগুলোর মধ্যে আমরা ম্যাক্সিমাম মডেল গুলোতেই 5000 মিলি এম্পিয়ার পাওয়ার দেখে থাকি । এখানেও তার ব্যতিক্রম কিছু নয় । এর সাথে থাকছে 33 ওয়াটের চার্জিং ক্যাবল । স্মার্টফোনটিকে সম্পূর্ণ চার্জ করতে অর্থাৎ 0 থেকে 100 পর্যন্ত 1 ঘণ্টা 20 মিনিট সময় লেগে যেতে পারে । ফুল চার্জ এই স্মার্টফোনটি আপনি অনায়েসেই একদিন ব্যবহার করে নিতে পারবেন । ব্যাটারির পাশাপাশি চার্জিং সিস্টেম ভালো পাওয়া যাবে । তারবিহীন চার্জিং সিস্টেমের উপস্থিতি থাকছে না ।
ডিসপ্লে টাইপ
ফুল এইচডি প্লাস রেজুলেশনের সাথে এই স্মার্টফোনটিতে 120 হার্জ রিফ্রেশ রেট এর একটি আইপিএস ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে । 6.6 ইঞ্চি সাইজের একটি আইপিএস ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে যার মিডেল পজিশনে রয়েছে পাঞ্চ হোল । ডিসপ্লেতে 400 পিক্সেল পিপিআই ডেনসিটি রয়েছে এবং এর পাশাপাশি থাকছে মাল্টিটাচ ফিচার । 120 হার্জের রিফ্রেশ রেট থাকার কারণে টাচ রেসপন্স অনেকটা ভালো পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায় । এখানে সুপার এমোলেড এর অনুপস্থিতি হতাশা দায়ক নয় তার কারণ হলো এই বাজেটের মধ্যে আমরা যে স্মার্টফোনগুলো মার্কেটের সচরাচর দেখে থাকি সেগুলোতে আইপিএস এলসিডি ব্যবহার করা হয়ে থাকে । আর সেগুলোর সাথে যদি আমরা এই মডেলটি কম্পেয়ার করতে চাই বিশেষ করে ডিসপ্লের ক্ষেত্রে তাহলে অনেকদূর এগিয়ে থাকবে রিয়েলমি নারজো 50 । ডিসপ্লে সেকশন নিয়ে আলোচনা করার পর আমাদের এটা মানতে হবে যে এখানে খুবই কালারফুল এবং মানসম্মত ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে যা গ্রাহকদের কিছুটা হলেও অনুপ্রাণিত করবে ।
অপারেটিং সিস্টেম
স্মার্টফোনটিকে কাস্টমাইজ করা হয়েছে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন 11 এর মাধ্যমে । মিডিয়াম রেঞ্জের ম্যাক্সিমাম স্মার্টফোনগুলোতে আমরা এন্ড্রয়েড ভার্সন 11 এর মাধ্যমে রান করাতে দেখি । এন্ড্রয়েড ভার্সন 11 যদিও গুগোল এর লেটেস্ট ভার্সন নয় তবে এই স্মার্টফোনটির ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার সন্তোষজনক বলা যেতে পারে । Realme UI 2.0 ভার্সনের কাস্টম ইউআই ব্যবহার করা হয়েছে যার প্রসেসরে থাকছে মিডিয়াটেক হেলিও G96 । মিডিয়াটেক হেলিও নামক প্রসেসরটি আমাদের কাছে নতুন কোন প্রসেসর নয় বাট উক্ত বাজেটে মিডিয়াটেক হেলিও দারুন মানের একটি প্রসেসর । একসাথে অনেকগুলো সফটওয়্যার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো অসুবিধা চোখে পড়েনি তবে high-performance এর যে সফটওয়্যারগুলো রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা চোখে পড়তে পারে বলে আন্দাজ করা যায় ।
সিকিউরিটি সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক
সিকিউরিটি সিস্টেমের যে কয়টি জনপ্রিয় মাধ্যম রয়েছে সেগুলোর প্রায় প্রতিটি এই স্মার্টফোনে আমরা দেখতে পেয়ে যাবো । ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার এর মত জনপ্রিয় একটি সিকিউরিটি সেন্সর এখানে রয়েছে । ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর অবস্থান রেয়ার মাউন্টেডে হওয়ায় সহজেই গ্রাহক এটিকে ব্যবহার করে নিতে পারবে । ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার আমরা যখন পিছনে ব্যবহার করতে দেখি তখন সেগুলোতে খুব কম টাচ লাগতো । এছাড়াও সেগুলোর কার্যক্ষমতা অনেক ধীরগতিসম্পন্ন ছিল কিন্তু রেয়ার মাউন্টেডে যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার গুলো দেওয়া হয়ে থাকে সেগুলো কার্যক্ষমতা অনেকাংশেই দ্রুত এবং ফাস্ট । সঠিক এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারটি কাজ করতে সক্ষম । নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে থাকছে সর্বোচ্চ ফোরজি নেটওয়ার্ক গতিসম্পন্ন স্পিড ব্যবহার করার সুযোগ । বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে আপনি খুব সহজেই ফোর্থ জেনারেশন নেটওয়ার্ক উপভোগ করতে পারবেন । অন্যান্য নেটওয়ার্কগুলো যেমন ব্লুটুথ , wifi-direct , হটস্পট ছাড়াও অন্যান্য নেটওয়ার্কগুলো বেশ ভালো ভাবেই ব্যবহার করা যাবে বলে আমি আশাবাদী ।
গেমিং পারফরম্যান্স
বর্তমান গ্রাহকদের কাছে অনলাইন গেম গুলো খেলার জন্য স্মার্টফোন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । বেশিরভাগ মানুষ এখন অনলাইন গেম গুলো উপভোগ করছে স্মার্টফোনের মাধ্যমে । তার কারণ হল স্বল্পমূল্যের ভিতরে থাকা স্মার্টফোনগুলো গেমিং সাইটে বেশ ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে থাকছে । আর এ জন্যই মানুষ গেমপ্লায় করর জন্য স্মার্টফোনকে বেছে নিয়েছে । রিয়েলমি কোম্পানির পক্ষ থেকে বেস্ট গেমিং পারফরম্যান্সের একটি স্মার্টফোন মার্কেটে রিলিজ করা হয়েছে যেটির নাম রিয়েলমি নারজো 50 । হেডলাইন দেখেই অনেকে বুঝে নিবে যে এই স্মার্টফোনটি গেমিং সাইটের জন্য কতটা উপযোগী । মিডিয়াটেক হেলিও G96 মডেল এর প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে । যা অনলাইন গেম গুলো খেলার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত । পাবজি অথবা ফ্রী ফায়ার নামক অনলাইন গেম গুলো খেলার সময় উচ্চ লেভেলের প্রবলেম চোখে না পড়লেও দীর্ঘক্ষণ গেমপ্লে করার ফলে ফ্রেম লক অথবা হ্যাং চোখে পড়তে পারে তবে সেগুলো দীর্ঘক্ষন নয় সামান্য কিছু সময়ের জন্য । স্বল্প বাজেটে আমরা যদি একটি ভাল মানের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে চাই তবে সেটি অবশ্যই গেমিং সাইটে ভালো পারফরর্মেন্স এর হতে হবে তাহলে আমার পক্ষ থেকে এই ডিভাইসটি সাজেস্ট করা হলো ।
রিলিজ ডেট এবং প্রাইস
4 এপ্রিল 2022 দেশের মার্কেটগুলোতে অফিশিয়াল ভাবে তাদের নতুন মডেল মার্কেটে রিলিজ করে দিল আর সেটি নিয়েই আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম । রিয়েলমি নারজো 50 স্মার্টফোনটি রিয়েলমি কোম্পানির রিলিজ করা লেটেস্ট ভার্সন যেটি আমরা উপরেই আলোচনা করেছি । উপরের আলোচনায় স্মার্টফোনটির বিভিন্ন সুবিধা এবং অসুবিধা ফুটে উঠেছে । এখন আমরা আলোচনা করবো এই স্মার্টফোনটি দেশের মার্কেটে কত টাকায় পাওয়া যাবে । স্মার্টফোনটিকে ব্যবহার করতে হলে আপনাকে 16,499 টাকা গুনতে হবে । এখন আপনি কি মনে করেন এই স্মার্টফোনটি এই বাজেটে আপনার জন্য কতটা হেল্প ফুল ? এটা নির্ভর করবে আপনার উপর আপনি যদি গেমিং সাইটের জন্য একটি স্মার্টফোন খুঁজে থাকেন অথবা মিডিয়াম রেঞ্জে ভালো পারফরর্মেন্স খুঁজে বেড়ান তাহলে এই ডিভাইসটি আপনার জন্য বাজারের সেরা হতে পারে ।