পৃথিবীজুড়ে স্যামসাং কোম্পানির জনপ্রিয়তার কথা সকলেরই জানা । কোম্পানিটি হাই কোয়ালিটি স্মার্টফোন থেকে শুরু করে এন্ট্রি লেভেলের বাজেটের মধ্যে স্মার্ট ফোন রিলিজ করে থাকে । তাদের জনপ্রিয়তা এতই বেশি যে রুচি ভেদে তাদের বিভিন্ন বাজেটের গ্রাহক রয়েছে । পৃথিবীজুড়ে প্রচুর পরিমাণে স্যামসাং লাভার রয়েছে যারা কিনা স্যামসাংয়ের নতুন একটি স্মার্টফোন মার্কেটে রিলিজ হওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকে । 17ই মার্চ , 2022 স্যামসাং কোম্পানিটি গ্লোবাল মার্কেটে রিলিজ করলো তাদের নতুন মডেল Samsung Galaxy A53 । মডেলের নাম শুনে আপনারা হয়তো অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন এই ডিভাইসটির প্রিভিয়াস ভার্শন রয়েছে যেটির নাম Samsung Galaxy A52 । স্যামসাং কোম্পানির A সিরিজ গুলো দেখতে অনেকটাই মনমুগ্ধকর । A সিরিজের লেটেস্ট ভার্সন মার্কেটে যুক্ত হয়েছে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সেই মডেলটি হল Samsung Galaxy A53 ।
ক্যামেরা পারফরম্যান্স
স্মার্টফোনের ক্যামেরা ডিজাইনের কথা যদি বলি তাহলে এখানে প্রিভিয়াস ভার্শন এর কথা কিছুটা হলেও মনে পড়বে প্রথম দেখায় । যাহোক মডেলটির প্রাইমারি ক্যামেরা ফাংশনে রাখা হয়েছে কোয়াদ ক্যামেরা সেটআপ । ওয়াইড সেন্সরে দেওয়া হয়েছে 64 মেগাপিক্সেল এর একটি আকর্ষণীয় ক্যামেরা কাটাউট । সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে ক্যামেরা কাটাউট গুলো লম্বালম্বিভাবে রাখা হয়েছে । স্যামসাং কোম্পানিকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ এই স্মার্টফোনটিতে আল্ট্রা ওয়াইড ফাংশন রাখার জন্য । আল্ট্রা ওয়াইড ফাংশনে রাখা হয়েছে 13 মেগাপিক্সেল । ডেপট এবং ম্যাক্রো সুটারে 5 মেগাপিক্সেল করে দুইটি ক্যামেরার দেখা পাওয়া যাবে এই বিষয়টিও গ্রাহকদের কাছে ভাল লাগার কথা । ক্যামেরা গুলোর মাধ্যমে জুম করে খুবই ভালো মানের এবং মনোরঞ্জক ছবি ক্যাপচার করা সম্ভব বলে আমি মনে করি । প্রাইমারি কোয়াদ ক্যামেরা সেটআপ পার্সোনালি আমার কাছে ভালো লেগেছে । 9000×7000 ইমেজ রেজুলেশন সেন্সরে ছবি ক্যাপচার করা যাবে । ব্লার , পোর্ট্রেট মোড ছাড়াও জনপ্রিয় সব ফিচার পাওয়া যাবে এখানে । সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে যে বিষয়টি সেটি হলো ফ্রন্ট ক্যামেরায় রাখা হয়েছে 32 মেগাপিক্সেল এর একটি সেলফি ক্যামেরা ।
নেটওয়ার্কিং সিস্টেম
ফাইভ-জি গতি নেটওয়ার্ক সম্পন্ন স্মার্টফোনগুলোর তালিকার মধ্যে স্যামসাং গ্যালাক্সি A53 একটি অনন্য অন্যতম মডেল । এই ডিভাইসটির মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক উপভোগ করতে পারবেন । এছাড়াও আপনার থ্রিজি , ফোরজি এবং 5g নেটওয়ার্ক এর বেশ কিছু ভার্সন রয়েছে । দুর্দান্ত গতিতে ব্রাউজিং করা যাবে খুব সহজে । ওয়ারলেস কানেক্টিভিটি নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে থাকছে 5.1 মডেলের ব্লুটুথ , dual-band wifi-direct , এনএফসি এবং ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট সহ অন্যান্য নেটওয়ার্ক গুলো উপভোগ করার বেশ সুবিধা রাখা হয়েছে । নেটওয়ার্কিং সিস্টেম গ্রাহকদের কাছে অনেকটা ভালো লাগবে বলে আমি ধারণা করি তার কারণ হলো এখানে উন্নতমানের নেটওয়ার্ক ফাইভজির দেখা পাওয়া যাবে । আর এই জন্যই এই ডিভাইসটির নেটওয়ার্কিং সিস্টেম অনেকটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারবে ইনশাআল্লাহ ।
ডিসপ্লে ডেকোরেশন
6.5 ইঞ্চি সাইজের মোটামুটি মিডিয়াম সাইজের বলা চলে একটি আকর্ষণীয় মানের সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে স্যামসাংয়ের নতুন মডেলটিতে । ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন টাইপের একটি ফুল এইচডি রেজুলেশন এর ডিসপ্লে অনেকটা নজর নন্দিত । 1080×2400 পিক্সেল রেজুলেশন সাপোর্টেড । যার পিক্সেল দেন্সিটি 405 পিপিআই । এখানে মাল্টিটাচ ফিচারের উপস্থিতি বিদ্যমান। । স্যামসাং গ্যালাক্সি a53 মডেলটির ডিসপ্লে কর্নিং গরিলা গ্লাস 5 দিয়ে প্রটেক্টেড । কেবল মাত্র এখানেই শেষ নয় ডিসপ্লেতে থাকছে 120 হার্জের রিফ্রেশ রেট । নরমালি আমরা সুপার এমোলেড এর সাথে 120 Hz রিফ্রেশ রেট একটু কমই দেখে থাকি । বাট এই ডিভাইসটির ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা দুটি পারফরম্যান্স একসাথেই পাবো । ডিসপ্লে যথেষ্ট পরিমান কালারফুল এবং যথারীতি মাইন্ড ব্লোইং কালার ধরে রাখতে পারবে বলে আশা করা যায় । ব্রাইটনেস এর পরিমাণ বেশ ভালো ইনডোর অথবা আউটডোর দুই স্থানে পারফরম্যান্স অনেকটা ভালো পাওয়া যাবে ।
ব্যাটারি পাওয়ার
Samsung Galaxy A53 মডেলটিতে non-removable লিথিয়াম পলিমার টাইপ এর ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে যেখানে থাকছে 5000 মিলিঅ্যাম্পিয়ার পাওয়ার । মিড রেঞ্জের প্রাইস হিসেবে ব্যাটারি ব্যাকআপ অথবা ব্যাটারি পাওয়ার ততটা বেশি বা কম বলা যাবে না । ঠিকঠাক বলেই মনে হয়েছে । তবে যে বিষয়টি আমাদের কিছুটা হলেও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলবে সেটি হল চার্জার । স্মার্টফোনটিকে চার্জ দেওয়ার জন্য 25 ওয়াটের একটি চার্জার দেওয়া হয়েছে । 5000 মিলি এম্পিয়ার ব্যাটারিটি মাত্র 25 ওয়াটের চার্জার দিয়ে সম্পূর্ণ চার্জ করতে 1.30 মিনিটের মত সময় লাগতে পারে । প্রথমে আমি একটু ভেবে নিয়েছিলাম যে এখানে হয়তো 35 বা 40 ওয়াটের চার্জার ক্যাবল ব্যবহার করা হবে । তো যাই হোক কোম্পানি যেটা ভালো ভেবেছো সেটাই করেছে । এদিকে কিছুটা নজর দিলে হয়তো ব্যাটারি ব্যাকআপ এবং ব্যাটারি পাওয়ার অনেকটা আকর্ষণীয় রূপ ধারণ করতে পারতো । তবে কম্পানি যা দিয়েছে সে দিকেও সন্তুষ্ট থাকতে হবে তার কারণ হলো বাজেটের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে ।
বডি ডিজাইন এবং কোয়ালিটি
স্মার্টফোনটির যে দিকটি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সেটি হল এর বডি ডিজাইন । যদিও বডি ডিজাইন সম্পূর্ণ পলিকার্বনের তৈরি বাট দেখতে একটা গর্জিয়াস ভাব রয়েছে । আকারে বেশ স্লিম এবং ছোট মোটকথা হাতে নিয়ে ব্যবহার করার সময় একটা অন্যরকম ফিল অনুভব হবে । গ্লোবাল মার্কেটে স্মার্টফোনটি চারটি কালারে রিলিজ হয়েছে তবে আমার কাছে সব থেকে বেশি কালো কালারটি পছন্দ হয়েছে । বিল্ড ম্যাটারিয়ালে কর্নিং গরিল্লা গ্লাস দিয়ে প্রটেকশন রয়েছে গ্লাস ফ্রন্ট । যা বিভিন্ন আঘাত থেকে স্মার্টফোনটিকে রক্ষা করবে বলে আশাবাদী । 189 গ্রামের এই মডেলটিতে গুগোল অ্যাসিস্ট্যান্ট বাটন এবং ভলিউম প্লাস মাইনাস বাটন এর উপস্থিতি হাতের নাগালের মধ্যেই । সাউন্ড সিস্টেম বেশ ভালো পাওয়া যাবে এবং থ্রী পয়েন্ট ফাইভ এমএম হেডফোন জ্যাক এর উপস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে ।
স্টোরেজ
স্যামসাং তাদের মডেলগুলোতে সচরাচর সবসময় মোটামুটি ভালো মানের স্টোরেজ দিয়ে থাকে । এন্ট্রি লেভেল থেকে শুরু করে মিড রেঞ্জ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোনেই আমরা একটি ভাল মানের স্টোরেজ পারফরর্মেন্স দেখতে পাবো । স্যামসাংয়ের নতুন এই মডেলটিতে আমরা একটি ভালো মানের মেমোরি পারফরম্যান্স দেখতে পাই । এখানে থাকছে 8 জিবি রেম এবং 256 gb রোম ব্যবহার করার সুযোগ । মিড রেঞ্জের বাজেট হিসেবে উক্ত পারফরমেন্সটি কতটা যুক্তিযুক্ত ? উক্ত বাজেটে আমরা অন্যান্য কোম্পানি গুলোকে কিছুটা কম পারফরম্যান্স দিয়ে থাকতে দেখি । এছাড়াও এখানে থাকছে আলাদা ভাবে মেমোরি বাড়িয়ে ব্যবহার করার সুযোগের জন্য আপনি অবশ্য ব্যবহার করতে পারেন ওটিজি ক্যাবল । ইন্টার্নাল মেমোরি এবং এক্সটার্নাল মেমোরি মোটামুটি বেশি থাকার কারণে এই স্মার্টফোনটি ব্যবহারে হরেক রকমের সুবিধা উপভোগ করা যাবে ।
অপারেটিং সিস্টেম এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর
অপারেটিং সিস্টেমের দিক দিয়ে এই মডেলটি অন্যান্য মডেল গুলো থেকে একধাপ এগিয়ে । সচরাচর আমরা এন্ড্রয়েড ভার্সন 11 এর ছোঁয়া দেখতে পাই মিড রেঞ্জের স্মার্টফোনগুলোতে । কিন্তু স্যামসাংয়ের নতুন মডেলটিতে এন্ড্রয়েড ভার্সন 12 দেখতে পাবো । এদিকে হয়তো অনেকে আপডেট আনা হয়েছে । Exynos 1280 মডেলের চিপসেট এবং সিপিইউতে থাকছে অক্টাকোর । ফিজিক্যাল স্ক্যানার হিসেবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর জনপ্রিয়তা এখন কিছুটা হলেও বেশি । যা আমরা এই মডেলটিতে দেখতে পেয়ে যাব । ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটির অবস্থান রেয়ার প্যানেলে হওয়ার কারণে খুব সহজেই সেটিকে ব্যবহার করা যাবে । ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর কার্যকর ক্ষমতা অনেকটা দ্রুত এবং একোরেট । এছাড়াও থাকছে এক্সিলারোমিটার , প্রক্সিমিটি , গায়রো ইত্যাদি ইত্যাদি । সিকিউরিটি সিস্টেম এর ক্ষেত্রে আপডেটের কিছু নেই তবে সিকিউরিটি সিস্টেম গুলো খুব সূক্ষ্মভাবে সনাক্ত করতে সফল হবে ।
স্মার্টফোনটির সুবিধা এবং অসুবিধা
উপরের আলোচনায় আমরা এই স্মার্টফোনটির বডি ডিজাইন , ডিসপ্লে , ব্যাটারি ব্যাকআপসহ খুঁটিনাটি দিকগুলো আলাপ আলোচনা করলাম আর সেখানে আমরা কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা দেখতে পেলাম । আসলে একটি স্মার্টফোনের বাজেটের উপর ডিপেন্ড করে পারফরম্যান্স দেওয়া হয়ে থাকে । বাজেট হিসেবে এই মডেলটিতে ক্যামেরা ফাংশনে আল্ট্রা ওয়াইড যে সেন্সর দেওয়া হয়েছে সেখানে কিছুটা ঘাটতি চোখে পড়েছে । আবার কিছু কিছু জায়গায় আমরা প্রিভিয়াস জেনারেশনের দেখাও পেয়েছি তো সেদিকে কিছুটা হলেও আপডেট আনার প্রয়োজন ছিল যেমন বডি ডিজাইনের কথাই বলা যাক । বডি ডিজাইনে এই মডেলটিতে কিছুটা আপডেট অনলি ডিভাইসটির বাজেট গ্লোবাল মার্কেটে কিছুটা হয়তো পেয়ে যেত । এছাড়া ডিসপ্লে রেজুলেশন , মেমোরি কার্ডের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয়গুলো মোটামুটি আয়ত্বের ভিতরে ছিল ।
স্মার্টফোনটির প্রাইস
স্যামসাং কোম্পানি 2022 সালে মিড রেঞ্জের মধ্যে থাকা যে স্মার্টফোনগুলো মার্কেটে রিলিজ করেছে তার মধ্যে অন্যতম একটি মডেল আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি Samsung galaxy A53 । স্মার্টফোনটিকে স্যামসাং কোম্পানি গ্লোবাল মার্কেটে রিলিজ করেছে মার্চ 2022 । স্মার্টফোনটি এর বর্তমান বাজার মূল্য 43,999 টাকা । 50 হাজার টাকা বাজেটে স্যামসাং এর একটি ভালো স্মার্টফোন হাতে ব্যবহার করার অন্যতম একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এই স্মার্টফোনটি রিলিজ এর মাধ্যমে । তবে এই স্মার্টফোনটি এর বাজারমূল্য কিছুদিন পর কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । স্যামসাং কোম্পানিটি তাদের গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি মিড রেঞ্জের স্মার্টফোন মার্কেটে লঞ্চ করেছে । 43,000 টাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করে মার্কেটে গ্রাহকদের মন জয় করতে পারবে কিনা এখন শুধু সেটার অপেক্ষায় ।