স্যামসাং গ্যালাক্সি M53 ফুল ফিচার এন্ড প্রাইস | Samsung galaxy M53 5g design Features and price

সামাজিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম পর্যন্ত স্মার্টফোন অথবা মুঠোফোনের ভূমিকা অপরিসীম । যে বিষয়টি না বললেই নয় , মার্কেটে থাকা জনপ্রিয় ব্রান্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ব্রান্ড হল স্যামসাং । স্যামসাং কোম্পানির হাত ধরে গ্রাহকদের চাহিদা মেটানোর জন্য কোম্পানিটি মার্কেটে রিলিজ করলো তাদের নতুন মডেল Samsung Galaxy M53 । পৃথিবীজুড়ে স্যামসাংয়ের একটি বিশাল জনবহুল গ্রাহক রয়েছে যারা অধীর আগ্রহে বসে ছিল এই স্মার্টফোনটি রিলিজের জন্য । তাদের কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে স্যামসাংয়ের নতুন মডেলটি মার্কেটে অবশেষে চলে আসলো । স্যামসাং লাভারদের জন্য এটি একটি খুবই আনন্দের সংবাদ । স্যামসাংয়ের জনপ্রিয় সিরিজ A এর পাশাপাশি এখন কোম্পানিটি রীতিমতো সিরিজের উপর নজর দিয়েছে । গ্রাহকদের অপেক্ষার ফলশ্রুতি হিসেবে স্যামসাং কোম্পানি M53 মডেলটিতে কেমন পারফরম্যান্স দিয়েছে চলুন এক নজরে তা সম্পূর্ণ রিভিউতে দেখে নেওয়া যাক ।


স্যামসাং গ্যালাক্সি M53 ফুল ফিচার এন্ড প্রাইস | Samsung galaxy M53 5g design Features and price


ক্যামেরা ফিচার

স্যামসাংয়ের প্রিভিয়াস মডেল গুলোতে আমরা  ভালো মানের ক্যামেরা ফিচার পেয়েছি । সেই প্রিভিয়াস মডেল গুলো থেকে Samsung galaxy M53 ডিভাইসটিতে আপডেট কিছু পাওয়া যাবে কি ? ব্যাক ক্যামেরায় থাকছে চারটি ক্যামেরার মাধ্যমে ইমেজ তোলার সুবিধা । মেইন সেন্সরে থাকছে 108 মেগাপিক্সেল , আল্ট্রা ওয়াইড ফানশনে দেওয়া হয়েছে 8 মেগাপিক্সেল এবং এর পাশাপাশি থাকছে আরো দুটি ক্যামেরা ফাংশন । একটি স্মার্টফোন এর সাহায্যে ঠিক কেমন পিক্সেলে ইমেজ তোলা যাবে সেটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে ক্যামেরা অ্যালগোরিজমের উপর । আর যেটার পরিমাণ এখানে বেশ ভালই পাওয়া যাবে । প্রিভিয়াস ভার্শনে 64 মেগাপিক্সেল ব্যবহার করা হয়েছিল মেইন ক্যামেরায় তার থেকে এই হ্যান্ডসেটটিতে আমরা ভালো আপডেট পেয়েছি 108 মেগা পিক্সেল । সেলফি তোলার জন্য সামনের ক্যামেরায় 32 মেগাপিক্সেল এর পারফরম্যান্স না বললেই নয় । মেইন ক্যামেরা দিয়ে কালারফুল ছবি ক্যামেরাবন্দি করা গেলেও ধারাবাহিকভাবে ডাইনামিক রেঞ্জে কিছুটা পিছিয়ে পড়বে । প্রাইমারি ক্যামেরার সেন্সর গুলোকে গরিলা গ্লাস দিয়ে প্রোটেক্টেড করা হয়েছে যা আমরা অন্যান্য মডেলে খুব কম সময়েই দেখে থাকি ।
 

ডিসপ্লে ডেকোরেশন

Samsung galaxy M53 স্মার্টফোনটিতে সুপার এইচডি প্লাস ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে । 6.7 ইঞ্চি সাইজের ডিসপ্লে রয়েছে । ডিসপ্লের চারপাশে চিন বা বেজেল লেস এর পরিমাণ কিছুটা ঘাটতি থাকলেও ডিসপ্লের টপ সেন্টারে রয়েছে পাঞ্চ হোল । ডিসপ্লের ডেকোরেশন এগজ্যাক্টলি আমার কাছে দারুণ লেগেছে তার কারণ হলো ফুল এইচডি রেজুলেশনের সাথে পাওয়া যাচ্ছে 120 হার্জের রিফ্রেশ রেট । সুপার এমোলেড প্লাস ব্যবহার করার কারণে এই স্মার্টফোনটির বডির ওজন অনেক কম । আমরা সকলেই হয়তো জানি যে আইপিএস ডিসপ্লে থেকে সুপার এমোলেড প্লাস এর ডিসপ্লের ওজন অনেকাংশে কম । Multi-touch ফিচারের সাথে থাকছে 394 পিপিআই ডেনসিটি । রিফ্রেশ রেট এর পরিমান ভালো থাকার কারণে টাচ রেসপন্স ভালো পাওয়া যাবে । ডিসপ্লে নিয়ে আলোচনায় যে পারফরম্যান্স ফুটে উঠেছে মিডিয়াম বাজেটের স্মার্টফোনের হিসেবে নিঃসন্দেহে সেটিকে ভালো বলা যেতে পারে ।

ব্যাটারি পাওয়ার

ডিভাইসটির চার্জিং সিস্টেমের জন্য non-removable li-ion টাইপের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে । অনেক সময় আমরা স্যামসাংয়ের মডেলগুলোতে দেখি ভারী ব্যাটারি ব্যবহার করার ফলে ডিভাইসের ওজন অনেকটা বৃদ্ধি পেয়ে যায় যার কারণে স্মার্টফোন ব্যবহারে কিছুটা অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয় । Samsung Galaxy M53 স্মার্টফোনটিতে আমরা 5000 মিলিঅ্যাম্পিয়ার এর ব্যাটারি ব্যবহার করতে দেখেছি । নরমালি আমরা ম্যাক্সিমাম স্মার্টফোনের বক্স এর সাথে চার্জার পেয়ে যাই কিন্তু এখানে চার্জারের অনুপস্থিতি দেখতে পাবো । তবে টেনশনের কিছু নেই বাজার থেকে আলাদা ভাবে স্মার্টফোনটির এ সাপোর্ট করা 25 ওয়াট এর চার্জার কিনে নিতে পারবেন । অবশ্যই স্যামসাং সেখানে আপনার জন্য একটি অপারচুনিটি রেখেছে । চার্জারটি কিনার সময় কোম্পানির পক্ষ থেকে একটি হিউজ পরিমান ডিসকাউন্ট পেয়ে যাবেন । এই সুযোগটি রেখে ভালই করেছ তা না হলে 25 ওয়াটের চার্জারটি কিনার জন্য কিছুটা বেশি টাকা খরচ করতে হতো ।

নেটওয়ার্ক অ্যাক্টিভিটি

নেটওয়ার্ক কানেকশনে এই মডেলটিতে আমরা বেশ কিছু নতুন ফিচার এর দেখা পেয়ে যাব । হেডলাইন দেখে আমরা বুঝতে পেরেছি এই স্মার্টফোনটি দিয়ে ফিফথ জেনারেশন এর নেটওয়ার্ক অর্থাৎ ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক কানেকশন খুব সহজেই ব্যবহার করা যাবে । এছাড়াও পরবর্তী জেনারেশনকে আপডেটের মাধ্যমে ব্যবহার করা যাবে । ডুয়েল সিম কার্ড ব্যবহারের সুযোগ থাকছে । একটি সিম কার্ডে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সময় নেটওয়ার্ক বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে অন্য সিম কার্ডে নেটওয়ার্ক অটোমেটিকলি চালু হয়ে যাবে । এটি একটি ভিন্ন রকম ফিচার । এনএফসি নামক নেটওয়ার্কটি ব্যবহার করার সুযোগ থাকছে না । 5.2 ভার্সনের ব্লুটুথ এর পাশাপাশি তারবিহীন নেটওয়ার্কগুলোর পারফরম্যান্স হাই লেভেলের ‌‌। ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক স্পিড ব্যবহার করার সময় তেমন কোনো ক্রাইসিস এর মুখোমুখি হতে হবে না আশা করা যায় ।


বডি ডেকোরেশন

স্মার্টফোনের ফুল বডি পলিকার্বনের সাহায্যে ঘেরা যার কারণে দেখতে অনেকটা আকর্ষণীয় । যদিও এখানে গ্লাসি ফিনিশিং দেওয়া হয়েছে বাট প্রথম দেখায় সেটা বুঝা বেশ কঠিন । গ্লাসি ফিনিশিংয়ের কারণ স্কেচ লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । নীল এবং সবুজ কালার ছাড়াও আরো ভেরিয়াস কিছু কালারে মার্কেটে এভেলেবেল এই মডেলটি । সাউন্ড সিস্টেম থেকে শুরু করে হেডফোন জ্যাক পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ফাংশনে পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ । 176 গ্রামের এই মডেলটি ওজনে অনেকটাই হালকা তার কারণ হলো ব্যাটারি সেট আপ এবং সুপার অ্যামোলেড প্লাস ডিসপ্লের জন্য । এখানে যদি আইপিএস এলসিডি প্যানেল ব্যবহার করা হতো তাহলে কিন্তু ডিভাইসটির ওজন অনেকটা বেড়ে যেতো । বডিতে রাখা হয়েছে এক নজর কাড়া ডিজাইন যা আমরা স্যামসাংয়ের প্রতিটি মডেলেই দেখতে পাই ।

অপারেটিং সিস্টেম

স্যামসাংয়ের ম্যাক্সিমাম স্মার্টফোনে আমরা গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন এর দেখা পাবো । এখানেও তার ব্যাতিক্রম কিছু নয় । গুগলের সবচেয়ে লেটেস্ট ভার্সন অর্থাৎ অ্যান্ড্রয়েড 12 এর দেখা মিলবে । কেবল মাত্র এখানেই শেষ নয় থাকছে অপারেটিং সিস্টেমকে আপডেট করার সুযোগ । অর্থাৎ গুগলের সবচেয়ে লেটেস্ট ভার্সন হল অ্যান্ড্রয়েড 12 যা এই মোবাইলে ব্যবহার করা হয়েছে । তবে গুগোল যখন তাদের অপারেটিং সিস্টেমকে আপডেট করবে তাদের সাথে সাথে আপনিও কিন্তু আপডেট করে সর্বোচ্চ এন্ড্রয়েড ভার্সন 14 উপভোগ করার সুযোগ পেয়ে যাবেন । বর্তমান সময়ে আমরা এই ফিচারটি অনেক মডেলের মধ্যেই দেখতে পেয়ে যাই । অপারেটিং সিস্টেমের আরো একটি জনপ্রিয় বিষয় হচ্ছে প্রসেসর । এখানে 6 ন্যানোমিটারের মাধ্যমে Mediatek MT 6877 মডেল এর প্রসেসর দেওয়া হয়েছে । মোট কথা হল এই স্মার্টফোনটিতে আমরা অন্যান্য দিক এর পাশাপাশি অপারেটিং সিস্টেমেও আপডেটের স্পর্শ দেখতে পাবো ।

গেমিং পারফরম্যান্স

মোটামুটি সব জায়গায় অনেক ভালো পারফরম্যান্স দেখতে পেলাম এখন কথা হল যারা স্মার্টফোনটি গেমিং এর জন্য চয়েজ করবে তাদের জন্য এর পারফরম্যান্স কেমন হতে পারে ? Mediatk MT6877 প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে যার গেমিং গ্রাফিক্সে সাপোর্ট করবে Mali G68 MC4 । যার মাধ্যমে আমরা হ্যাপিলি ভাবেই নরমাল গেমগুলো খেলতে পারব । আর যদি আপনি অনলাইন গেম গুলোর কথা বলেন অর্থাৎ ফ্রী ফায়ার বা পাবজি হোক সেগুলো খেলার সময় কিছুটা আটকে যাওয়া বা হ্যাং হয়ে যাওয়া চোখে পড়তে পারে তবে সেগুলো অস্বাভাবিক কিছু নয় । সেগুলো খেলার সময় হলেও সীমিত সময়ের জন্য চোখে পড়বে । অনেক স্মার্টফোন রয়েছে যেগুলো খেলার সময় আমরা অনুভব করতে পারি যে হ্যান্ডসেটটি অনেকটা গরম হয়ে গেছে , এই ডিভাইসের ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা তেমনটা লক্ষ করতে পারব না তার কারণ হলো এখানে থাকছে আলাদা ভাবে কুলিং চেম্বার । যা স্মার্টফোনটিকে গরম হওয়া থেকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ । পরিশেষে বলা যেতে পারে মোটামুটি গেম প্লে করার জন্য এই মডেলটি পারফেক্ট


স্টোরেজ এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার

স্মার্টফোনের অন্যতম একটি বিষয়বস্তু হচ্ছে এক্সটার্নাল এবং ইন্টার্নাল স্টোরেজ । এই ডিভাইসটির ক্ষেত্রে স্টোরেজের কি খবর ? কেমন পারফরম্যান্স রাখা হয়েছে সেখানে সে বিষয়ে এখন আলোচনা করবো । ইন্টার্নাল মেমোরিতে দেওয়া হয়েছে 6 জিবি রেম দেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তীতে যেটিকে আপনি 8 জিবি পর্যন্ত বাড়িয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন । রোম হিসেবে দেওয়া হয়েছে 128 জিবি এটিকেও আপনি কিন্তু পরবর্তীতে 256 জিবি পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন । সত্যিই এটি কিন্তু একটি অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স বলা যেতে পারে । মেমোরি পারফরমেন্সের জন্য গ্রাহক বিপুল পরিমাণে স্বাবলম্বী হতে পারে বলে আমার ধারণা । ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার এর কথা যদি বলি তাহলে আমরা ডিসপ্লের নিচে নয় এখানে রেয়ার মাউন্টেডে দেখতে পাওয়া যাবে মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারের উপস্থিতি । সিকিউরিটি পারফরম্যান্সের কথা না বললেই নয় সর্বোচ্চ চার বছর পর্যন্ত আপনি আপডেট সিকিউরিটি সিস্টেম গুলো ব্যবহার করতে পারবেন । এটি একটি উন্নত মানের এবং আপডেট ফিচার বলে গন্য হতেই পারে ।

রিলিজের সময় এবং প্রাইস

22 এপ্রিল 2022 গ্রাহকদের অপেক্ষার প্রহর গনার সমাপ্তি ঘটিয়ে স্যামসাং এর ধারাবাহিকতায় মার্কেটের নতুন পারফরম্যান্স নিয়ে রিলিজ হল Samsung galaxy M53 । দেশের বাজারে স্মার্টফোনটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে 48 হাজার টাকা । ডিভাইসটির মূল্য মার্কেটে এখন কিছুটা বেশি বলে মনে হতে পারে বাট যারা একটু ওয়েট করতে পারবেন তারা কিছুটা কম টাকায় কিনে নিতে পারবেন । স্যামসাং A সিরিজের স্মার্টফোনগুলো মার্কেটে রিলিজ করে থাকে মোটামুটি ভালো মানের প্রাইজের মধ্যে । A সিরিজের সাথে পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে কম্পেয়ার করার জন্য এই ডিভাইসটির মূল্য কিছুটা বেশি নির্ধারণ করতে হয় কোম্পানিকে । M সিরিজের দাম বাড়ার পেছনে A সিরিজ হাত রয়েছে এটা কিন্তু আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি । যাইহোক কেবলমাত্র বাজেটের দিকে তাকালে হবে না ডিভাইসটির পারফরমেন্সের উপর নজরদারি করতে হবে তাহলে আমরা বিষয়টি বুঝতে পারবো ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন