মিড রেঞ্জের মধ্যে থাকা স্মার্টফোন গুলো ব্যবহার করার আগ্রহ আমরা অনেকের মধ্যেই দেখতে পাই । আর যার কারণে বাজার সিগমেন্ট এর মধ্যে থাকা মিডিয়াম রেঞ্জার ভিতরে বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা 10 থেকে 15 হাজার টাকার মধ্যে থাকা স্মার্টফোনগুলো মার্কেটে লঞ্চ করে থাকে । আর সেগুলোর মধ্যে দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে ওয়ালটন । বডি কোয়ালিটি এবং ডিজাইন এর দিক দিয়ে কোম্পানিটির তৈরি করা স্মার্টফোনগুলো অনেকটা রুচিসম্মত বলা যেতে পারে । আজকের রিভিউতে আমরা আলোচনা করবো ওয়ালটন কোম্পানির নতুন স্মার্টফোন Walton Primo H10 । 2022 সালে ওয়ালটন কোম্পানি মিড রেঞ্জের মধ্যে যে স্মার্টফোনগুলো লঞ্চ করেছে সেগুলোর মধ্যে এটি একটি অন্যতম মডেল । বডি ডিজাইন থেকে শুরু করে পারফরম্যান্স পর্যন্ত এই মডেলটি আমাদের কাছে কেমন হতে পারে সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি আলোচনার পাশাপাশি সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো উপস্থাপন করা হল রিভিউতে ।
বডি ডিজাইন
Walton Primo H10 মডেলটির বডি ডিজাইনের দিকে যদি আমরা একটু লক্ষ্য করি তাহলে বুঝতে পারবো ওয়ালটন কোম্পানির তৈরি করায় স্মার্টফোনগুলো কতটা উন্নত সমৃদ্ধ । সর্বপ্রথম চোখে পড়বে এক অসাধারণ বডি ডিজাইন । ডান পাশে রাখা হয়েছে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বাটন এবং ভলিউম বাটন । বডির নিচের দিকে 3.5 মিলিমিটার হেডফোন জ্যাক এবং ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট । বামপাশে থাকছে মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট যেখানে আপনি দুইটি সিম কার্ড এবং এটি মমোরি কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন । মিডিয়াম বাজেটের স্মার্টফোনগুলো সচরাচর টাইপ সি পোর্ট খুব কম ব্যবহার করে থাকে কিন্তু ওয়ালটন কোম্পানি এই মডেলটিতে টাইপ সি পোর্ট এর সুযোগটি রেখেছে । এটি একটি ভাল দিক বলা যেতে পারে । আকারে ব্যবহার করার মতোই যার ওজন মাত্র 190 গ্রাম । যদিও এখানে থাকছে না পানিরোধক কোন সিস্টেম ।
ব্যাটারি পাওয়ার
ওয়ালটন তাদের মডেলগুলোতে সচরাচর ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে থাকে বিশেষ করে ব্যাটারি পাওয়ার এর ক্ষেত্রে । ব্যাটারি ব্যাকআপ এর দিক দিয়ে কোম্পানিটির বেশ নামকাম রয়েছে । ওয়ালটন প্রিমো h10 মডেলটির অন্যতম একটি আকর্ষণ হলো ব্যাটারি পাওয়ার । স্মার্টফোনটিতে দেওয়া হয়েছে 5000 মিলিঅ্যাম্পিয়ার পাওয়ারের একটি ব্যাটারি । যার অ্যাডভান্টেজ হিসেবে ডিভাইসটিকে দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা যাবে এবং ব্যবহার করার সময় কোন অসুবিধা লক্ষ করা যাবেনা ব্যাটারি সংক্রান্ত । স্মার্টফোনের সাথে 10 ওয়াটের একটি ফাস্ট চার্জিং ক্যাবল দেওয়া হয়েছে । তবে আমার কাছে মনে হয়েছে 5000 মিলি এম্পিয়ার এর সাথে 10 ওয়াটের চার্জার অনেকটা বেমানান । এদিকে হয়তো কিছুটা নজর দেওয়ার প্রয়োজন ছিল । তার পরেও বলা যায় 10 থেকে 20 হাজার টাকার বাজেটের মডেল হিসেবে 5,000 মিলি এম্পিয়ার ব্যাটারি পাওয়ার অনেকটা মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি ।
ডিসপ্লে সাইজ এবং কোয়ালিটি
Walton Primo H10 স্মার্টফোনটিতে বেশ বড়োসড়ো একটি ডিসপ্লে রখা হয়েছে যার সাইজ 6.52 ইঞ্চি । ফুল এইচডি প্লাস রেজুলেশন ডিসপ্লে রাখা হয়েছে এই ডিভাইসটিতে । ডিসপ্লে যথেষ্ট পরিমাণ কালারফুল , এইচডি পজিশনে বেশ ভালো কালার ধরে রাখতে পারবে বলে আমি আশাবাদী । এখানে ব্যবহার করা হয়েছে আইপিএস টাচস্ক্রিন যার কারণে বেশ ভালো টাচ পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে । বেজেল লেস এর পরিমাণ মোটামুটি ভালই বলা যায় । ডিসপ্লের টপ সেন্টারে মিনিমাল নচ এর দেখা পাওয়া যাবে তবে সব থেকে ভালো হতো যদি এখানে পাঞ্চ হোল দেওয়া হতো । ডিসপ্লে সাইজ এর ক্ষেত্রে এই ডিসপ্লেটি গ্রাহকদের কাছে ভাল লগার কথা । ডিসপ্লের আরেকটি বিষয় রয়েছে যে বিষয়টি আমার কাছে একটু খারাপ লেগেছে সেটি হল লো লাইটে বেশ ভালো ব্রাইটনেস এর পরিমাণ পাওয়া গেলেও দিরেক্ট সানলাইটে ব্রাইটনেস এর ঘাটতি চোখে পড়বে ।
অপারেটিং সিস্টেম
ডিভাইসটিকে রান করানো হয়েছে অ্যানড্রয়েড ভার্সন 11 এর মাধ্যমে । মিডিয়াটেক হেলিও G35 প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে যেটিকে আমরা সচরাচর এন্ট্রি লেভেলের বাজেট গুলোর প্রসেসর ব্যবহার করতে দেখি । এন্ট্রি লেভেলের বাজেট থেকে শুরু করে মিডিয়াম রেঞ্জে থাকা স্মার্টফোনগুলোতে সচরাচর মিডিয়াটেক হেলিও দেখতে পাওয়া যায় । মিড রেঞ্জের স্মার্টফোনগুলো যারা ইতিমধ্যে ব্যবহার করে ফেলেছেন তারা হয়তো মিডিয়াটেক হেলিও প্রসেসর এর বিষয়ে ভালো জানেন । এই ডিভাইসটির রানিং স্পীড বেশ ভালো এবং অ্যাপ ওপেনিং এবং ক্লোজিং হতে সামান্য একটু সময় লাগতে পারে । মিডিয়াটেক হেলিও প্রসেসর এর সাথে গেমিং গ্রাফিক্স ডিজাইনে থাকবে PowerVR GE8320 । অপারেটিং সিস্টেম আলোচনার পর বুঝা গেল এই স্মার্টফোনটির অপারেটিং পারফরম্যান্স মোটামুটি মিডেল পর্যায়ে রয়েছে । বাজেটের সাথে তাল মিলিয়ে স্মার্টফোনটির অবস্থান অপারেটিং সিস্টেমে মানিয়ে নেওয়ার মতো বলা যেতে পারে ।
সিকিউরিটি সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক
জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে সিকিউরিটি সিস্টেমের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সিস্টেম হল ফিঙ্গারপ্রিন্ট । যা আমরা এই মডেলটির ব্যাক পার্টে দেখতে পেয়ে যাব । মিড রেঞ্জের মধ্যে থাকা স্মার্টফোনগুলোতে যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেগুলো কার্যক্ষমতা সচরাচর কিছুটা ধীর গতিসম্পন্ন হয়ে থাকে । ওয়ালটন কোম্পানির নতুন এই মডেলটিতে যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে সেটি মূলত কিছুটা সময় লাগে আনলক হওয়ার জন্য কিন্তু সঠিকভাবে যাচাই করতে সক্ষম হবে ইনশাল্লাহ । ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর পাশাপাশি অন্যান্য সিকিউরিটি সিস্টেম গুলো যেমন এক্সিলারোমিটার , প্রক্সিমিটি ইত্যাদি সিস্টেমগুলো ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে সিকিউরিটি সিস্টেমে । নেটওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রে এই স্মার্টফোনটির মাধ্যমে আপনি সর্বোচ্চ ফোরজি নেটওয়ার্ক গতি উপভোগ করতে পারবেন । এছাড়াও থাকবে ডাবল সিমে ফোরজি নেটওয়ার্ক সংযোগ রাখার সুবিধা । তারবিহীন নেটওয়ার্কগুলো উপভোগ করার বেশ ভালো একটি সুযোগ রাখা হয়েছে এখানে ।
মেমোরি স্টোরেজ
মেমরি স্টোরেজ এর কথা বলতে গেলে চলে আসে ইন্টারনাল স্টোরেজ এবং এক্সটারনাল স্টোরেজের কথা । ইন্টারনাল স্টোরেজ বলতে আমরা বুঝি স্মার্টফোনের ভিতরের মেমোরি । যা কিনা স্মার্টফোনের সাথেই পাওয়া যায় । অপরদিকে এক্সটার্নাল স্তোরেজ বলতে আমরা বুঝি বাহিরের মেমোরি অর্থাৎ ডেডিকেটেড স্লট । এই ডিভাইসটির ক্ষেত্রে আমরা ইন্টার্নাল স্তরেজ হিসেবে পাবো 4 জিবি এবং 6 জিবি ভেরিয়েন্ট রেম এবং রোম পাওয়া যাবে 64 জিবি । এছাড়াও আপনি আলাদাভাবে ডেডিকেটেড স্লট এর মাধ্যমে এক্সটার্নাল মেমোরি স্টোরেজ বাড়িয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন খুব সহজেই । বাজেট সাপেক্ষে মেমোরি পারফরম্যান্স আসলে কেমন এই স্মার্টফোনটি ক্ষেত্রে ? এমন একটা প্রশ্ন আমাদের জাগতেই পারে । আমার মতে বাজেট হিসেবে ডিভাইসটির মেমোরি পারফরম্যান্স চলনসই বলা যায় । তার কারণ হলো মিড রেঞ্জের ম্যাক্সিমাম স্মার্টফোনগুলোতে প্রায় সেম মেমোরি পারফরম্যান্স আমরা ওয়ালটন কোম্পানিকে অন্যান্য মডেলগুলোতে অফার করতে দেখেছি । সেখানে এই ডিভাইসটি নতুন কিছু নয় ।
ক্যামেরা ফিচার
ক্যামেরা পারফরম্যান্সের কথা বলতে গেলে এই মডেলটিতে মোটামুটি ভালই ক্যামেরা ডিজাইন রাখা হয়েছে প্রাইমারি ক্যামেরা পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে । প্রাইমারি ক্যামেরা ফাংশনে আমরা ট্রিপল ক্যামেরার দেখা পেয়ে যাব । 13 মেগাপিক্সেল এর ওয়াইড সেন্সর , 2 মেগাপিক্সেল এর ডেপট সেন্সর এবং 2 মেগাপিক্সেল এর এ আই সেন্সর । মেইন ক্যামেরার মাধ্যমে বেশ ভালো মানের ইমেজ ক্যামেরাবন্দি করা যাবে বেশ কালারফুল ভাবেই । তবে এখানে ব্লার সিস্টেমটি তেমন একটা মানসম্মত নয় । লো লাইট এর ছবি তোলার সময় মোটামুটি ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া গেলেও সানলাইটে কিছুটা প্রবলেম চোখে পড়বে । তবে এখানে ডেপট সেন্সর এর পরিবর্তে যদি একটি আল্ট্রা ওয়াইড ফাংশন ব্যবহার করা হতো তাহলে অনেকটা এগিয়ে যেত ক্যামেরা পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে । সেলফি তোলার জন্য ফ্রন্ট ক্যামেরা 8 মেগাপিক্সেল এর একটি ক্যামেরা রাখা হয়েছে ।
গেমিং পারফরম্যান্স
উপরের আলোচনায় আমরা জানতে পেরেছি যে এই স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেমে মিডিয়াটেক হেলিও প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে । মিড রেঞ্জের স্মার্টফোনগুলোতে মিডিয়াটেক হেলিও প্রসেসর অনলাইন গেমিং খেলার জন্য আসলে কতটা পারফেক্ট ? এখন যদি আপনি মিড রেঞ্জের স্মার্টফোন গুলোর মাধ্যমে হাই কোয়ালিটির অনলাইন গেমিং পারফরর্মেন্স আশা করে থাকেন তাহলে সেটা কোনদিনও সম্ভব নয় এখন সেখানে স্নাপড্রাগণ থাকুক বা মিডিয়াটেক হেলিও । ওয়ালটন প্রিমো h10 মডেলটির মাধ্যমে ভালো মানের গ্রাফিক্স ডিজাইন না পাওয়া গেলেও মোটামুটি দারুন মুভমেন্টে গেমপ্লে করা যাবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে । কেননা এই স্মার্টফোনটির প্রসেসর পাওয়ার্ড বাই মিডিয়াটেক হেলিও । তবে আপনি যদি হাই কোয়ালিটির গেমপ্লে ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে এই স্মার্টফোনটি আপনার জন্য তেমন একটা পারফরম্যান্স বয়ে আনতে পারবে না । কিন্তু লাইট ইউজারদের জন্য মোটামুটি ভালই হবে বলে আশাবাদী ।
রিলিজ ডেট এবং প্রাইস
ওয়ালটন প্রিমো h10 মডেলটিকে ফেব্রুয়ারি 2022 দেশের মার্কেটে রিলিজ করা হয় । উপরের আলোচনায় আমরা এই স্মার্টফোনটি সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে জানলাম এখন জানবো স্মার্টফোনটির মূল্য কত ? মিডিয়াম রেঞ্জের নাম শুনার পর অনেকেই হয়তো আনুমানিক এই স্মার্টফোনটির মূল্য 10 থেকে 15 হাজার টাকার মধ্যেই ভেবে নিয়েছে । বর্তমান বাজারে স্মার্টফোনের প্রাইস 12,990 টাকা । সেম বাজেটের মধ্যে আমরা ওয়ালটন কোম্পানিকে অনেক স্মার্টফোন মার্কেটে লঞ্চ করতে দেখেছি । স্মার্টফোনটির পারফরম্যান্স অনুযায়ী এটা বলা যেতে পারে যে প্রাইস ততটা বেশি নয় । তবে আপনি যদি একটি ওয়ালটন প্রেমি হয়ে থাকেন এবং আপনি একটি স্মার্টফোন ক্রয় করার উদ্দেশ্যে এগিয়েছেন এবং আপনার বাজেট 10 থেকে 15 হাজার টাকা তাহলে এই মডেলটি আপনার জন্য বাজেটের মধ্যে বাজারের কিং হতে পারে ।