শাওমি ১২ এক্স মোবাইল স্পেসিফিকেশন | Xiaomi 12X New Smartphone Features with price

দেশের মার্কেটে আমরা যে স্মার্টফোন গুলোকে লঞ্চ হতে দেখি সেগুলোর দুইটি কোয়ালিটি রয়েছে একটি হলো অফিশিয়াল এবং অপরটি আনঅফিসিয়াল । বাহিরের দেশের রিলিজ হওয়া স্মার্টফোনগুলো অফিশিয়াল ভাবে হাতে পাওয়ার জন্য কিছুদিন সময় নিতে হয় । এই রিভিউতে আমরা আনঅফিসিয়াল যে স্মার্টফোনটি নিয়ে আলোচনা করবো সেটি হল শাওমি 12 এক্স । শাওমি বলে কথা যার ডিফারেন্ট মডেলে রয়েছে আলাদা আলাদা চমক । গ্লোবাল মার্কেটে যখন নতুন স্মার্টফোন লঞ্চ হয় তখন অফিসিয়াল কোয়ালিটি পেতে আমাদের কিছুদিন ওয়েট করতে হয় ‌, উদাহরণস্বরূপ Xiaomi 12 X মডেলটির কথা বলা যেতে পারে । যাইহোক কথা না বাড়িয়ে আমরা এখন চলে যাব স্মার্টফোনটির বিস্তারিত আলোচনায় । এখানে তুলে ধরা হবে ডিভাইসটির সুবিধা এবং অসুবিধা ছাড়াও অন্যান্য দিক সমূহ ‌‌। 

 

শাওমি ১২ এক্স মোবাইল স্পেসিফিকেশন | Xiaomi 12X New Smartphone Features with price

ডিসপ্লে সেকশন

Xiaomi 12 X মডেলটির ডিসপ্লে নিয়ে বলতে গেলে সবার প্রথমেই আমাদের চোখে পড়বে এর সাইজ । ম্যাক্সিমাম স্মার্টফোনে আমরা সচরাচর 6.5 বা 6.8 ইঞ্চি সাইজ দেখতে পেয়ে থাকি । কিন্তু এই ডিভাইসটি অফার করছে 6.28 ইঞ্চি । এক কথায় বলা যেতে পারে এই স্মার্টফোনটির ডিসপ্লে সাইজ অনেক ছোট এবং আকর্ষণীয় । ডিসপ্লেতে সুপার এমোলেড এবং 120 Hz রিফ্রেশ রেট থাকার কারণে ব্যবহারের তেমন কোন অসুবিধা চোখে পড়েনি আর এমনিতেও ডিসপ্লে সেকশন মোটামুটি ভালই কালারফুল বলা যেতে পারে । ফুল এইচডি রেজুলেশন 1080 × 2400 পিক্সেল এর সাথে 419 পিপিআই ডেনসিটি দেওয়া হয়েছে । কর্নিং গরিল্লা গ্লাস ভিকটাস এর সাহায্যে সম্পূর্ণ ডিসপ্লেতে প্রটেকশন এর সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে । ডিসপ্লের টপ সেন্টারে পাঞ্চ হোল এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে । 1100 নিটস ব্রাইটনেস দেওয়ার কারনে লো লাইটিং পজিশনে বেশ ভালো পারফরমেন্স দিবে বলে ধারণা করা যায় । এছাড়াও ডিসপ্লেতে থাকছে multi-touch । ডিসপ্লের পারফরমেন্সের বিরুদ্ধে আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে তেমন কোন মতবাদ নেই । 


বডি সাইজ এবং কোয়ালিটি 

ডিসপ্লে সাইজ এর পাশাপাশি বডি সাইজ আকারে কিছুটা ছোট । একটু শর্ট সাইজের স্মার্টফোন ব্যবহার করার আগ্রহ বর্তমান সময়ে অনেকের মাঝেই লক্ষ করা যায় । তাদের জন্য শাওমির নতুন মডেলটি 12 এক্স হতে পারে একটি মানসম্মত স্মার্টফোন । উন্নত মানের বডি কোয়ালিটির পাশাপাশি রোমাঞ্চকর বডি ডিজাইন চোখে পড়বে । আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে বডির বামপাশ পুরোটা ক্লিন । তার কারণ হলো গুগোল অ্যাসিস্ট্যান্ট বাটন এবং ভলিউম রকার বাটন দুটোর দেখা মিলবে বডির ডান পাশে । ভলিউম বাটনের দিকে যদি একটু নজর দেই তাহলে লক্ষ করা যাবে ভলিউম বাটন অনেকটা চিকন । যা অন্যান্য মডেলগুলোতে আমরা খুব কম সময়ই দেখতে পেয়ে থাকি । তবে দুঃখজনক বিষয় হলো এখানে থাকছে না 3.5mm অডিও জ্যাক । স্মার্টফোনটির বডি যথেষ্ট মোটা এখানে চাইলে অডিও জ্যাক দেওয়া যেতো । তবে যাই হোক কোম্পানি হয়তো দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি । ডিভাইসটি ওজনে 176 গ্রাম যা হাতে ব্যবহার করতে তেমন একটা অসুবিধা হবে না বলে ধারণা করা যায় । 

অপারেটিং সিস্টেম এবং স্ক্যানার

Xiaomi 12 X স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেমে রাখা হয়েছে MIUI এন্ড্রয়েড ভার্সন 11 । কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন 870 প্রসেসর এর সাথে গেমিং সাইটে পারফরম্যান্স করবে অ্যাড্রিনো 650 । স্মার্টফোনের প্রসেসরে যে ভার্সনটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি আসলে নতুন কিছু নয় ‌‌। মিডিয়াম রেঞ্জের মধ্যে অনেক স্মার্টফোন রয়েছে যেগুলোতে আমরা উক্ত প্রসেসরটির দেখা পেয়েছি । যেখানে একটি স্মার্টফোনের প্রাইস 50,000 বা তারও বেশি সেখানে কিন্তু আপনি একটু ভালো মানের প্রসেসরের আশা করতেই পারেন । অপারেটিং সিস্টেমে নতুনত্বের ছোঁয়া নেই বললেই চলে । তবে এখানে কিছুটা আপডেট আনার প্রয়োজন ছিল । ডিভাইসটির ডানপাশে দেখা মিলবে সুন্দর একটি ফিজিক্যাল স্ক্যানার ।  স্ক্যানার বাটনটি আকারে বেশ বড় নয় এবং এর অবস্থান সঠিক জায়গায় বলে আমার কাছে মনে হয়েছে । আপনি খুব সহজেই এটিকে ব্যবহার করতে পারবেন । তবে এর কার্যক্ষমতা বেশ দ্রুত নয় । অন্যান্য ফ্লাগশিপ স্মার্টফোনগুলোতে আমরা যে ফিজিক্যাল স্ক্যানারের দেখে থাকি সেগুলো মূলত অনেকটা কম সময়ের মধ্যে আনলক করা যায় । কিন্তু এই স্মার্টফোনটির ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল স্ক্যানারটি কিছুটা সময় নিয়ে নিবে আনলক হওয়ার জন্য । তবে অন্যান্য সিকিউরিটি সিস্টেম গুলো বেশ ভালই পারফরম্যান্স দিবে বলে ধারণা করা যায় যেমন জিপিএস সেন্সর , প্রক্সিমিটি , এক্সিলারোমিটার ইত্যাদি ।

ক্যামেরা পারফরম্যান্স

ক্যামেরা সেটআপ থেকে শুরু করে ক্যামেরা পারফরমেন্সের জন্য এই মডেলটি আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছে । প্রাইমারি ফাংশনে 50 মেগাপিক্সেল এর একটি ওয়াইড সেন্সর রয়েছে । আল্ট্রা ওয়াইড ফাংশনে দেখা মিলবে 13 মেগাপিক্সেল এর আরো একটি আকর্ষণীয় ক্যামেরা সেন্সর এবং এর পাশাপাশি 5 মেগাপিক্সেল এর আরো একটি টেলি ফটো ম্যাক্র সুটার রয়েছে । প্রাইমারি ক্যামেরার মাধ্যমে 50 মেগাপিক্সেল দিয়ে প্রোপার লাইটিংয়ের আপনি বেশ ভাল পারফরম্যান্স পেয়ে যাবেন । পিক্সেল এবং Sharpness এর পরিমাণ যথেষ্ট ভালো পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যায় । 123 ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে আল্ট্রা ওয়াইড ফাংশন এর মাধ্যমে ছবি তোলা সম্ভব । ফ্রন্ট বা সামনের ক্যামেরায় 13 মেগাপিক্সেল এর একটি ক্যামেরা রাখা হয়েছে সেলফি তোলার জন্য । 8k মুডে প্রাইমারি ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও রেকোডিং করা যাবে । স্মার্টফোনটির প্রাইস এর উপর যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে প্রাইজের সাথে ক্যামেরা পারফরম্যান্স মোটামুটি মানিয়ে নেওয়া যায় । আপনাদের কাছে হয়তো নিজেদের মন্তব্য আলাদা আলাদা হতে পারে তবে আমার কাছে মোটামুটি ভালই লেগেছে ‌‌। 


ব্যাটারি পাওয়ার

হ্যান্ডসেটটিতে 4500 mAh পাওয়ারের একটি ব্যাটারি রয়েছে । স্মার্টফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ নিয়ে আমাদের মনে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন জেগে উঠতেই পারে । 4500 মিলি এম্পিয়ার ততটা বেশি বা অনেকটা কম নয় । এটাকে আমরা মিডিয়াম পজিশনে রাখতে পারে । স্মার্টফোনটির সাথে 67 ওয়াটের একটি চার্জার পাওয়া যাবে । যার সাহায্যে আপনি সর্বোচ্চ 50 মিনিটের মধ্যেই আপনার ডিভাইসটিকে ফুল চার্জ করে নিতে পারবেন । তবে এখানে ওয়্যারলেস চার্জিং সিস্টেম এই বিষয়টি জানা যায়নি । আপনি যদি একটু হিউজ লেভেলের ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে একদিন ব্যবহার করে নিতে পারবেন ফুল চার্জে । আর যদি একটু লাইট ইউজার হয়ে থাকেন অথবা আপনি যদি একটু কম ব্যবহার করে থাকেন এই স্মার্টফোনটিকে তাহলে সর্বোচ্চ একদিন ব্যবহার করার পরেও কিছু চার্জ রয়ে যাবে । 

মেমরি স্টোরেজ

স্মার্ট ফোনের পারফরম্যান্স কেমন হবে , স্মার্টফোনকে কতটা দ্রুত চালানো যাবে এগুলো সম্পূর্ণ নির্ভর করে স্মার্টফোনের মেমরি স্টোরেজ এর উপর । একজন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী খুব সহজেই এই বিষয়টি বুঝে নিতে পারবে । যাহোক শাওমির নতুন এই মডেলটিতে 8 জিবি এবং 12 জিবি রেম রয়েছে অপরদিকে 128 জিবি এবং 256 জিবি রোম রয়েছে । স্মার্টফোনটির স্টোরেজের বিষয়টি লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পারবো শাওমি কোম্পানি এই স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে মেমরি স্টোরেজ একটি আকর্ষণীয় বিষয় হিসেবে রেখেছে । বাজেটের সাথে তুলনায় বেশ ভালো মেমোরি পারফরম্যান্স দেওয়া হয়েছে । তবে একটি বিষয় আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছে আর সেটি হল এই স্মার্টফোনটিতে পাওয়া যাবে না আলাদাভাবে মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহার করার সুযোগ । মেমরি স্টোরেজকে দুইটি ভেরিয়েন্ট এর মধ্যে পাওয়া যাবে । তবে এক্সটার্নাল কার্ড স্লট থাকলে হয়তো বিষয়টি আরো ভালো লাগতো ।  

গেমিং পারফরম্যান্স

অনলাইন গেমিং পারফরম্যান্স বর্তমান সময়ের একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয় । এখন অনেক মানুষ পাওয়া যাবে যারা কিনা অনলাইন গেম গুলো খেলার জন্য একটি ভালো মানের স্মার্টফোন চয়েজ করে থাকে । Xiaomi 12 X স্মার্টফোনটি যদি আপনার চয়েজ এর মধ্যে থাকে তাহলে এই স্মার্টফোনটি আপনার জন্য কেমন হবে গেম খেলার জন্য ? খুবই ভালো মানের মেমরি স্টোরেজ রয়েছে যার কারণে গেম ডাউনলোড থেকে শুরু করে গেম খেলা পর্যন্ত কোনরূপ সমস্যা সৃষ্টি হবে না বলে আশা করা যায় । গেমিং গ্রাফিক্স এর পাশাপাশি গেমিং মুভমেন্ট বেশ ভালই পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে । অনলাইন মার্কেট এর টপ গেম গুলো খেলার সুবিধা রয়েছে । তবে ব্যাটারি পারফরম্যান্স মিডিয়াম পর্যায়ে থাকার কারণে দীর্ঘক্ষন গেমপ্লে করার সময় কিছুটা ঝামেলা চোখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে । অপরদিকে পিক্সেল দেন্সিটি এবং রেজুলেশন ভালো থাকার কারণে গেমিং ভিডিও তৈরি করার সময় তেমন কোন অসুবিধা হবে না । 

অফিশিয়াল মডেল কবে নাগাদ হাতে পাওয়া যাবে ?

বর্তমান সময়ে এই স্মার্টফোনটি দেশের মার্কেটে আনঅফিসিয়াল ভাবে পাওয়া যাবে । অফিশিয়াল ডিভাইসটি দেশের মার্কেটে খুব শীঘ্রই চলে আসবে । তবে আমি মনে করি আপনারা যারা এই মডেলটি কিনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ইতিমধ্যেই তাদেরকে আর কিছুদিন ধৈর্য্য ধারণ করার । স্মার্টফোনটির অফিশিয়াল মডেল মার্কেটে আসার পর এর গুণগত মান জেনে-বুঝে মার্কেট থেকে ক্রয় করার আমার একটি ছোট প্লেন দেওয়া হলো আপনাদের জন্য । এতে করে আপনারা স্মার্টফোনটির সঠিক তথ্য জানতে পারবেন এবং ব্যবহার করার একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন । 50,000 বা তারও বেশি বাজেটের স্মার্টফোনগুলো যদি আনঅফিসিয়াল হয় তাহলে এখানে একটা আনস্মার্ট ভাবের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় । দেশের বাজারে ডিভাইসটির অফিশিয়াল মডেল ঠিক কবে আসবে সেটি সিওর ভাবে বলা মুশকিল তবে খুব শীঘ্রই চলে আসবে এটা শিউরলি বলা যায় । 


রিলিজ ডেট এবং প্রাইস

এপ্রিল , 2022 দেশের মার্কেটে Xiaomi 12 X মডেলটি আনঅফিসয়াল ভাবে লঞ্চ হয় । উপরের আলোচনায় আপনারা হয়তো বুঝে নিয়েছেন স্মার্টফোনটির প্রাইস 50 হাজার বা তার কাছাকাছি হতে পারে । মার্কেটে যখন মডেলটি প্রথম রিলিজ হয়েছিল তখন এর মূল্য ছিল 56 হাজার টাকা । কিন্তু বর্তমান মার্কেটে ডিভাইসটির মূল্য অনেকটাই ডাউন হয়ে দাঁড়িয়েছে 46 হাজার টাকা । স্মার্ট ফোনটির প্রাইস আরো কমবে বলে ধারণা করা যায় । ফ্লাগশিপ এবং হাই কোয়ালিটি পারফরম্যান্সের বেশকিছু স্মার্টফোন শাওমি মার্কেটে রিলিজ করেছে আর সেগুলোর মধ্যে এই মডেলটি অন্যতম একটি । শাওমি লাভারদের জন্য এই মডেলটি একটি টার্নিং পয়েন্ট ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারে তার কারণ হলো হাই লেভেলের প্রাইজের মধ্যে থাকা স্মার্টফোন গুলোর তালিকার মধ্যে এই মডেলটি অনেকটা জনপ্রিয়তা লাভ করে নিয়েছে । 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন