কম বাজেটের মধ্যে আমরা একটি ভালো পারফরম্যান্স এর স্মার্টফোন ব্যবহার করবো এমনটা আমরা অনেকেই চাই । 15 থেকে 20 হাজার টাকা বা তার আশেপাশের স্মার্টফোন গুলোতে আমরা যদি ক্যামেরা পারফরম্যান্স , একটি ভালো প্রসেসর , দারুন গেমিং পারফরম্যান্স পেয়ে যাই তাহলে কিন্তু সেই মডেলটির উপর আকর্ষণ অনেকটা বেড়ে যায় । আর এসব দিকগুলোর ওপর ইনফিনিক্স এবার বেশ ভালোভাবেই নজর দিয়েছে Infinix Note 12 G96 মডেলটির মধ্য দিয়ে । ইনফিনিক্স কোম্পানিটি নোট 12 আরো আগেই রিলিজ করেছিল আর তাদের সেই মডেলটিকে নতুন করে মার্কেটে রিলিজ করলো প্রসেসরকে আপডেট করে । তো যাই হোক স্মার্টফোনটি ইনফিনিক্স লাভারদের জন্য কতটা সোনায় সোহাগা হতে পারে এবং নতুন কি কি ইম্প্রেসমেন্ট আনা হয়েছে সে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হলো । এছাড়াও আমরা এখানে কি কি সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে সেগুলো দেখতে পাবো ।
বডি ডিজাইন
ইনফিনিক্স এর মডেল গুলো সাধারণত আমরা প্লাস্টিকের বডি ফ্রেমে আবদ্ধ থাকতে দেখি এবং বডি বিল্ড কোয়ালিটি সচরাচর প্লাস্টিকের তৈরি থাকে । এই ডিভাইসটিতে ও আমরা কিন্তু সেম বিল্ড ডেকোরেশন দেখতে পাবো । যদিও বডিবিলদের ক্যামেরা মডিওলে নোট 12 থেকে আপডেট দেখতে পেয়েছি । স্মার্টফোনটিকে দেশের মর্কেটে পাওয়া যাবে নীল এবং কালো কালারে । স্মার্টফোনের ডান দিকে রয়েছে পাওয়ার বাটন এবং ভলিউম বাটন বাম পাশে থাকছে মেমোরি কার্ড স্লট উপরের পাশে থাকছে সম্পূর্ণ ক্লিয়ার । নিচের দিকে ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট , 3.5 এম এম অডিও জ্যাক এবং লাউড স্পিকার । সাউন্ড কোয়ালিটি বেশ ভালো পাওয়া যাবে , যারা গেম প্লে করবেন তাদের জন্য এটি একটি প্লাস পয়েন্ট হতে পারে । এখানে যে গুগোল অ্যাসিস্ট্যান্ট বাটন দেওয়া হয়েছে সেটিকে আপনি ফিজিক্যাল স্ক্যানার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন ।
ডিসপ্লে সেকশন
6.7 ইঞ্চি সাইজের একটি অ্যামোলেড ডিসপ্লে পাওয়া যাবে যেটি ফুল এইচডি রেজুলেশন সাপোর্ট করবে । ডিসপ্লে যথেষ্ট পরিমাণ কালারফুল যার কারণে আউটডোরে আমরা স্বাচ্ছন্দ্য ভাবেই ব্যবহার করতে পারবো এই স্মার্টফোনটিকে । ডিসপ্লেতে 393 পিপিআই পিক্সেল দেন্সিটি দেওয়া হয়েছে । যদিও ডিসপ্লেটি যথেষ্ট পরিমান কালারফুল বাট কিছু কিছু কালার একটু বেশি বুষ্ট করে ফেলে । নীল এবং হলুদ কালার সহ আরো বেশ কয়েকটি কালার একুরেট ধরে রাখার গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা কম । ডিসপ্লের আশেপাশে থাকা চীন এবং বেজেল লেস এর পরিমাণ স্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে আমার কাছে । ডিসপ্লের যে বিষয়টি আমার কাছে পার্সোনালি ভালো লেগেছে সেটি হল আপনি যখন ভিডিও প্লেব্যাক দেখবেন তখন কিন্তু সেটি খুবই ভালো পারফরম্যান্স দিবে । যেহেতু মিড রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে সেহেতু আবার অ্যামোলেড ডিসপ্লে এককথায় এটা সবারই ভাল লাগার কথা ।
মেমোরি পারফরম্যান্স
মিড রেঞ্জের বাজেট হিসেবে ইনফিনিক্স আমাদেরকে এবার সবচেয়ে বেশি চমকে দিয়েছে যে জায়গায় সেটি হল মেমোরি পারফরম্যান্স । চমৎকার একটি মেমোরি পারফরম্যান্স দেওয়ার কারণে ইনফিনিক্স কোম্পানিকে আমার পক্ষ থেকে অবশ্য একটি স্যালুট । 6 জিবি এবং 8 জিবি রেম এর সাথে মেমোরি পারফরম্যান্সে আমরা দেখতে পেয়েছি 256 জিবি রোম । মেমোরি পারফরম্যান্সে আমরা কিন্তু বেস্ট পারফরমেন্সের ছোঁয়া দেখতে পাই । খুব কম ব্রান্ড রয়েছে যারা কিনা 20,000 টাকার মধ্যে সেম পারফরম্যান্স অফার করে থাকে । অসাম মেমোরি পারফরম্যান্স থাকার কারণে আমার মনে হয়না কারো বাড়তি মেমোরির প্রয়োজন হবে । তার পরেও ইনফিনিক্স এখানে একটি মাইক্রোএসডিএক্সসি মেমোরি কার্ড স্লট দিয়ে দিয়েছে । মিডিয়াম মার্কেটের বাজেট কিং হিসেবে এই ডিভাইসটির মেমোরি পারফরম্যান্স একধাপ এগিয়ে ।
ক্যামেরা ফিচার
স্মার্টফোনের ক্যামেরা পারফরম্যান্স এর দিকে আমি যখন নজর দিয়েছিলাম তখন আমি অনেকটা আশাহত হয়েছি । মিড রেঞ্জের একটি স্মার্টফোনে 50 মেগাপিক্সেল এর মেইন সেন্সর এবং 2 মেগাপিক্সেল এর আরেকটি ডেপট সেন্সর দেওয়া হয়েছে । ক্যামেরা ফাংশনে আমি অবশ্যই আল্ট্রা ওয়াইড ফাংশনকে মিস করবো এবং ডেপট সেন্সর এর পরিবর্তে একটি আল্ট্রা ওয়াইড সেন্সর দিলে হয়তো মানিয়ে নেওয়া যেত । মেইন সেন্সর এর পারফরমেন্স দেখার মতো মনে হবে । ডায়নামিক রেঞ্জের পরিমান বেশ ভালোই রয়েছে । ছবি তোলার সময় নজরকাড়া ইফেক্টিভ চোখে পড়বে । বাট মেইন সেন্সরটি বেশ কিছু কালার রয়েছে যেগুলোকে একটু বেশি বুস্ট করে ফেলে । যা অনেকের কাছে দেখতে ভালো লাগবে আবার অনেকের কাছেই মন্দ । মেইন ক্যামেরা সেন্সর এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ 2k ফরমেটে ভিডিও রেকর্ড করা যাবে যা আমরা এভারেজ পারফরম্যান্স বলেই গণ্য করতে পারি । এছাড়াও সেলফি তোলার জন্য সামনের ক্যামেরায় 16 মেগাপিক্সেল দেওয়া হয়েছে ।
প্রসেসর এবং অপারেটিং সিস্টেম
স্মার্টফোনটির অন্যতম আকর্ষণ এর প্রসেসর । মিড রেঞ্জের স্মার্টফোনগুলোতে আমরা বেশিরভাগ সময় মিডিয়াটেক হেলিও প্রসেসর দেখতে পাই । ইনফিনিক্স নোট 12 এবং নোট 12 G96 এর মধ্যে মূল পার্থক্য হলো এই প্রসেসর । মিডিয়াটেক হেলিও G96 প্রসেসর দেওয়া হয়েছে ইনফিনিক্স এর নতুন এই স্মার্টফোনটিতে । এছাড়াও অপারেটিং সিস্টেমে আমরা গুগোল এর লেটেস্ট ভার্সন এন্ড্রয়েড 12 ব্যবহার করতে দেখেছি । মিডিয়াটেক হেলিও g96 প্রসেসরটি 12 ন্যানোমিটারে তৈরি । তবে এখানে ইনফিনিক্স যে ইউআই ব্যবহার করেছে সেটি ব্যবহার না করলেও তেমন কিছু হতো না কারন আমরা অনেকেই এগুলোকে আনইন্সটল করে ব্যবহার করি । অন্যান্য যে ডিভাইসগুলোতে আমরা এই প্রসেসরটি ব্যবহার করতে দেখেছি সে স্মার্টফোনগুলোর হার্ডওয়্যারে আমরা তেমন কোনো সমস্যা খুঁজে পাইনি । এছাড়াও আপনি ব্যবহার করতে পারবেন একই সাথে অনেকগুলো সফটওয়্যার ।
গেমিং পারফরম্যান্স
মিড রেঞ্জের মধ্যে থাকা স্মার্টফোনগুলোর উপর কাস্টমারদের একটু বেশি টার্গেট থাকে গেম প্লে করার জন্য আর এইজন্যই ইনফিনিক্স এর এই মডেলটি মার্কেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সাথে গ্রাহকদের মন জয় করতে সফল হবে বলে আমার ধারণা । অনলাইন গেমিং এর জন্য সর্বপ্রথম আমরা মেমোরি পারফরম্যান্স এবং হার্ডওয়্যার এর দিকে লক্ষ্য রাখি । আর সেক্ষেত্রে ইনফিনিক্স এর নতুন এই মডেলটি অনেকটা এগিয়ে । মিডিয়াটেক হেলিও জি 96 প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে যেটা গেম প্লে করার জন্য পারফেক্ট একটা প্রসেসর । আপনি এটার মাধ্যমে দীর্ঘক্ষন গেমপ্লে করতে পারবেন সেক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে না তবে মাঝেমধ্যে একটু ল্যাক বা ফ্রেম লক দেখা যেতে পারে । স্মোথলি ভাবে খেলা যাবে ফ্রী ফায়ার এবং পাবজিতেও আমরা হাই কোয়ালিটির গ্রাফিক্স দেখতে পাবো । হ্যাঁ তবে আপনি যদি গেম খেলার জন্য এই ডিভাইসটিকে টার্গেট করে থাকেন তাহলে আমি বলব আপনি কি সঠিক ডিসিশন নিয়েছেন ।
ব্যাটারি পাওয়ার
মোটামুটি মিডিয়াম পাওয়ারের একটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে এই স্মার্টফোনটিতে । non-removable লিথিয়াম পলিমার টাইপের একটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে যার ব্যাটারি ক্যাপাসিটিতে আমরা পেয়ে যাবো 5,000 মিলিঅ্যাম্পিয়ার পাওয়ার । ব্যাটারি কোয়ালিটি নিয়ে আমার তেমন কোন কথা নেই তবে এখানে বেস্ট পারফরমেন্স দেখতে পেয়েছি বাজেট হিসেবে । স্মার্টফোনটিকে চার্জ দেওয়ার জন্য 33 ওয়াটের একটি ফাস্ট চার্জিং সিস্টেম রাখা হয়েছে । ব্যাটারি ব্যাকআপ এর কথা যদি বলি তাহলে আপনি বেশি ব্যবহার করে দিনশেষে একটু চার্জ করে নিলেই হবে । আর যদি হিউজ ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে একদিন অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে । তারবিহীন চার্জিং সিস্টেম এবং রিভার্স চার্জিং সিস্টেম এর কথা সিউর ভাবে জানা যায়নি । ব্যাটারি পারফরমেন্সে আমরা যে ব্যাটারি ব্যাকআপ পেয়েছি তা মোটামুটি সন্তোষজনক বলেই মনে হয়েছে ।
সিকিউরিটি সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক
সিকিউরিটি সিস্টেমে আপডেট কিছু দেখতে পাইনি তবে যে পাওয়ার বাটন দেওয়া হয়েছে সেটিকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর হিসেবে ব্যবহার করা যাবে যেটা আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি । হ্যাঁ তবে যে বিষয়টি না বললেই নয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটির কার্যক্ষমতা অনেক ফাস্ট এন্ড একুরেট । ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর পাশাপাশি আরো অন্যান্য সিকিউরিটি সিস্টেম রয়েছে সেগুলো আমরা বেশ ভালো ভাবেই ব্যবহার করতে পারব বলে আশা করি । এবার কথা বলা যাক এই স্মার্টফোনটির নেটওয়ার্ক সিস্টেম নিয়ে । সর্বোচ্চ ফোরজি নেটওয়ার্ক সংযোগ রাখা যাবে । নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে অথবা ব্রাউজিং করার সময় ফাস্তেস্ট স্পীড উপভোগ করতে পারবো । তারবিহীন যে কানেক্টিভিটি গুলো রয়েছে সেগুলো ব্যবহারেও আমরা সন্তোষজনক ফলাফল পাবো । তবে সবচেয়ে খুশির খবর হলো নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে আমরা কয়েকটি ভার্সনের দেখা পাবো ফোরজি নেটওয়ার্কে ।
প্রাইস বা মূল্য
উপরের আলোচনায় আমরা এই স্মার্টফোনটির একটি ভালো অ্যারেঞ্জমেন্ট লক্ষ করতে পেরেছি । এছাড়াও জানতে পেরেছি ডিভাইসটির সুবিধা এবং অসুবিধা । স্মার্টফোনটির যদি কয়েকটি টার্নিং পয়েন্ট আমরা খুঁজে বের করি তাহলে প্রথমে চলে আসবে 8 জিবি রেম এবং প্রসেসর এর কথা । মিড রেঞ্জের বাজেট হিসেবে এই দুইটা সেক্টরে আমরা খুবই ভালো পারফরম্যান্স পেয়েছি । স্মার্টফোনটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে গুনতে হবে 19,999 টাকা । স্পেসিফিকেশন বা পারফরম্যান্স দেখে আমরা এটা বলতে পারি যে এই স্মার্টফোনটির মূল্য ইনফিনিক্স এখানে হাতের আয়ত্তের মধ্যেই রেখেছে । আপনি যদি 20,000 টাকার মধ্যে একটি ভালো প্রসেসর এবং ভালো মেমোরি পারফরম্যান্সের স্মার্টফোন মার্কেটে খুঁজে থাকেন তাহলে এই মডেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য । তবে এর পাশাপাশি আমরা বেশ কিছু অসুবিধাও এখানে দেখতে পেয়েছি তবে আশাকরি ইনফিনিক্স এগুলোকে পরবর্তীতে আপডেট করে ঠিক করে নিবে ।