এমআই কোম্পানিকে আমরা রেগুলার মিডিয়াম বাজেটে স্মার্টফোন রিলিজ করতে দেখি । মিডেল রেঞ্জের পাশাপাশি চাহিদা থাকার কারণে কোম্পানিটি মার্কেটে ফ্লাগশিপ টাইপের স্মার্টফোন রিলিজ করতে অনেকটা আগ্রহ প্রকাশ করছে । ইতিমধ্যে তারা মার্কেটে বেশকিছু ফ্লাগশিপ টাইপের স্মার্টফোন রিলিজ করেছে আর সেগুলোর ফিচার পারফরম্যান্স ভালো থাকার কারণে গ্রাহকরা সাদরে গ্রহণ করছে । মিডিয়াম রেঞ্জের পাশাপাশি ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন রিলিজ করার যে একটা কম্বিনেশন আমরা দেখতে পাই সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই শাওমি । কিছুদিন আগে তারা প্রিভিয়াস যে ফ্লাগশিপ মডেলটি মার্কেটে রিলিজ করেছিল সেটির নাম শাওমি 11 প্রো । রিসেন্টলি টাইমে শাওমির ধারাবাহিকতায় আমরা আরও একটি নতুন ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনের দেখা পেয়ে যাবো মার্কেটে । মডেলটি হলো Xiaomi 12 pro । স্মার্টফোনটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে রিভিউতে সেখানে আপনারা জানতে পারবেন এই স্মার্টফোনটির অ্যাডভান্টেজ এবং ডিজ অ্যাডভান্টেজ সাইট গুলো ।
বডি ডিজাইন
স্মার্টফোনের বাহ্যিক কাঠামো অথবা আউটলুক স্মার্টফোনটি ব্যবহার করার পূর্বশর্ত অর্থাৎ স্মার্টফোনটির আউটলুক যদি আপনার কাছে ভাল লেগে যায় তাহলে কিন্তু আপনি স্মার্টফোনটি ব্যবহার করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করবেন । শাওমি 12 প্রো ডিভাইসটির আউটলুকের কথা যদি বলি তাহলে এই ডিভাইসটি নিঃসন্দেহে নজরকাড়া । মনমুগ্ধকর একটি সুন্দর ডিজাইন দেওয়া হয়েছে স্মার্টফোনটির বডিতে । সম্পূর্ণ বডিকে গরিলা গ্লাস অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম দিয়ে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে । 204 গ্রামের এই ডিভাইসটি কালো , সবুজ ছাড়াও আরো ভিন্ন কয়েকটি কালারে মার্কেটে পাওয়া যাবে । ডিভাইসটির বডি ডিজাইনের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে সেটি হল ডিভাইসটির সাউন্ড সিস্টেম । সাউন্ড সিস্টেমের জন্য এখানে চারটি স্পিকার দেওয়া হয়েছে । এটিকে একটি চমৎকার আপডেট বলে আমার কাছে মনে হয়েছে । যার কারণে সাউন্ড সিস্টেমে আপনি বেস্ট পারফরমেন্সটি খুঁজে পাবেন । এক হাতে ব্যবহার করার জন্য এটি আপনাদের কাছে পারফেক্ট বলেই মনে হবে । যদিও এখানে 3.5 এম এম হেডফোন জ্যাকটির দেখা পাওয়া যায়নি বাট বডির অন্যান্য অংশগুলোর পজিশন ঠিকঠাক বলেই মনে হয়েছে ।
ব্যাটারি ব্যাকআপ
ডিভাইসটির আরো একটি অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ব্যাটারি পাওয়ার । 4600 মিলি এম্পিয়ার সমপরিমাণের একটি non-removable ব্যাটারি ক্যাপাসিটি দেওয়া হয়েছে । আকর্ষণের বিষয়টি হচ্ছে ব্যাটারীটি চার্জ দেওয়ার জন্য বিশাল দ্রুতগতিসম্পন্ন 120 ওয়াটের চার্জিং ক্যাবল ব্যবহার করা হয়েছে । আমার দেখা ফাস্ট চার্জিং সিস্টেম স্মার্টফোনের মধ্যে এই ডিভাইসটি অন্যতম । যাই হোক এটি একটি ভাল দিক যেটি সবারই ভাল লাগার কথা । 120 ওয়াট এর ফাস্ট চার্জিং ক্যাবল এর মাধ্যমে আপনি 18 মিনিটের মধ্যেই ডিভাইসটিকে ফুল চার্জ করে নিতে পারবেন আর এমনটাই বলা হয়েছে কোম্পানি থেকে । এই বিষয়টা প্রায় অনেকের কাছেই হয়তো অবাক লাগতে পারে । এছাড়াও আপনি ওয়্যারলেস চার্জিং সিস্টেম উপভোগ করতে পারবেন যার সাহায্য নিয়ে আপনি 50 ওয়াট দ্রুত গতিতে চার্জ করার সুবিধা পাবেন । ব্যাটারি পারফরমেন্স জাস্ট ওয়াও । এই বিষয়টি আমার কাছে ভালো লেগেছে ।
ডিসপ্লে ফিচার
এমোলেড টাইপ এর ডিসপ্লের নাম কাম সম্পর্কে আমাদের সকলেরই হয়তো কিছু না কিছু ধারনা রয়েছে । শাওমির নতুন ডিভাইসটিতেও আমরা অ্যামোলেড ডিসপ্লের দেখা পেয়ে যাই । যেখানে থাকছে 120 Hz রিফ্রেশ রেট । রিফ্রেশ রেট এর পরিমাণ খুব ভালো । আপনি আপনার প্রয়োজন মতো মিনিমাম 1 হার্জ থেকে 120 Hz পর্যন্ত বাড়িয়ে কমিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন যার জন্য ব্যাটারীতে তেমন কোনো চাপ পড়বে না । স্যামসাং এর ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এটি যথেষ্ট কালারফুল । ব্রাইটনেস এর পরিমাণ ভালো আউটডোরে পারফরম্যান্স ভালই পাওয়া যাবে । ডিসপ্লের প্রটেকশনের জন্য শক্তপোক্ত প্রটেক্টেদ কর্নিং গরিল্লা গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে । 6.73 ইঞ্চি সাইজের মোটামুটি বড়োসড়ো একটি ডিসপ্লে প্যানেল এখানে দেওয়া হয়েছে । ডিসপ্লের বেজেল বা চিন এরিয়া যথেষ্ট মানের ন্যারো বলেই মনে হয়েছে । 140×3200 পিক্সেল রেজুলেশন রয়েছে ডিসপ্লেতে । ডিসপ্লের এভারেজ পারফরম্যান্স চোখ জুড়ানো ।
ক্যামেরা পারফরম্যান্স
শাওমির প্রিভিয়াস স্মার্টফোনটিতে যে ক্যামেরা ডিজাইন আমরা দেখতে পেয়েছিলাম শাওমি 12 প্রো ডিভাইসটিতে আমরা তার থেকে ভিন্ন একটি ক্যামেরা ডিজাইন দেখতে পেয়েছি । এখন কথা হল ক্যামেরা পারফরম্যান্সে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সফল হবে কিনা ? ক্যামেরা পারফরম্যান্স এক নজরে দেখে নেওয়া যাক । মেইন ক্যামেরাসহ ত্রিপল রেয়ার আইটেমের একটি সমন্বয় পারফরম্যান্স এখানে দেখতে পাবো । মেইন সেন্সর এর পাশাপাশি এখানে একটি আল্ট্রা ওয়াইড এবং একটি টেলি ফটো সেন্সর দেওয়া হয়েছে , তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে তিনটি ক্যামেরা সেন্সরে 50 মেগাপিক্সেল করে 150 মেগাপিক্সেল দেওয়া হয়েছে । শাওমি আমাদের মাঝে যে কয়টি স্মার্টফোন রিলিজ করেছে সেগুলোর মধ্যে এই ডিভাইসটির ক্যামেরা ফাংশন আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে । মেইন ক্যামেরা যথেষ্ট কালারফুল ছবি তুলতে সাহায্য করবে এবং আল্ট্রা ওয়াইড ফাংশনে ডায়নামিক রেঞ্জের পরিমাণ ভালো থাকার কারণে ভালো ছবি তোলা কঠিন কিছু মনে হবে না । এছাড়াও থাকছে নাইট মোড যেটির ফিচার ডিটেইল আপনাদের পছন্দ হবে বলে ধারণা করছি । সেলফি তোলার জন্য ফ্রন্ট ক্যামেরায় 32 মেগাপিক্সেল এর একটি ক্যামেরা কাটাউট রাখা হয়েছে ।
অপারেটিং সিস্টেম বা প্রসেসর
অপারেটিং সিস্টেমে গুগোল এর লেটেস্ট ভার্সন এন্ড্রয়েড 12 ব্যবহার করা হয়েছে যেটিকে আপনি চাইলে পরবর্তীতে গুগলের সাথেই আপডেট করে নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন । এবার কথা বলা যাক ডিভাইসটির প্রসেসর নিয়ে । স্মার্টফোনটিতে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন এর প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে Qualcomm Snapdragon SM8450 । কোয়ালকম এর প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে তার মানে আপনি বুঝতেই পারছেন এখানে খুবই গর্জিয়াস হতে চলেছে অপারেটিং সিস্টেমের পারফরম্যান্স । একই সাথে আপনি বেশ কয়েকটি হাই কোয়ালিটি অ্যাপস বা সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করতে পারবেন সেক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে না । অ্যাপস ব্যবহার করার সময় ডিভাইসটিকে গরম হতে দেখা যাবেনা কারন এখানে একটি হাই কোয়ালিটির ব্যাটারি পাওয়া গেছে । যে প্রসেসরটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটা মূলত একটি অক্টা কোর প্রসেসর । যার কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারব । 4 ন্যানোমিটার সাইজের ট্রানজেকশনে প্রসেসরটি যুক্ত করা হয়েছে ।
মেমোরি পারফরম্যান্স
স্মার্টফোনের মাধ্যমে ফাস্টেস্ট গতি অথবা দ্রুত সম্পন্ন গতি পাওয়ার জন্য অবশ্যই মেমোরি পারফরম্যান্সের প্রয়োজন এটা আমরা সবাই হয়তো ভালভাবেই জানি । ভালো মানের মেমোরি পারফরম্যান্স ব্যতীত আপনি কিন্তু একটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে তেমন ভাল একটি স্পিড পাবেন না । তবে খুশির সংবাদ হলো একটি ডিভাইসকে ভালোভাবে রান করানোর জন্য যে মেমরী পারফরম্যান্সের প্রয়োজন তার থেকে ভালই এখানে আমরা পেয়ে যাব । ইন্টার্নাল মেমোরি রেম হিসেবে থাকছে দুইটি ভেরিয়েন্ট 8 জিবি এবং 12 জিবি । এক্সটার্নাল মেমোরি অর্থাৎ রোম হিসেবে থাকছে 128 জিবি এবং 256 জিবি । তবে অন্যান্য স্মার্টফোনের মতো এখানে মেমোরি কার্ড স্লট ব্যবহার করা যাবে না । যে মেমরী পারফরম্যান্স দেওয়া হয়েছে তাতে আমার মনে হয় না আলাদাভাবে কিছু প্রয়োজন । যার কারণে আমার কাছে মনে হয়েছে এটির অনুপস্থিতি আপনাদের তেমন কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না । পরিশেষে বলা যায় মেমোরি পারফরমেন্সের উপর হতাশাটা আমার কাছে মনে হয় নি ।
কানেক্টিভিটি এবং সেন্সর
ফিফথ জেনারেশন নেটওয়ার্কের আওতায় এই স্মার্টফোনটি নাম লিখিয়েছে । সো আমরা সহজেই বুঝতে পারছি এই ডিভাইসটির মাধ্যমে আমরা ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক সম্পন্ন স্পিড উপভোগ করতে পারব । ইভেন ফোর্থ জেনারেশন এর নেটওয়ার্ক স্পিড ভালো পাওয়া যাবে আশা করি । টোটালি নেটওয়ার্ক স্পিডে একধাপ এগিয়ে আছে এটা কিন্তু বলা যায় । এছাড়াও তারবিহীন যে নেটওয়ার্ক গুলো রয়েছে সেখানেও আমরা বেস্ট পারফরমেন্স খুজে পাব । ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট দেওয়া হয়েছে । সিকিউরিটি সেন্সর এর কি খবর ? একটি ফ্লাগশিপ টাইপের স্মার্টফোন সেখানে ডিজিটাল সিকিউরিটি সিস্টেম থাকবে না এটা কি হয় । ডিসপ্লের নিচে অপটিক্যাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর যুক্ত করা হয়েছে যেতে সাহায্য ক্ষমতাও আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে । এছাড়াও অন্যান্য যে সিস্টেমগুলো রয়েছে সেখানেও আমরা সিকিউরিটি সিস্টেমের বেশ ভালো ডেভেলপমেন্ট দেখতে পেয়েছি ।
গেমিং পারফরম্যান্স
একটি ভাল মানের ডিসপ্লে , মোটামুটি হাই কোয়ালিটির ব্যাটারি ফিচার , মেমরি স্টোরেজে ভরপুর একটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে আমরা হ্যাপিলি ভাবেই অনলাইন গেম গুলো উপভোগ করতে পারব । অনলাইন জগতের যে গেম গুলো রয়েছে সেগুলোর মধ্যে যদি আমরা ফেমাস গেম-প্লে খুঁজে বের করি তাহলে ফ্রী ফায়ার বা পাবজির কথাই সবার আগে আমাদের মাথায় আসবে । আর সেই অনলাইন গেম গুলো যদি আপনি এই ডিভাইসটির মাধ্যমে গেম প্লে করতে চান তাহলে সেটা আপনার জন্য কেমন সাফল্য বয়ে আনতে পারবে ? এমন একটা প্রশ্ন আপনার মনে আসতে পারে । ব্যাটারি পারফরম্যান্স ভালো থাকার কারণে আমরা গেম প্লে করার সময় এই স্মার্টফোনটি গরম হতে দেখব না । এছাড়াও থাকছে একটি অ্যামোলেড ডিসপ্লে যেখানে আমরা দারুন গ্রাফিক্সের দেখা পাবো । মোটামুটি একটি গেম প্লে করার জন্য উন্নতমানের প্রসেসর রয়েছে । সর্বোপরি আমরা বলতেই পারি অনলাইন গেম গুলো উপভোগ করার জন্য এই স্মার্টফোনটি আমরা পছন্দ করতেই পারি ।
প্রাইস বা মূল্য
এবার আমরা আলোচনা করব স্মার্টফোনটির মূল বিষয় নিয়ে । এই ডিভাইসটি ব্যবহার করার জন্য আমাদেরকে কত টাকা খরচ করতে হবে ? উপরের আলোচনায় আমরা জানতে পেরেছি স্মার্টফোনটির দুইটি ভ্যারিয়েন্ট রিলিজ করা হয়েছে । 24 এপ্রিল 2022 দেশে মার্কেটে স্মার্টফোনটি প্রথমবারের মতো রিলিজ হয় । 8/256 যে ভ্যারিয়েন্টটি রয়েছে সেটি ব্যবহার করার জন্য 99,999 টাকা গুনতে হবে । 12/256 যে ভ্যারিয়েন্টটি রয়েছে সেটির মূল্য মার্কেট নর্ধারণ করা হয়েছে 109,999 টাকা । যদি আপনি এই স্মার্টফোনটির অফিশিয়াল হ্যান্ডসেটটি ব্যবহার করতে চান তাহলে আপনাকে এই দুটি থেকে চয়েজ করতে হবে । এই স্মার্টফোনটির আনঅফিসিয়াল যে মডেল রয়েছে সেটির মূল্য 82,000 টাকা ।