মার্কেটে রেগুলার স্মার্টফোন রিলিজ করার আরও একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হলো ওপ্পো । কোম্পানিটি মার্কেটে আরও একটি নতুন মডেল রিলিজ করে দিল যার নাম Oppo F21 Pro । মডেলটি ছবিতে আমরা যেমন দেখতে পেয়েছি বাস্তবে তার থেকে আরও বেশি চমৎকার । কেবলমাত্র আউটলুক দেখেই স্মার্টফোন ব্যবহার করার আগ্রহ খুব কম মানুষেরই রয়েছে এখন তারা আউটলুকের পাশাপাশি স্পেসিফিকেশনের দিকেও নজর রাখে । আর এই জন্যই আমরা স্মার্টফোনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করবো যেন আপনারা ডিভাইসটির সুবিধা এবং অসুবিধার দিকগুলো জানতে পারেন । একটি স্মার্টফোনের কেবলমাত্র আউটলুক বা বডি ডিজাইন থাকে না এর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ পারফরম্যান্স , ক্যামেরা ফিচার , প্রসেসর , ডিসপ্লে সাইজ সেগুলোর দিকে ওপ্পো কেমন ইমপ্রুভমেন্ট এনেছে ।
বডি ডিজাইন
স্মার্টফোনটির বডি ডিজাইনে একটা গর্জিয়াস ভাব রয়েছে যার কারণে সর্বপ্রথম ডিসপ্লে সেকশন নিয়ে আলোচনা করা যাক । প্লাস্টিকের তৈরি ডিভাইসটি দেখতে নজর নন্দিত । হ্যান্ডসেটটিতে দেওয়া হয়েছে লেদার ফিনিশিং , যার কারনে ব্যবহার করে আরামদায়ক অনুভূতি পাওয়া যাবে । কেবল মাত্র এখানেই নয় এছাড়াও ব্যবহার করা হয়েছে ফাইবার গ্লাস । বডি ডিজাইন এর দিক দিয়ে অনেকটা ইমপ্রুভমেন্ট আমাদের নজরে ধরা দেয় । ভলিউম রকার এবং গুগোল অ্যাসিস্ট্যান্ট বাটন এর সাথে ডিভাইসটির নিচের দিকে আমরা পেয়ে যাব সিঙ্গেল লাউডস্পিকার এবং 3.5 এম এম অডিও জ্যাক । তবে এই সময়ে দাঁড়িয়ে এখানে আমরা ডুয়েল স্পিকার এর আসা অনেকেই করেছিলাম বাট সেটা পাইনি । থিকনেচের কথা যদি বলি তাহলে আকার চলনসই এবং ওজন মাত্র 175 গ্রাম । বডি ডিজাইনের কথা বলতে গেলে সব মিলিয়ে যে পারফরম্যান্স দেওয়া হয়েছে সেটার প্রশংসা না করলেই নয় । অরেঞ্জ কালার ভেরিয়েন্টের যে মডেলটি রয়েছে সেটা আমার কাছে ফাটাফাটি লেগেছে তবে ব্ল্যাক কালারটিও দারুন ।
ক্যামেরা এবিলিটি
ডিভাইসটির অন্যতম আরো একটি চার্মিং সাইট হল ক্যামেরা পারফরম্যান্স । Oppo F21 Pro ডিভাইসটিতে ট্রিপল ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে যার মেইন সেন্সরে থাকবে 64 মেগাপিক্সেল , মাইক্রোস্কোপ সেন্সরে 2 মেগাপিক্সেল এবং ডেপট সেন্সরে 2 মেগাপিক্সেল রয়েছে । আমার মতো অনেকেই হয়তো আল্ট্রা ওয়াইড সেন্সরটিকে মিস করবেন । মেইন সেন্সরের মাধ্যমে অর্থাৎ 64 মেগাপিক্সেল এর মাধ্যমে আশানুরূপ পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে আশা করি । ক্যামেরা ফাংশন গুলোর মধ্যে মেইন যে আকর্ষন সেটা হলো মাইক্রোস্কোপ সেন্সর । আমরা যখন মাইক্রোস্কোপ সেন্সরের সাহায্যে ছবি ক্লিক করতে যাব তখন দেখতে পাবো তার সাথে একটি রিং লাইটে অটোমেটিক ভাবে আলো জ্বলছে । মাইক্রোস্কোপ সেন্সরের সাথেই রিং লাইট এর অবস্থান রয়েছে যার কারণে ছবি তোলার সময় সেটি আলো ছড়াচ্ছে । এছাড়াও এটিকে আপনি নোটিফিকেশন লাইট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন । সেলফি তোলার জন্য থাকছে 32 মেগাপিক্সেল এর একটি সেন্সর । যেখানে এইচডিআর ফিচার পারফরম্যান্স খুব ভালো থাকবে । মেইন ক্যামেরা সেলফি ক্যামেরায় ডায়নামিক রেঞ্জের উপস্থিতি ভালো পাওয়া যাবে । 1080p 30fps পজিশনে রেকর্ড করা যাবে । অবশ্যই এখানে আমরা 4K পজিশনকে মিস করবো ।
অপারেটিং সিস্টেম
অপারেটিং সিস্টেমে গুগোল এর লেটেস্ট ভার্সন এন্ড্রয়েড 12 ব্যবহার করা হয়েছে সেটি অবশ্য একটি ভালো দিক বলা যায় । তবে যেদিকে স্মার্টফোনটি আমাকে অনেকটা আশাহত করেছে সেদিকটা হলো ডিভাইসটির প্রসেসর । মিডিয়াটেক হেলিও G80 প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে যা এই স্মার্টফোনটির বাজেটের সাথে মানিয়ে নেওয়ার মতো নয় । যদি আমরা 20,000 টাকার বাজেট এর সাথে কম্পেয়ার করে তাহলে মিডিয়াটেক হেলিও G80 মেনে নেওয়ার মতো বাট এই বাজেটে সেটা আশাহত বলা চলে । কিছুটা আপডেটের প্রয়োজন এখানে ছিল । এভাবে হাই কোয়ালিটির অ্যাপস গুলো একসাথে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না এটা আশা করা যায় । কিন্তু পারফরম্যান্স অনেকটা মিডিয়াম রেঞ্জের ভিতরে থাকা স্মার্টফোন গুলোর মতোই দিবে । অপারেটিং সিস্টেমে গুগোলকে ফলো করা হয়েছে সে ক্ষেত্রে আপনি আপডেটের মাধ্যমেও তাদের লেটেস্ট ভার্সন গুলো উপভোগ করতে পারবেন ।
ব্যাটারি ব্যাকআপ
4500 মিলি এম্পিয়ার পাওয়ার এর একটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে এই ডিভাইসটির ব্যাটারি ক্যাপাসিটিতে । ব্যাটারি পারফরম্যান্স মোটামুটি ভালোই পাওয়া গেছে বলা যায় । স্মার্টফোনটিকে চার্জ দেওয়ার জন্য 33 ওয়াটের একটি ফাস্ট চার্জিং ক্যাবল দেওয়া হয়েছে যেটির মাধ্যমে ফুল চার্জ করতে স্মার্টফোনটি বেশি সময় নিবে না । অনেক সময় আমরা চার্জিং এর বিষয়ে বেশ উদাসীন থাকি পরে দেখা যায় স্মার্টফোনটিকেই রিমুভ করতে হয় । যারা রেগুলার মোটামুটি ভালোই দৈনিক আট থেকে দশ ঘন্টা মোবাইল ব্যবহার করে থাকে তাদের জন্য এই মোবাইলটি ব্যবহার করার রিকমেন্ড করে থাকবো আমি অবশ্যই । 33 ওয়াট ফাস্ট চার্জিং এর মাধ্যমে আপনি স্মার্টফোনটিকে প্রায় 60 মিনিটের মধ্যেই ফুল চার্জ করে নিতে পারবেন । non-removable প্লেসমেন্টের ব্যাটারিকে ওয়্যারলেস চার্জিং সিস্টেম এর আওতায় রাখা হয়নি ।
ডিসপ্লে সাইজ অ্যান্ড কোয়ালিটি
6.43 ইঞ্চি সাইজের একটি এমোলেড ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে থাকছে ফুল এইচডি রেজুলেশন । ডিসপ্লে পারফরম্যান্সের কথা যদি বলি তাহলে এটি যথেষ্ট পরিমাণে কালারফুল । লো লাইটিং এর পাশাপাশি হাইলাইটিং সিস্টেমেও খুব সহজেই কালার ধরে রাখতে সক্ষম হবে । এছাড়াও টাচ রেসপন্স ভালো পাওয়া যাবে । ডিসপ্লের সুরক্ষার জন্য কর্নিং গরিল্লা গ্লাস 5 ব্যবহার করা হয়েছে । 409 পিপিআই পিক্সেল দেন্সিটি রয়েছে ডিভাইসটিতে । আকর্ষণীয় মানের এই ডিসপ্লেতে ব্যবহার করা হয়েছে 90 হার্জের রিফ্রেশ রেট । 90 Hz রিফ্রেশ রেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাটারির উপর কোন প্রভাব ফেলবে না । চিন বা বেজেল লেস এর পরিমাণ আমার কাছে ঠিকঠাক মনে হয়েছে । গ্রাহকদের ডিসপ্লে সাইজ নিয়েও সন্তুষ্ট থাকার কথা । সবমিলিয়ে ওভারঅল Oppo এখানে মানসম্মত ডিসপ্লে পারফরম্যান্স দিয়েছে বলা যেতে পারে এক কথায় ।
গেমিং পারফরম্যান্স
অনলাইন জগতের মার্কেটপ্লেসগুলোর মধ্যে অনলাইন গেম একটি অন্যতম জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস । অনলাইন গেম গুলো এখন মানুষ স্মার্টফোনের মাধ্যমে উপভোগ করে থাকে । যদি আপনি এই ডিভাইসটির মাধ্যমে অনলাইন গেম গুলো যেমন ফ্রী ফায়ার বা পাবজি কেমন খেলা যাবে সে বিষয়ে একটি প্রশ্ন সকলের মনেই থাকতে পারে ? অনলাইন গেম গুলো খেলার জন্য এটি মোটেও একটি পারফেক্ট একটি ডিভাইস নয় । আপনি যদি একজন প্রফেশনাল মানের গেম প্লে করতে চান তাহলে এই ডিভাইসটি আপনাকে তেমনই একটি ফিচার দিতে পারবে না । তার কারণ হলো এখানে যে প্রসেসরটি দেওয়া হয়েছে সেটি মূলত গেমিং প্রসেসর নয় । হ্যাঁ তবে একেবারেই ফেলে দেওয়ার মতো নয় আপনি যদি টুকটাক গেম খেলতে চান তাহলে সেটা পারবেন সমস্যা নেই । অনলাইন গেমস গুলোর যে ডিফল্ট গ্রাফিক্স রয়েছে এটির মাধ্যমে মোটামুটি ভাবে গেম প্লে করা যাবে । আপনি যদি গেমিং এর মাধ্যমে ইউটিউবিং করতে চান তাহলে আপনাকে এর চেয়ে বেটার কিছু চয়েজ করতে হবে ।
মেমরি স্টোরেজ
একটি ডিভাইসের পারফরম্যান্স কেমন হবে এবং ডিভাইসটি কেমন গতি সম্পন্ন হবে সেটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে মেমোরি পারফরমেন্সের উপর । Oppo F21 Pro ডিভাইসটিতে একটি ভেরিয়েন্ট দেওয়া হয়েছে । 8 জিবি রেম এর সাথে থাকছে 128 জিবি রোম । একটি স্মার্টফোনকে আপনি ভালোভাবে চালাতে চাইলে এবং সর্বোচ্চ গতি উপভোগ করার জন্য সর্বোচ্চ যে মেমরী পারফরম্যান্স প্রয়োজন সেটি এখানে পাওয়া যাবে । মেমোরি পারফরম্যান্সে একটি আকর্ষণীয় বিষয় যুক্ত করা হয়েছে আর সেটি হলো ওটিজি ক্যাবল । দেখা গেল আপনার ব্যবহার করার সময় আরো কিছু বাড়তি স্টোরেজ প্রয়োজন সে ক্ষেত্রে আপনি ওটিজি ক্যাবলের মাধ্যমে সর্বোচ্চ 256 জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ বাড়াতে পারবেন । মেমোরি পারফরম্যান্সে এই বিষয়টি অনেকের কাজে আসতে পারে । তার কারণ হলো দৈনন্দিন জীবনে স্মার্টফোন ব্যবহার করার জন্য অনেক স্টোরেজে প্রয়োজন হতেই পারে । সিম কার্ড এর সাথেই মেমোরি কার্ড স্লট রয়েছে সেখানে আপনি এক্সট্রা মেমোরি ব্যবহার করতে পারবেন ।
সিকিউরিটি সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক
স্মার্টফোনের সিকিউরিটি সিস্টেমে বেশকিছু মর্ডান সিস্টেম বর্তমান সময় চালু হয়েছে আর সেগুলোর মধ্যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এবং ফেস আনলকিং সিস্টেম অন্যতম বলা যায় । ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর উপস্থিতি আমরা রায় প্রতিটা ডিভাইসে দেখতে পেয়ে থাকি । হয়তো স্মার্টফোনের ডিসপ্লের নিচে আর নয় তো সাইট মাউন্টেডে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর উপস্থিতি দেখতে পাই । কিন্তু এই ডিভাইসটিতে আমরা অপটিক্যাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর দেখা পাবো । যেটির অবস্থান ডিসপ্লের মধ্যে । সচরাচর আমরা প্রায় প্রতিটা স্মার্টফোনে এই সেন্সরটির দেখা পাই না । সিকিউরিটি সিস্টেম এটি একটি অন্যতম আপডেট এনেছে কোম্পানিটি । নেটওয়ার্কিং সিস্টেম বা কানেক্টিভিটির কথা যদি বলি তাহলে এখানে সর্বোচ্চ ফোরজি নেটওয়ার্ক স্পিড উপভোগ করা যাবে । ব্লুটুথ , ওয়াইফাই , হটস্পট এবং তারবিহীন নেটওয়ার্কগুলো বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করা যাবে ।
রিলিজ ডেট এবং মূল্য
Oppo F21 Pro স্মার্টফোনটি 15 এপ্রিল , 2022 গ্লোবাল মার্কেটে রিলিজ হয়েছে । এই স্মার্টফোনটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে 27,990 টাকা । উপরে আলোচিত এই স্মার্টফোনটির স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ভাবে একটি আলোচনা করা হয়েছে । সেখানে সুবিধা এবং অসুবিধার দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে । এখন আপনার কাছে যদি এই স্মার্টফোনটির পারফরম্যান্স এবং বাজেট পছন্দ হয় তাহলে আপনার জন্য এটি একটি অন্যতম সুযোগ । 30000 টাকার মধ্যে আপনি যদি একটি ভাল মানের স্মার্টফোন মার্কেটে খুঁজে থাকেন আমার মতে এই মডেলটি আপনাকে বেস্ট পারফরমেন্স দিতে সক্ষম হবে । এছাড়াও আপনি যদি এই স্মার্টফোনটিকে অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয় করতে চান তাহলে কোম্পানিটির অফিশিয়াল পেইজ থেকে সেটা অবশ্যই পারবেন ।