স্বল্প বাজেটে এক বিশাল ধামাকা নিয়ে চলে আসে শাওমি নতুন স্মার্টফোন রিলিজের মাধ্যমে । শাওমিকে এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে বাজেট কিং বলে অভিহিত করে থাকি । এবার শাওমি তাদের গ্রাহকদের জন্য লেটেস্ট যে স্মার্টফোনটি রিলিজ করেছে সেটি অবশ্যই মার্কেট কাঁপাতে সক্ষম হবে বলে আমার ধারণা । শাওমির লেটেস্ট স্মার্টফোনটি হল Redmi 10C । স্বল্প বাজেটে আমরা যদি একটি স্মার্টফোনে ভালো মানের প্রসেসর , বডি ডিজাইন এবং ডিসপ্লের পাশাপাশি অন্যান্য দিক গুলো ভালো পেয়ে থাকি তাহলে সেই স্মার্টফোনটির প্রতি আকর্ষণ একটু বেশিই থাকবে বলা যায় । শাওমির প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোনেই আমরা আলাদা আলাদা ধামাকা দেখতে পেয়ে থাকি । Redmi 10C স্মার্টফোনটি শাওমি লাভারদের জন্য কেমন হতে পারে এবং তাদের ঠিক কতটা চাহিদা পূরণ করতে পারে সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করা হবে রিভিউতে । সেখানে ডিভাইসটির সম্পূর্ণ স্পেসিফিকেশন নিয়ে আলোচনা করা হবে , যার জন্য আপনি খুব সহজেই ডিভাইসটির ফিচার এবং গুণগত মান সম্পর্কে জানতে পারবেন ।
বডি ডিজাইন
শাওমির স্মার্টফোনগলোতে বডি ডিজাইন নিয়ে ততটা ভাবতে হয় না অলটাইম তারা বেস্ট আউটলুক দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে । Redmi 10 C স্মার্টফোনটির বডি ডিজাইনে মেড ফিনিশিং দেওয়া হয়েছে যার কারণে দেখতে অনেকটা নজরকাড়া । বডি বা ফ্রেম পলিকার্বনের তৈরি যার কারণে অবশ্যই ব্যাক কভার এর সাথে ব্যবহার করা প্রয়োজন । ভলিউম এবং গুগোল অ্যাসিস্ট্যান্ট বাটনের অবস্থান বডির ডানপাশে দেখতে পাওয়া যাবে । বডির উপরের পাশে 3.5 এম এম হেডফোন জ্যাক এবং নিচের দিকে রয়েছে মিনি স্পিকার এবং টাইপ সি পোর্ট । ভিন্ন ভিন্ন তিনটি কালার ভেরিয়েন্টে এই স্মার্টফোনটিকে মার্কেটে পাওয়া যাবে । 190 গ্রাম ওজনের এই ডিভাইসটি ইনহ্যান্ড পজিশনে ব্যবহার করতে সমস্যা হবে না । আউটলুক পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে Redmi 10 C হ্যান্ডসেটটি বাজিমাত ফিচার দিয়েছে বলা যায় ।
অপারেটিং সিস্টেম
অপারেটিং সিস্টেম এর বেশ কয়েকটি জায়গায় পারফরম্যান্স দেখার মতো । প্রথমত অপারেটিং সিস্টেমে গুগোল এর লেটেস্ট ভার্সন এন্ড্রয়েড 12 দিয়ে মোবাইলটিকে পরিচালিত করা হয়েছে । দ্বিতীয়ত কোয়ালকম স্নাপড্রাগণ G80 প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে যা মূলত একটি অক্টা কোর প্রসেসর । এছাড়াও প্রসেসরটির ট্রানজেকশন সাইজ 6 ন্যানোমিটার । 20 থেকে 25 হাজার টাকার বাজেটের স্মার্টফোনগুলোতে আমরা এই প্রসেসর এর দেখা পেয়ে যাই অনেক সময় । প্রসেসর এর দিক দিয়ে আমি বলবো বেস্ট পারফরমেন্স দেওয়া হয়েছে যেটা অনেকের কাছেই ভালো লাগার কথা । আপনি চাইলে একসাথে অনেকগুলো অ্যাপস ব্যবহার করতে পারবেন । অ্যাপস ওপেনিং এবং ক্লোজিং এর ক্ষেত্রে তেমন কোন সমস্যা চোখে পড়বে না আশা করি । অপারেটিং সিস্টেম অথবা প্রসেসর নিয়ে যদি কোন মতামত পোষণ করতে হয় তাহলে আমি বলবো সুপার পারফরমেন্স দেওয়ার চেষ্টা করেছে এখানে শাওমি ।
ক্যামেরা সেকশন
প্রাইমারি ক্যামেরার দিকে লক্ষ্য করলে আমরা সবার প্রথমেই দেখতে পারবো কোম্পানির দেওয়া ব্রান্ডিং সিল । ব্রান্ডিং সিলটা প্রাইমারি ক্যামেরা গুলোকে একটি ওয়ান্ডারফুল লুকিং দিতে সফল হয়েছে । যাইহোক প্রাইমারি ক্যামেরায় আমরা ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ দেখতে পারবো । 50 মেগাপিক্সেল এর মেইন সেন্সর এবং এর সাথে 2 মেগাপিক্সেল এর একটি ডেপট ফাংশন । মেইন ক্যামেরার মাধ্যমে অর্থাৎ 50 মেগাপিক্সেল এর সাহায্যে মনমুগ্ধকর ছবি তোলা অনেকটাই সহজ হবে । মেইন ক্যামেরাটি অনেকটা ভালো কালার ধরে রাখতে পারবে এবং লাইটিং পজিশনে বেটার রেজাল্ট পাওয়া যাবে । ছবি তোলার পর আপনার কাছে মনে হবে সেন্সরটি কালারটি যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে । তবে আমার কাছে যে বিষয়টি মনে হয়েছে এখানে ডেপট সেন্সরটির পরিবর্তে একটি আল্ট্রা ওয়াইড ফাংশন দিলে অনেকটাই ভালো হতো । সেলফি ক্যামেরার কথা যদি বলি তাহলে ডিসপ্লের মাঝামাঝি উপরের অংশে 5 মেগাপিক্সেল এর একটি সেন্সর দেওয়া হয়েছে । 1080 মেগাপিক্সেল এর সাথে ভিডিও রেকর্ড করার সুবিধা রয়েছে ।
ব্যাটারি পাওয়ার
ব্যাটারি পারফরমেন্সের কি খবর ? ব্যাটারি ব্যাকআপ কেমন পাওয়া যাবে ? এই প্রশ্নগুলো গ্রাহকদের কাছে একটি কমন বিষয় এবং এগুলো জানার আগ্রহ অনেকের কাছেই থাকে । non-removable লিথিয়াম পলিমার টাইপের ব্যাটারি রয়েছে যার ক্যাপাসিটিতে দেওয়া হয়েছে 5,000 মিলিঅ্যাম্পিয়ার পাওয়ার । ব্যাটারি পাওয়ার মোটামুটি ভালই বলা যায় । তবে যে বিষয়টি চোখে পড়েছে সেটি হল মোবাইলটির ব্যাটারিটিকে চার্জ দেওয়ার জন্য 18 ওয়াটের একটি চার্জার দেওয়া হয়েছে । যার মাধ্যমে ডিভাইসটিকে চার্জ করতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে । এখানে যদি 25 ওয়াটের একটি চার্জার দেওয়া হতো তাহলে হয়তো অ্যাডজাস্টেবল বলে মনে হতো । এছাড়া রিভার্স চার্জিং সিস্টেম রাখা হয়েছে এটি একটি গুড সাইট । সম্পূর্ণ চার্জে আপনি নরমালি দুইদিন ব্যাকআপ পেয়ে যাবেন । হাই ইউজ এবং গেমিং ইউজে সর্বোচ্চ 5 ঘন্টা ব্যবহারের সুযোগ থাকছে ।
ডিসপ্লে ফিচার
বেশ বড়সড় যথেষ্ট কালারফুলের একটি ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে যার সাইজ 6.71 ইঞ্চি । আইপিএস এলসিডি ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন ব্যবহার করা হয়েছে যার টাচ রেসপন্স অনেক ভালো এবং এখানে 16 মিলি কালার সাপোর্ট করবে । কর্নিং গরিলা গ্লাসের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ডিসপ্লেটিকে প্রোটেক্ট করে রাখা হয়েছে । শাওমি ডিসপ্লেটির সুরক্ষার দিকে বেশ ভালো নজর দিয়েছে বলা চলে । 750×1650 পিক্সেল রেজুলেশনের সাথে স্ক্রিন টু বডির রেটিও রেট 83.8 পার্সেন্ট । 268 পিক্সেল দেন্সিটি থাকার কারণে স্বল্প আলোতে ব্রাইটনেসের তেমন ঘাটতি না পাওয়া গেলেও ডেলাইটিং পজিশনে কিছুটা ঝামেলা হতে পারে । বেজেল লেস বা চিনের কথা যদি বলি তাহলে চিন যথেষ্ট ন্যারো পাওয়া গেছে বাট বেজেল লেস এর পরিমাণ কিছুটা চিকন রাখলে হয়তো ভালো হতো । আইপিএস এলসিডি ব্যবহার করার কারণে ডিভাইসটির ওজন বেশি বলে মনে হতে পারে ।
রেম এবং রোম
বর্তমান সময়ে প্রায় সবার হাতেই একটি স্মার্টফোন এর দেখা মেলে আর যারা স্মার্ট ফোন ব্যাবহার করে থাকে তারা অবশ্যই মেমোরি পারফরম্যান্সের বিষয়ে সব সময় অবগত থাকে নতুন স্মার্টফোনটি কিনার জন্য । তার কারণ হলো মেমোরি পারফরম্যান্স কম থাকলে আপনার স্মার্টফোনটি ব্যবহার করে ভালো পারফরর্মেন্স কখনোই আশা করতে পারবেন না । শাওমির নতুন এই মডেলটিতে আমরা কেমন মেমোরি পারফরম্যান্স পাচ্ছি ? Redmi 10C মডেলটিতে ইউএফসি ভার্সনের মেমোরি পারফরম্যান্স দেওয়া হয়েছে । যার অভ্যন্তরীণ স্টোরেজে অর্থাৎ রেম হিসেবে 4 জিবি এবং এক্সটারনাল স্টোরেজ 64 এবং 128 জিবি ভেরিয়েন্ট দেওয়া হয়েছে । এছাড়াও আরো একটি আকর্ষণীয় বিষয় রেখেছে শাওমি , সেটি হল এক্সটার্নাল স্টোরেজে আপনি সর্বোচ্চ 1TB পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন । এটা অবশ্য একটি অন্যতম আকর্ষণীয় দিক ।
গেমিং পারফরম্যান্স
অনলাইন গেমিং পারফরম্যান্স এখন স্মার্টফোনের মাধ্যমে উপভোগ করা যায় । অনেকে আবার গেমপ্লে করার জন্য ল্যাপটপ ব্যবহার করে থাকে । এখন কথা হল আপনি ল্যাপটপ অথবা পিসি এর মাধ্যমে যে পারফরম্যান্স পেয়ে যান স্মার্টফোনের মাধ্যমে সেগুলো কিন্তু কখনোই পাওয়া যাবে না বিশেষ করে মিডিয়াম বাজেটের স্মার্টফোন গুলোতে । হ্যাঁ তবে এমন অনেকে রয়েছেন যারা প্রফেশনাল মানের গেমপ্ল করেন না জাস্ট সিম্পল ইউজার হিসেবে গেম প্লে করেন । তাদের জন্য শাওমির নতুন এই মডেলটি অবশ্য বেশ ভালো পারফরর্মেন্স বয়ে আনতে পারবে । অনলাইন গেম গুলোর মধ্যে অন্যতম ফ্রী ফায়ার এবং পাবজি উন্নত মানের গ্রাফিক্সের সাথে গেম প্লে করা যাবে এবং খেলার সময় তেমন কোন অসুবিধা চোখে পড়বে না বলে ধারণা করা যায় । ফ্রিজ হয়ে যাওয়া বা আটকে যাওয়ার মত তেমন কোনো অসুবিধা হবে না বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মতামত পোষণ করছি ।
সিকিউরিটি সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক
স্মার্টফোনটির স্পেসিফিকেশন এবং সম্পূর্ণ আলোচনায় আমরা মোটামুটি ভালো পারফরম্যান্স পেলেও সিকিউরিটি সিস্টেমের ক্ষেত্রে কিন্তু কিছুটা ঝামেলা চোখে পড়েছে । সর্বপ্রথম আমরা যদি ফিজিক্যাল স্ক্যানার অথবা ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর কথা বলি তাহলে সেটির অবস্থান অনেকটাই উপরে । ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি খুঁজতে আমার অনেকটা সময় লেগে গেছে । ক্যামেরার সাথে অ্যাডজাস্ট করে রাখা হয়েছে যদিও ডিজাইনটি নতুন বাট অবস্থান কিছুটা উপরে । কার্যক্ষমতা মোটামুটি ঠিকঠাক পারফরম্যান্স করবে আশা করা যায় । অন্যান্য সিকিউরিটি সিস্টেম গুলো সঠিকভাবে শনাক্তকরণে হান্ডেড পার্সেন্ট সফলতা দিবে । নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে এই স্মার্টফোনটির সাহায্যে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে সর্বোচ্চ ফোরজি নেটওয়ার্ক উপভোগ করা যাবে । wifi-direct , ব্লুটুথ , এনএফসি এবং ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক গুলো বেশ ভালো কানেক্টিভিটি দিতে পারবে বলে আমি আশাবাদী ।
রিলিজ ডেট এবং মূল্য
21শে মার্চ , 2022 শাওমির হাত ধরে Redmi 10 C মডেলটি মার্কেটে চলে আসলো । স্পেসিফিকেশন এবং ফিচার বিবেচনায় মডেলটি গ্রাহকদের মন জয় করতে সক্ষম । দুইটি ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে আর সেগুলোর উপর ডিপেন্ড করে এই স্মার্টফোনটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে । 4/64 ভ্যারিয়েন্ট এর যে মডেলটি দেশীয় মার্কেটে রিলিজ হয়েছে সেটির মূল্য মাত্র 12,999 টাকা এবং 4/128 ভ্যারিয়েন্ট এর যে মডেলটি রয়েছে সেটির মূল্য 13,999 টাকা । এখন আপনি আপনার চাহিদা এবং বাজেটের উপর নির্ভর স্মার্টফোনটি ক্রয় করতে পারবেন । আপনি যদি 15 হাজার টাকার মধ্যে একটি ভালো মানের স্মার্টফোন খুঁজে থাকেন তাহলে শাওমির নতুন এই মোবাইলটি ইউজ করার সাজেশন দেওয়া হলো আমার পক্ষ থেকে । খুবই চমৎকার একটি ফিচার দেওয়া হয়েছে এখানে যাকে আমরা বাজেট বিবেচনায় সেরা বলতে পারি ।