গ্লোবাল মার্কেটে আমরা শাওমির রিলিজ করা স্মার্টফোনগুলোতে ফিচারস এবং স্পেসিফিকেশনের ভালো সমালোচনা দেখতে পাই । বাজেট সাপেক্ষ হওয়ার কারণে কাস্টমাররা খুব সহজেই তাদের মডেলগুলোকে ডিল করে নিতে পারে । শাওমির হাত ধরে নোট সিরিজ এর আরো একটি নতুন স্মার্টফোন মার্কেটে চলে আসলো Redmi Note 11 S । স্বল্প খরচে শাওমি আমাদের যে স্পেসিফিকেশন অফার করে থাকে অন্যান্য কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সেটা অনেকটা কম পরিলক্ষিত হয় । সম্পূর্ণ রিভিউ জুড়ে ডিভাইসটির সুবিধা এবং অসুবিধা গুলোকে আইডেন্টিফাই করে চিহ্নিত করা হলো যাতে ব্যবহার করার পূর্বে ভালো মন্দ দিকগুলো জানতে পারেন । এছাড়াও আলোচনা করা হবে ডিভাইসটির কোন কোন জায়গায় ইমপ্রুভমেন্ট আনা হয়েছে এবং কোন কোন জায়গায় ডেভেলপমেন্ট এর প্রয়োজন ছিল । তবে একটি বিষয় আমি সর্বপ্রথম আপনাদের জানিয়ে দেই মিডিয়াম রেঞ্জের মধ্যে ভালো পারফরর্মেন্স দেওয়া হয়ে থাকে বলে শাওমিকে বাজেট স্মার্টফোন বলা হয় ।
বডি ডেকোরেশন হাইলাইট
স্মার্টফোনটিতে লেটেস্ট ভার্সন এর বডি ডেকোরেশন দেওয়া হয়েছে যদিও চারদিক প্লাস্টিকের আবরণে তৈরি , যা দেখতে নজরকাড়া । যেহেতু প্লাস্টিকের তৈরি সেহেতু আমার মতে স্মার্টফোনটির ওজন বেশি নয় । তবে কোম্পানি থেকে বলা হয়েছে এই ডিভাইসটির ওজন 180 গ্রাম । আকর্ষণীয় কয়েকটি কালারের সাথে রিলিজ করা হয়েছে । আমরা যদি বডি ডেকোরেশন এর চারদিক নিয়ে আলোচনা করি তাহলে বডির পিছনের ডিজাইন প্রথমেই চোখে পড়বে । তবে আমরা যেন ব্যবহার করার সময় আবার ব্যাক কভার ইউজ করার কথা ভুলে না যাই । ডানপাশে ভলিউম আপ-ডাউন বাটন রয়েছে , আর তার নিচেই দেখা মিলবে পাওয়ার বাটনের । বডির নিচের দিকে থাকছে স্পিকার , ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট এর পাশাপাশি আমরা উপরেও আরো একটি স্পিকারের দেখা পাবো এটা খুবই ভালো খবর । 3.5 এম এম হেডফোন জ্যাক তো থাকছেই । তার সাথে আমরা নয়েজ ক্যালকুলেশন মাইকের দেখা পাবো । আরো একটি খুশির খবর হলো বামপাশে থাকছে সিম কার্ড ট্রে যেখানে ডাবল সিম কার্ড এর পাশাপাশি একটি মেমোরি কার্ড স্লট ব্যবহার করা যাবে ।
ব্যাটারি পাওয়ার
স্মার্টফোনটি দেখতে অনেকটা চিকন তার মানে এটা যে এই স্মার্টফোনটিতে বেশ বড়সড় ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়নি । যদি আমরা ব্যাটারি ক্যাপাসিটি নিয়ে কথা বলি তাহলে সর্বপ্রথম দেখা যাবে এখানে মোটামুটি মিডিয়াম পাওয়ারের একটি ব্যাটারি ক্যাপাসিটি দেওয়া হয়েছে যেখানে থাকছে 5,000 মিলিঅ্যাম্পিয়ার পাওয়ার । যদিও আমরা মিডিয়াম বাজেটের শাওমির প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোনেই সেম ব্যাটারি ব্যাকআপ দেখতে পেয়ে থাকি । ব্যাটারি ক্যাপাসিটির আরো একটি আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এখানে থাকছে 33 ওয়াট এর ফাস্ট চার্জিং সিস্টেম । যার মাধ্যমে এই স্মার্টফোনটিকে ফুল চার্জ করতে প্রায় 58 মিনিট সময় লাগতে পারে । এছাড়াও পাওয়ার ডেলিভারির সিস্টেম থাকছে । দৈনন্দিন কাজে আমরা যারা স্মার্টফোন একটু বেশি ব্যবহার করে থাকি , তাদের জন্য এই মডেলটি মার্কেটের সেরা হতে পারে । বাজেট হিসেবে ডিভাইসটির ব্যাটারি পারফরম্যান্স আমার কাছে ঠিকঠাক বলেই মনে হয়েছে ।
ক্যামেরা ফিচার
ক্যামেরা পারফরমেন্সের উপর সন্তুষ্ট হয়ে অনেকেই এই ডিভাইসটিকে ক্যামেরা ফোন বলে অভিহিত করেছে । তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই স্মার্টফোনটির ক্যামেরা পারফরমেন্সের বিস্তারিত । 4 টি ক্যামেরা সেন্সর অর্থাৎ কোয়াড ক্যামেরা সেটআপ দেওয়া হয়েছে । মেইন ক্যামেরা সেন্সরে 108 মেগাপিক্সেল দেওয়া হয়েছে যা আমরা মোটামুটি হাই কোয়ালিটির স্মার্টফোনেও দেখতে পাই । অপরদিকে যে বিষয়টি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে সেটি হল 8 মেগাপিক্সেল এর আল্ট্রা ওয়াইড সেন্সর । ক্যামেরা পারফরম্যান্সের কথা যদি বলি তাহলে আমি বলবো জাস্ট ওয়াও । এছাড়াও ম্যাক্রো এবং ডেপট সেন্সরে দুই-মেগাপিক্সেল করে মোট চারটি ক্যামেরা পারফরম্যান্স দেখার মত । এছাড়াও সেলফি তোলার জন্য ফ্রন্ট ক্যামেরায় 16 মেগাপিক্সেল ব্যবহার করা হয়েছে । ডিভাইসটিকে কেন ক্যামেরা ফোন বলা হয় এই বিষয়টি সবাই ক্লিয়ার ভাবে বুঝতে পেরেছেন । পারফরম্যান্সের কথা যদি বলি তাহলে মেইন ক্যামেরার পাশাপাশি অন্যান্য সেন্সরগুলো কালারফুল ইমেজ ধারণ করতে সক্ষম । ন্যাচারাল বিউটি , ব্লার ছাড়াও উন্নতমনের আরো অনেক ফিচার পাওয়া যাবে এখানে । 1080 পিক্সেলে ভিডিও ধারণ করার ক্ষমতা রয়েছে ।
প্রসেসর এবং অপারেটিং সিস্টেম
এই ডিভাইসটির প্রিভিয়াস যেই স্মার্টফোনটি রিলিজ করেছিল শাওমি সেখানে মিডিয়াটেক হেলিও G95 ব্যবহার করেছিল । রেডমি নোট 11 এস স্মার্টফোনটি যে আমরা কিছুটা আপডেট দেখতে পাই প্রসেসর এর ক্ষেত্রে । মিডিয়াটেক হেলিও G96 মডেল এর প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে শাওমির এই ডিভাইসটিতে । যা মূলত একটি অক্টা কোর প্রসেসর । অপারেটিং সিস্টেমকে রান করানো হয়েছে এন্ড্রয়েড ভার্সন 11 এর মাধ্যমে । লংটাইম ব্যবহার করার সময় তেমন কোন সমস্যা চোখে পড়বে না ইনশাআল্লাহ । মিডিয়াটেক হেলিও প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে যার মাধ্যমে আপনি চাইলে একসাথে অনেকগুলো হাই কোয়ালিটির অ্যাপস ব্যবহার করতে পারবেন । অ্যাপ এবং সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করার সময় চালু করা এবং বন্ধ করার সময় ক্লিয়ার পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে বলে আশা করি ।
ডিসপ্লে সাইজ
Redmi note 11 ডিভাইসটিতে এমোলেড টাইপের একটি ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে যার সাইজ 6.43 ইঞ্চি । শাওমির স্মার্টফোন গুলোতে একটা বড়সড় ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়ে থাকে । তবে এখানে যে সাইজের ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে এটি আমার কাছে পারফেক্ট বলেই মনে হয়েছে । এমোলেড এর সাথে সাধারনত ফুল এইচডি রেজুলেশন ব্যবহার করা হয়ে থাকে তবে এখানেও এর ভিন্ন কিছু ঘটেনি । ফুল এইচডি রেজুলেশন এর সাথে ডিসপ্লেতে পিক্সেল দেন্সিটি পাওয়া যাবে 409 পিপিআই । ডিসপ্লে যথেষ্ট কালারফুল তবে এখানে থাকছে না এইচডিআর । ডিসপ্লেটিকে প্রটেকশন করার জন্য কর্নিং গরিল্লা গ্লাস 3 এর আওতায় রাখা হয়েছে । 90 Hz রিফ্রেশ রেট এর সাথে ব্রাইটনেস এর পরিমান খুব ভালো পাওয়া যাবে । ডিসপ্লের মধ্যে চিন অথবা বেজেল লেস এর পরিমাণ স্বাভাবিক মনে হয়েছে । সব মিলিয়ে ডিসপ্লে পারফরমেন্সকে আমি বেটার পজিশনেই রাখবো । তবে আমার কাছে যে বিষয়টি মনে হয়েছে সেটি হলো এখানে প্রসেসর অনুযায়ী 120 Hz রিফ্রেশ রেট দেওয়াই যেতো ।
অনলাইন গেমিং
আমাদের মধ্যে প্রায় অনেকেই রয়েছে যারা একটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে অনলাইন গেম প্লে করতে চায় । আবারো প্রচুর পরিমাণে মানুষ পাওয়া যাবে যারা ইতিমধ্যেই স্মার্টফোনের মাধ্যমে অনলাইন গেম গুলো উপভোগ করে থাকে । শাওমির নতুন এই ডিভাইসটির মাধ্যমে যারা গেম প্লে করতে চাচ্ছেন ? তারা হয়তো একটি প্রশ্নবিদ্ধ , যে এই ডিভাইসটির মাধ্যমে কেমন গেমিং পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে ? গেমিং পারফরমেন্সের উপর আমার মন্তব্য আপনি যদি একজন লাইট ইউজার হয়ে থাকেন অর্থাৎ সারাদিনে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন ঘণ্টা অনলাইন গেম প্লে করেন তাদের জন্য এই মডেলটি বেস্ট পারফরমেন্স বয়ে আনতে পারবে । তবে যারা একটু হাই ইউজার তাদের জন্য এই মডেলটি দীর্ঘক্ষন ভালো পারফরমেন্স দিতে পারবে না । হয়তো দেখা যাবে আপনার মডেলটি গরম হয়ে গেছে বা হালকা হালকা ফ্রেম লক । অনলাইন গেমিং গ্রাফিক্সে ডিফল্ট পজিশনে যে গ্রাফিক্স ডিজাইন রয়েছে সেট এর মাধ্যমে আমি আশা করি ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে ফ্রী ফায়ার এবং পাবজির ক্ষেত্রে ।
মেমোরি পারফরম্যান্স
একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করার পূর্বে আমাদেরকে অবশ্যই সেই ডিভাইসটির মেমোরি পারফরম্যান্স সম্পর্কে জানা জরুরী । মেমোরি পারফরম্যান্সে যদি ত্রুটি থেকে তাহলে সেই ডিভাইস কিন্তু আমাদেরকে আশানুরূপ ফলাফল দিতে ব্যর্থ হবে । আমরা যারা রেগুলার স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকি তাদের কাছে হয়তো এই বিষয়টি সম্পূর্ণ পরিষ্কার । শাওমির নতুন এই ডিভাইসটিতে বিশেষ করে মেমোরি পারফরমেন্সে আমরা দুইটি ভেরিয়েন্ট লক্ষ করতে পারি । ইন্টার্নাল মেমোরি পারফরম্যান্সে থাকছে 6 এবং 8 জিবি রেম এবং এক্সটার্নাল মেমোরি পারফরম্যান্সে রয়েছে 64 এবং 128 জিবি রোম । এখন আপনি যদি ভালো পারফরর্মেন্স আশা করে থাকেন বা স্মার্টফোনের মাধ্যমে আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে থাকেন অথবা করতে চান তাহলে আপনি 8/128 জিবি মডেলটি চয়েজ করতে পারেন এবং সেটি আপনার জন্য ভালো ফলাফল বয়ে নিয়ে আনতে পারবে বলে আমার ধারণা ।
নেটওয়ার্কিং সিস্টেম এবং সিকিউরিটি
নেটওয়ার্কিং সিস্টেমের সর্বোচ্চ 4 জেনারেশন নেটওয়ার্ক স্পিড উপভোগ করতে পারব এই ডিভাইসটির মাধ্যমে । এছাড়া মোবাইল ডাটা , wifi-direct , ব্লুটুথ , হটস্পট ছাড়াও আরো অন্যান্য যে ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক গুলো রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে চমৎকার স্পিড উপভোগ করা যাবে । ডিভাইসটিতে নয়েজ মাইক দেওয়া হয়েছে যার কারণে আপনি স্মার্টফোনের মাধ্যমে যখন কারো সাথে কথা বলবেন তখন আপনার আশেপাশের সাউন্ড গুলোকে অপরপ্রান্তের প্রাপক শুনতে পাবে না অর্থাৎ পরিষ্কারভাবে আপনার কথা বোঝা যাবে । এই সিস্টেমটি আমরা এখন অনেক মডেলে দেখতে পাই । সিকিউরিটি সিস্টেমে উপস্থিত রয়েছে মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর । ভলিউম বাটনের নিচে যে পাওয়ার বাটন দেওয়া হয়েছে সেটিকে আমরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর হিসেবেও কাজে লাগাতে পারবো । সিকিউরিটি সিস্টেমের আরো অন্যান্য যে সুবিধাগুলো রয়েছে যেমন এক্সিলারোমিটার , কম্পাস , প্রক্সিমিটি ইত্যাদি সেগুলো ব্যবহার করার সু ব্যবস্থা রয়েছে ।
প্রাইস বা মূল্য
কাস্টমাররা সাধারণত তাদের বাজেটের উপর বিবেচনা করেই স্মার্টফোন ব্যবহার করার চিন্তাভাবনা চালায় । নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যে যদি তারা ভালো মানের পারফরমেন্স এবং ফিচার খুঁজে পায় তাহলে সেই ডিভাইসটির ব্যবহার করার জন্য আগ্রহ অনেকটা বেশি থাকে । এবার চলে আসি মূল কথায় এই ডিভাইসটি ব্যবহার করার জন্য আমাদেরকে কত টাকা গুনতে হবে ? গ্লোবাল মার্কেটে স্মার্টফোনটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে 6/128 জিবি 27,999 টাকা । 8/128 জিবি ভেরিয়েন্ট এর যে মডেলটি রয়েছে সেটি ব্যবহার করার জন্য খরচ করতে হবে 29,999 টাকা । এখন আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী আপনার পছন্দের মডেলটি মার্কেট থেকে কিনে নিতে পারেন । এছাড়াও আপনি যদি চান ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে স্মার্টফোনটি অর্ডার করতে তাহলে সেভাবেও পারবেন ।