কম-বেশি আমাদের সবারই একটি পরিচিত ব্রান্ড হল স্যামসাং , কারো কারো কাছে ফেভারেট ও বটে । তবে বর্তমান সময়ে স্যামসাং পৃথিবীজুড়ে একটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের অধিকারী । নিজেদের অবস্থানে থেকে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক মডেল মার্কেটে রিলিজ করার এক ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা তাঁদের কাছে রয়েছে । A সিরিজের কয়েকটি স্মার্টফোন মোটামুটি মিড রেঞ্জের মধ্যে রেখে সেখানে একটি অসাধারণ পারফরমেন্স দেওয়ার কারণে কাস্টমারদের এক বিশেষ আকর্ষণ স্যামসাং এর উপর । Samsung Galaxy A23 সিরিজের মধ্যে দিয়ে এক ভিন্ন রূপে স্যামসাং কাস্টমারদের মাঝে হাজির । এখন আমরা স্যামসাংয়ের A23 মডেলটির বিস্তারিত আলোচনা করবো । কাদের জন্য ডিভাইসটি প্লাস পয়েন্ট হিসেবে সফলতা দিবে এবং কাদের জন্য ভালো পারফরম্যান্স বয়ে আনতে পারবে না সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো ।
বডি লুক
স্যামসাং সব সময় আমাদেরকে বেস্ট লুকিং দেওয়ার চেষ্টা করে । বাই দ্যা ওয়ে এ সিরিজের বেশকিছু স্মার্টফোনেই আমরা বডি ডিজাইনে চমৎকার লুক দেখতে পেয়েছি । A23 সিরিজে স্যামসাং আমাদেরকে চমৎকার একটি বডি ডিজাইন উপহার দিয়েছে । আকার এবং আয়তনের দিক দিয়ে যথেষ্ট মানানসই এককথায় হাতে ব্যবহারযোগ্য । 195 গ্রাম ওজনের এই মোবাইলটি ব্যবহার করার সময় আপনার কোন অসুবিধা হবে বলে আপনি ধারণা করছি না । নজরকাড়ার পাশাপাশি বেশ শক্ত পোক্ত ভাবে বডি ডিজাইনকে রাখা হয়েছে তার কারণ হলো এখানে সামনে এবং পিছনে কর্নিং গরিলা গ্লাসের প্রোটেকশন দেওয়া হয়েছে । লাউড স্পিকার এর পাশাপাশি 3.5 এম এম অডিও জ্যাক এর অবস্থান নিচের দিকে । ভলিউম বাটনের সাথে ডানপাশে থাকছে পাওয়ার বাটন । বডি ফিনিশিংয়ে যা দেওয়া হয়েছে তাতে আমার মনে হয় না এখানে ধুলোবালি জমবে । সাদা , কালো এবং নীল রঙের এই সিরিজটি দেখতেও অনেক রঙিন ।
ডিসপ্লে কোয়ালিটি
এবার আমরা আলোচনা করবো স্মার্টফোনটির অন্যতম একটি সাইড নিয়ে আর সেটি হল ডিসপ্লে । A23 সিরিজটিতে 6.6 ইঞ্চি সাইজের একটি টিএফটি ফুল এইচডি রেজুলেশন এর ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে । যেখানে থাকছে 90Hz রিফ্রেশ রেট এর সাথে 83.0% বডির রেটিও রেট । এছাড়াও রয়েছে 400 পিক্সেল পিপিআই ডেনসিটি । এখন কথা হলো যেখানে প্রিভিয়াস ভার্সনেও স্যামসাং এমোলেড ব্যবহার করেছিল সেখানে এই সিরিজটিতে কেন টিএফটি ব্যবহার করলো ? এছাড়াও আমরা এই বাজেটে একটি এমোলেড ডিসপ্লের আশা করতেই পারি । আমার কাছে মনে হয়েছে তাদেরকে এক নতুন ভাবে প্রকাশ করার জন্য এই ডিসপ্লেটির ব্যবহার । ডিসপ্লেটির কার্যক্ষমতার কথা যদি বলি তাহলে অনেকটা যে পিছিয়ে এমনটা কিন্তু নয় । একটি বিষয় আমাকে কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছে সেটি আপনাদের সাথে শেয়ার করেই ফেলি , এই সময়ে এসেও স্যামসাং এখানে নচ ব্যবহার করেছে । এই বাজেটে স্মার্টফোনের কথা যদি আমরা শুনি তাহলে হয়তো পাঞ্চ হোলের ভাবনাটা চলে আসে । এই সিরিজটিতেও আমরা যদি পাঞ্চ হোলের দেখা পেতাম তাহলে হয়তো বিষয়টা অনেক ইন্টারেস্টিং হতো ।
হার্ডওয়্যার অথবা প্রসেসর
কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন 680 প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে যেটি মূলত 6 ন্যানোমিটারে তৈরি । আমরা এন্ট্রি বাজেটের প্রায় অনেকগুলো স্মার্টফোনেই এই প্রসেসর এর ব্যবহার দেখতে পেয়েছি । স্যামসাং এখানে একটি এন্ট্রি বাজেটের প্রসেসর ব্যবহার করেছে এটি স্যামসাং প্রেমীদের জন্য একটি বিভ্রান্তকর সংবাদ হতে পারে । তবে স্নাপড্রাগণ 680 পারফরমেন্সের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই আমরা যারা এভারেজ ইউজার রয়েছি তাদের জন্য এই প্রসেসরটি ভালো ব্যাকআপ দিতে পারবে তবে যাই হোক একটি ভালো মানের হার্ডওয়ার এর প্রয়োজন ছিল বটে । আপনি একই সাথে অনেকগুলো হাই কোয়ালিটির অ্যাপস অথবা সফটওয়্যার ইউজ করতে পারবেন তবে মাঝে মধ্যে কিছুটা লেক বা আটকে যাওয়া দেখা যেতে পারে । গুগোল এর লেটেস্ট ভার্সন অ্যান্ড্রয়েড 12 এর মধ্য দিয়ে স্যামসাং গ্যালাক্সি A23 অনেকটা এগিয়ে অপারেটিং সিস্টেমে ।
ব্যাটারি পাওয়ার
ব্যাটারি ব্যাকআপে স্যামসাং এর অবস্থান একধাপ এগিয়ে অনেক আগে থেকেই । A23 মডেলটিতে দেখা মিলবে 5000 মিলি এম্পিয়ার পাওয়ার এর ব্যাটারি ব্যাকআপ । ডিভাইসটির বডি কিন্তু অনেকটা চওড়া তার কারণ হলো এখানে বেশ বড়সড় ব্যাটারি ব্যবহার করা হয় নি । স্মার্টফোনটির ব্যাটারির সাথে 25 ওয়াট এর ফাস্ট চার্জিং একটি চার্জার দেওয়া হয়েছে । এবার যদি আমরা ব্যাকআপের কথা বলি তাহলে বলবো যারা এভারেজ ইউজার রয়েছি তারা এটিকে একদিন ব্যবহার করতে পারবেন । তাছাড়া আপনি যদি নরমাল বা লাইট ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে একদিনেরও বেশি ব্যবহার করতে পারবেন । ইউটিউব স্ট্রিমিং , ছবি তোলা বা মেসেজ করা ছাড়াও অন্যান্য যে কার্যক্রমগুলো রয়েছে সেগুলো উপভোগ করার সময় ব্যাটারির উপর তেমন কোনো চাপ লক্ষ করা যাবে না ।
মেমোরি পারফরম্যান্স
স্যামসাংয়ের প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোনে আমরা বাজেট অনুযায়ী মেমোরি পারফরম্যান্স দিতে দেখেছি । মেমোরি পারফরম্যান্সের জন্য গ্রাহকদের স্যামসাং এর উপর কোন মনোভাব প্রকাশ করতে দেখা হয়নি । A23 মডেলটিতে একটি ভেরিয়েন্ট এর মেমোরি পারফরম্যান্স দেওয়া হয়েছে এবং আমার কাছে সেটি খুবই ভালো লেগেছে । অভ্যন্তরীণ স্টোরেজে বা রেম হিসেবে পাওয়া যাবে 6 জিবি এবং এক্সটারনাল স্টোরেজ হিসেবে থাকছে 128 জিবি । স্যামসাং এক্সটার্নাল মেমোরি পারফরম্যান্সে একটি চমক দেখিয়ে দিয়েছে আর সেটি হলো এখানে আপনি সর্বোচ্চ 1 টেরাবাইট পর্যন্ত রোম বাড়িয়ে ব্যবহার করতে পারবেন । আমার মনে হয়না ওয়ান টেরাবাইটের প্রয়োজন বর্তমান সময়ে তার পরেও আপনি যদি ব্যবহার করতে চান সেটার সুযোগ কিন্তু এখানে স্যামসাং দিয়ে দিয়েছে । সিম কার্ড এর সাথেই একটি মাইক্রোএসডিএক্সসি মেমোরি কার্ড স্লট দেওয়া হয়েছে ।
ক্যামেরা ফিচারস
ক্যামেরা ডিজেইনে আমরা একটু ব্যতিক্রম ডিজাইন লক্ষ করতে পারবো । প্রাইমারি ক্যামেরা গুলোকে একটি বক্সের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে । যা দেখতে খুবই নজরনন্দিত । প্রাইমারি ক্যামেরায় আমরা চারটি ক্যামেরার দেখা পেয়েছি যার মেইন সেন্সরে থাকছে 50 মেগাপিক্সেল এর মত একটি ক্যামেরা ফাংশন । এছাড়াও এখানে একটি আল্ট্রা ওয়াইড সেন্সর দেওয়া হয়েছে যেখানে থাকছে 5 মেগাপিক্সেল । বাকি দুইটি সেন্সর রয়েছে ম্যাক্রো এবং ডেপট শুটার দুই-মেগাপিক্সেল করে । মেইন ক্যামেরা সেন্সর এর পারফরম্যান্সের কথা যদি বলি তাহলে আমরা এখানে এভারেজ পারফরম্যান্স পেয়ে যাবো । আল্ট্রা ওয়াইড সেন্সরের কথা বলতে গেলে আমি এখানে 10 মেগাপিক্সেল আশা করেছিলাম বাট স্যামসাং 5 মেগাপিক্সেল দিয়েছে । স্যামসাং এখানে কোয়ালকম স্নাপড্রাগণ চিপসেট দিয়েছে যার কারণে আমরা এটা বলতে পারি যে লো লাইটিং পজিশনে পারফরমেন্সে কিছুটা ঘাটতি খুঁজে পাবো । সেলফি তোলার জন্য সামনের ক্যামেরায় 8 মেগাপিক্সেল দেওয়া হয়েছে যেটার মাধ্যমে ভালো পারফরম্যান্স আশা করা যায় ।
গেমিং পারফরম্যান্স
সরাসরি অনলাইন গেমিং এবং গেমিং স্ট্রিমিং করার জন্য আমরা যদি স্যামসাংয়ের এই ডিভাইসটিকে টার্গেট করে থাকি তাহলে সেটি আমাদের ভুল সিদ্ধান্তের মধ্যে থাকতে পারে । তার কারণ হলো এই ডিভাইসটি দিরেক্ট অনলাইন গেমিং মানসম্মত স্মার্টফোন নয় । তার কারণ হলো এর চিপসেট । আমরা অনেকেই আছি যে স্যামসাং-এর একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করে সেটির মাধ্যমে অনলাইন গেমস উপভোগ করবো তার জন্য আমার কাছে এই ডিভাইসটি পারফেক্ট বলে মনে হয়নি । হ্যাঁ তবে আপনি যদি টুকটাক গেম প্লে করতে চান অথবা লাইট ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে এই ডিভাইসটি আপনাকে ভালো ব্যাকআপ দিতে পারবে ইনশাল্লাহ । তো আমরা বুঝতেই পারছি যারা প্রফেশনালভাবে গেমপ্লে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাদের জন্য এই মডেলটি পারফরম্যান্স কেমন দিবে ।
কানেক্টিভিটি অ্যান্ড সিকিউরিটি
নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে আমরা কিন্তু খুবই ভালো পারফরম্যান্স দেখতে পাবো বলে ধারণা করছি । সর্বোপরি আমরা এখানে ডুয়েল সিম কানেক্টেড রেখে 4g নেটওয়ার্ক উপভোগ করতে পারবো । হাই কোয়লিটি মানের সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করার সময় তেমন কেন সমস্যা চোখে পড়বে না নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে । তারবিহীন যে নেটওয়ার্কগুলো রয়েছে যেমন ব্লুটুথ , ওয়াইফাই , হটস্পট সেগুলো ব্যবহারের সময় আমরা বেশ ভালো একটি পারফরম্যান্স দেখতে পারবো । এছাড়াও ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট এবং ওটিজি ক্যাবলের একটি ভালো সন্ধান মিলবে । এবার কথা বলা যাক ডিভাইসটির সিকিউরিটি সিস্টেম নিয়ে । স্যামসাং এখানে অফার করেছে সাইট মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর । এখানে যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি দেওয়া হয়েছে সেটির কার্যক্ষমতা অনেকটাই ভালো বলে আমার কাছে মনে হয়েছে ।
মূল্য বা প্রাইস
স্যামসাং দেশের মার্কেটে এ সিরিজের বেশকিছু স্মার্টফোন রিলিজ করেছে আর সেগুলোর মূল্য প্রায় সেম সেম । স্যামসাং গ্যালাক্সি a23 স্মার্টফোনটির মূল্য মার্কেটে নির্ধারণ করা হয়েছে 25,500 টাকা । মিড রেঞ্জের পারফরম্যান্স হিসেবে মোবাইল ফোন থেকে আমরা বেশ কিছু জায়গায় আপডেট দেখতে পেয়েছি আবার বেশ কিছু জায়গায় কিছুটা ডাউন চোখে পড়েছে । তবে নেক্সট মডেল গুলোতে স্যামসাং আরো বেটার কিছু নিয়ে আসবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে ধারণা করছি । এই ডিভাইসটির ক্ষেত্রে আমরা যে বিষয়ে আপডেট চেয়েছিলাম সেটা হচ্ছে এর চিপসেট । বাকি সব জায়গায় আমরা মোটামুটি ভালই পারফরম্যান্সের ছোঁয়া পেয়েছি । ক্যামেরা সেন্সরে আমরা যদি আল্ট্রা ওয়াইড ফাংশনে 10 মেগাপিক্সেল পেতাম তাহলে হয়তো বিষয়টি অনেকটাই জমজমাট হতো ।