এন্ড্রয়েড জগতে ফ্লাগশিপ স্মার্টফোন গুলোর মধ্যে স্যামসাংয়ের একটি বিশাল জনপ্রিয়তা রয়েছে । আর সেটি যদি স্যামসাং এর এস সিরিজ হয় তাহলে বিষয়টি কতটা জমজমাট বুঝতেই পারছেন । এস সিরিজের মধ্য দিয়ে স্যামসাং কয়েকটি ফ্লাগশিপ মডেল মার্কেটে রিলিজ করেছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি লেটেস্ট ভার্সন হলো Samsung Galaxy S22 plus । আমাদের মধ্যে যারা একটি ফ্লাগশিপ স্মার্টফোন ব্যবহার করার অপেক্ষায় ছিলেন তাদের জন্য এই মডেলটি কেমন হতে পারে ? সে বিষয়ের পাশাপাশি সম্পূর্ণ রিভিউতে স্মার্টফোনটির সুবিধা এবং অসুবিধা তুলে ধরা হলো । ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন গুলোতে সাধারনত মিডিয়াম রেঞ্জের বাজেট থেকে কিছুটা বেশি আপডেট দেখা যায় । এখানে আমরা নতুন কি কি আপডেটের দেখা পেয়েছি এবং কোম্পানিটি গ্রাহকদেরকে কি কি বাড়তি সুবিধা দিয়েছে এবার সেই বিষয়গুলো জানার পালা ।
সিকিউরিটি সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক
বডি ডিজাইন
স্মার্টফোনটিকে হাতে নেওয়ার সাথে সাথেই আপনি একটি প্রিমিয়াম ফিল অনুভব করতে পারবেন তার কারণ হলো ডিভাইসটির সামনে এবং পিছনে কর্নিং গরিল্লা গ্লাস ভিকটাস প্লাস এর আবরণে তৈরি । এছাড়াও এখানে যে ফ্রেমটা রয়েছে সেটিও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি । এর পাশাপাশি যে ক্যামেরা মডিউল রয়েছে সেটিও কিন্তু মূলত অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি , সো বুঝতেই পারছেন বডি ডিজাইনে চমকপ্রদ এক ধামাকা রয়েছে । ভলিউম বাটন বা পাওয়ার বাটনের পজিশন ঠিকঠাক বলেই মনে হয়েছে । ডিভাইসটির নিচের দিকে রয়েছে ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট । বডি ডেকোরেশন এর যে পারফরম্যান্সের কথা না বললেই নয় সেটি হল এখানে রাখা হয়েছে আইপি 68 ওয়াটারপ্রুফ । পানিরোধক যে সিস্টেমটি রাখা হয়েছে সেটি মূলত আমরা ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস গুলোতেই দেখে থাকি । 195 গ্রাম ওজনের এই ডিভাইসটিকে আমরা মার্কেটে বেশ কয়েকটি কালারে পেয়ে যাব তার মধ্যে ব্লাক , গ্রীন এবং হোয়াইট কালারের স্মার্টফোনগুলো আমার কাছে পার্সোনালি ভালো লেগেছে ।
ব্যাটারি পাওয়ার
non-removable 4500 মিলি এম্পিয়ার পাওয়ার এর একটি ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে স্যামসাং গ্যালাক্সি S22 প্লাস স্মার্টফোনটিতে । স্মার্টফোনটির ব্যাটারি পারফরমেন্সে আমরা বেশ আপডেট লক্ষ করেছি । 45 ওয়াটের একটি ফাস্ট চার্জিং ক্যাবল রয়েছে যদিও চার্জারটি আপনাকে এক্সট্রা কিনে নিতে হবে অর্থাৎ বক্সে চার্জারের অনুপস্থিতি রয়েছে । এছাড়াও চার্জিং সিস্টেমে যে 2 টি সিস্টেম রাখা হয়েছে সেগুলোর সাথে আমরা প্রায় অনেকেই পরিচিত নই । ফাস্ট হচ্ছে এখানে ওয়্যারলেস চার্জিং সিস্টেম রাখা হয়েছে অর্থাৎ আপনি তারবিহীন মাধ্যমেও স্মার্টফোনটিকে চার্জ করতে পারবেন । দ্বিতীয়ত যে সিস্টেমটি রয়েছে এটি আমরা কম স্মার্টফোনেই দেখতে পাই সেটি হল রিভার্স চার্জিং সিস্টেম অর্থাৎ আপনি এই ডিভাইসটির মাধ্যমে অন্য ডিভাইসেও চার্জিং শেয়ার করতে পারবেন । সিস্টেম দুইটি জাস্ট অ্যামেজিং , আর যার কারণে ডিভাইসটিকে ফ্লাগশিপ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে । আপনি যত বড় হাই ইউজার হয়ে থাকেন না কেন স্মার্টফোনটির মাধ্যমে সম্পূর্ণ একদিন ব্যাটারি ব্যাকআপ পেয়ে যাবেন ।
প্রসেসর অ্যান্ড অপারেটিং সিস্টেম
স্মার্টফোনটিতে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন 8 Gen প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে যেটি মূলত চার ন্যানোমিটারের তৈরি । ডিভাইসটিতে এতটাই পাওয়রফুল একটি প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে আপনি যখন দীর্ঘক্ষন স্মার্টফোনটি ব্যবহার করবেন তখন ডিভাইসটি গরম হয়ে যাবে । দীর্ঘক্ষন ব্যবহার করার ফলে সামনে যে ক্যামেরা কাটাউট রয়েছে সেখান দিয়ে কিছুটা উষ্ণতা ফিল করা যাবে বলে ধারণা । কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন বলে কথা এখানে হেব্বি পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় । আপনি চাইলে ব্যবহার করতে পারবেন একসাথে অনেকগুলো হাই কোয়ালিটির অ্যাপস । অপারেটিং সিস্টেমে আমরা দেখা পাবো এন্ড্রয়েড ভার্সন 12 এর । যেটি মূলত বর্তমান সময়ের গুগলের সবচেয়ে লেটেস্ট ভার্সন । কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন মূলত অক্টা কোর প্রসেসর হওয়ার কারণে আমরা বাড়তি কিছু সুবিধা পাবো । স্মার্টফোনটির প্রসেসর এর মাধ্যমে আমরা যারা ভালো কিছু আশা করেছিলাম তারা হয়তো ঠকে নি এটা জোর দিয়ে বলা যায় ।
ডিসপ্লে সেকশন
6.6 ইঞ্চি সাইজের একটি এমোলেড ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে । আকারের দিক দিয়ে বেশ বড় বা ছোট না হলেও দেখতে অনেক নজরকাড়া । ডিসপ্লের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার পিছনে চিন বা বেজেলের অনেকখানি অবদান রয়েছে । নিচের দিকে বেজেল-লেস এর পরিমাণ অনেক কম । আমার কাছে মনে হয়েছে যা রয়েছে সম্পূর্ণ যেন ডিসপ্লে । ডায়নামিক এমোলেড টাচস্ক্রিন ব্যবহার করার কারণে টার্চ সেন্সিভিটি ভালো পাওয়া যাবে । 1750 নিটস এর একটি হাই ব্রাইটনেস পাওয়ার রয়েছে ডিসপ্লেতে । সানলাইটে আমাদেরকে বিপদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না । তার পরেও যদি আলাদা কিছু ব্রাইটনেস এর প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলে স্যামসাং একটি সেটিং রেখেছে যেটিকে অন করে আপনি ব্রাইটনেস বৃদ্ধি করে নিতে পারবেন । 120 Hz রিফ্রেশ রেট এর সাথে থাকছে ফুল এইচডি রেজুলেশন । এর সাথে সাথেই 393 পিপিআই পিক্সেল দেন্সিটি রয়েছে । ডিসপ্লে পারফরমেন্সে কোন অংশে কম নয় । ডিসপ্লেটিকে কর্নিং গরিল্লা গ্লাস ভিকটাস প্লাস দিয়ে প্রটেকশন করে রাখা হয়েছে ।
ক্যামেরা ফিচার
স্মার্টফোনটির আকর্ষণীয় দিকগুলোর মধ্যে ক্যামেরা পারফরম্যান্স অন্যতম একটি দিক । স্যামসাং তার মডেলগুলোতে একটু ভালো মানের ক্যামেরা ফিচার দেওয়ার চেষ্টা করে সব সময় । এই স্মার্টফোনটির ক্ষেত্রে তারা কেমন ক্যামেরা পারফরম্যান্স প্রভাইড করেছে সেটা একবার দেখে নিই । স্মার্টফোনটির ক্যামেরা ডিজাইনের দিকে তাকালে চোখ ও মন দুটোই জুড়িয়ে যাবে । প্রাইমারি ক্যামেরা পারফরম্যান্সে থাকছে 50 মেগাপিক্সেল এর মেইন সেন্সর । টেলি ফটো সেন্সরে 10 মেগাপিক্সেল রয়েছে যেখানে 3X অপটিক্যাল জুম এবং 30X ডিজিটাল জুম এর সুবিধা পাওয়া যাবে । যে সেন্সরটিকে স্যামসাং তাদের প্রতিটা মডেলেই দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে সেটি হলো আল্ট্রা ওয়াইড সেন্সর । 12 মেগাপিক্সেল এর একটি আল্ট্রা ওয়াইড স্যামসাং দেওয়া হয়েছে , যেটা আমাদের জন্য একটি সুখবর । সেলফি তোলার জন্য সামনের ক্যামেরায় 10 মেগাপিক্সেল রাখা হয়েছে । 8k মোডে ভিডিও ধারণ করার ক্ষমতা এই ডিভাইসটির রয়েছে । নাইট মোডে আমরা বেশ ভালো আশানুরূপ ফলাফল পেয়ে যাব । প্রাইমারি সেন্সরে ডুয়েল পিক্সেল পিডিএফ ফিচার পাওয়া যাবে যেটি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে ।
মেমোরি পারফরম্যান্স
Samsung galaxy s22 plus স্মার্টফোনটির মেমোরি পারফরম্যান্স এর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পারবো এখানে একটি হিউজ পরিমাণ অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ । ডিভাইসটিতে আমরা ফাস্তেস্ট স্পীড দেখতে পেয়েছি বেশ কয়েকটি জায়গায় তার জন্য মেমোরি পারফরম্যান্স এর একটি বিশাল অবদান রয়েছে । আমরা যারা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেছি বা করবো তাদের জন্য মেমোরি পারফরম্যান্স জেনে নেওয়া জরুরী একটি বিষয় । ইন্টার্নাল মেমোরি পারফরম্যান্স বা রেম হিসেবে পাওয়া যাবে 8 জিবি এবং ইন্টার্নাল মেমোরি থাকছে 256 জিবি । একটি ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন হিসেবে ডিভাইসটির মেমোরি পারফরম্যান্সের যেমন হওয়ার প্রয়োজন ছিল আমরা ঠিক তেমনটা পেয়েছি কিনা সেটা ডিপেন্ড করবে পারফরমেন্সের উপর তবে যা দেওয়া হয়েছে সেটা যথেষ্ট মানানসই । যেহেতু ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন সেহেতো বলা যায় মেমোরি পারফরম্যান্সে ওটিজি ক্যাবলের সুবিধা থাকছে ।
গেমিং পারফরম্যান্স
সাধারণত যারা ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন গুলো ব্যবহার করে থাকে তারা টার্গেট হিসেবে অনলাইন গেমিং পারফরমেন্সকে খুব কম গুরুত্ব দিয়ে থাকে । তার কারণ হলো শুধুমাত্র অনলাইন গেমিং পারফরম্যান্সের জন্য একটি ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন ক্রয় করার মনোভাব অনেক কম মানুষের মধ্যেই জাগে । তবে যারা ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন ব্যবহারের পাশাপাশি অনলাইন গেমিং করতে চান তাদের জন্য এই ডিভাইসটি তেমন পারফেক্ট নয় এমনটা কিন্তু বলা যাবে না । এখানে একটি পাওয়ারফুল প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে এর পাশাপাশি মেমোরি পারফরম্যান্স আমরা ভালো দেখতে পেয়েছি সুতরাং বলা যেতে পারে গেমিং পারফরম্যান্সের জন্য মোটামুটি মার্কেট উপযুক্ত । অনলাইন গেম গুলো খেলার সময় আমরা একটি অসুবিধা চোখে দেখতে পাবো আর সেটি হলো দীর্ঘ সময় গেম প্লে করার ফলে ডিভাইসটি গরম হয়ে যাওয়া । অনলাইন গেম খেলার সময় হাই কোয়ালিটি গ্রাফিক্স ডিজাইনের দেখা মিলবে ।
সিকিউরিটি সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক
নিরাপত্তার জন্য আমরা প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোনেই এখন সিকিউরিটি সিস্টেমের দেখা পেয়ে যাই । ফ্লাগশিপ স্মার্টফোনের সিকিউরিটি সিস্টেম বলে কথা সেখানে অনেক আপডেট থাকবে এটাই স্বাভাবিক । ডিভাইসটিতে যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর দেওয়া হয়েছে সেটার কার্যকর ক্ষমতা ফাস্ট এন্ড একুরেট । এছাড়াও আরো অন্যান্য সিস্টেম গুলো রয়েছে সেগুলোর প্রতিটা ভালো পারফরর্মেন্স করতে পারবে বলে আশাবাদী । নেটওয়ার্কিং সিস্টেমের কথা যদি বলি তাহলে এখানে তারবিহীন যে নেটওয়ার্ক রয়েছে সেগুলোর উপস্থিতি বেশ ভালো এবং নেটওয়ার্কিং সিস্টেম পানির মতো স্পিড পাওয়া যাবে । ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ ফ্লাগশিপটিতে ডুয়েল সিম কার্ড ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে । ওয়াইফাই নেটওয়ার্কিং সিস্টেম , হটস্পট , ব্লুটুথ , ওটিজি , জিপিএস সব মিলিয়ে একটা বেস্ট পারফরমেন্স অফার করা হয়েছে ।
প্রাইস বা মূল্য
ফ্লাগশিপ স্মার্টফোনটির পারফরম্যান্স দেখে আমাদের অনেকের মধ্যেই স্মার্টফোনটির প্রাইস সম্পর্কে আন্দাজ চলে এসেছে । Samsung galaxy s22 plus স্মার্টফোনটি যদি আপনি অফিশিয়াল ভাবে ব্যবহার করতে চান তাহলে আপনাকে পকেট থেকে গুনতে হবে 125,999 টাকা । যেহেতু মার্কেটে ডিভাইসটি লেটেস্ট ভার্সন সেতু বলা যায় এটিকে বর্তমান সময়ে ব্যবহার করতে হলে কিছু টাকা বেশি গুনতে হবে । তবে আপনি যদি কিছু দিন সময় নেন তাহলে এর দাম অনেকটা কমবে বলে আশা করা যায় মার্কেটে । স্যামসাংকে আমরা মিডিয়াম রেঞ্জের পাশাপাশি হাই কোয়ালিটি স্মার্টফোন রিলিজ করতে দেখে থাকি । আর সেগুলোর মধ্যে এই ডিভাইসটি আমার কাছে অন্যতম মনে হয়েছে । স্মার্টফোনটির পারফরম্যান্স সম্পর্কে এবং এখানে কি কি সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে সেগুলো জেনে-বুঝে ব্যবহার করার জন্য এই রিভিউটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আশা করি ।