টেকনোলজি অথবা প্রযুক্তির উন্নতির দিক দিয়ে ওয়ালটন একটি অতি সুপরিচিত ব্রান্ড । ল্যাপটপের মতো আধুনিক প্রযুক্তি মার্কেটে রিলিজের মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে এক ধাপ এগিয়ে রেখেছে কোম্পানিটি । ওয়ালটনের একটি দারুন পারফরমেন্স এর ল্যাপটপ আমরা মার্কেটে দেখতে পেয়েছি । ওয়ালটন কোম্পানির দুর্ধর্ষ সেই ল্যাপটপটির মডেল হলো Walton Tamarind MX3 Pro । ল্যাপটপটি মার্কেটে রিলিজ করার পাশাপাশি ওয়ালটন নিজেদেরকে পুনরায় শক্তভাবে রিপ্রেজেন্ট করতে পেরেছে । ল্যাপটপটির ফুল স্পেসিফিকেশন এবং প্রাইস ডিটেইল সম্পর্কে রিভিউতে আলোচনা করা হলো । রিভিউটির মাধ্যমে আপনারা ল্যাপটপটির সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং অতঃপর একটি ডিসিশন নিতে পারবেন যে ল্যাপটপটি আপনার জন্য কতটা ইউসফুল । তো এখন কথা না বাড়িয়ে সরাসরি আমরা ল্যাপটপটির স্পেসিফিকেশনে চলে যাই ।
বিল্ড কোয়ালিটি এন্ড ডিজাইন
অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি ফুল বডি বেশ শক্তপোক্ত এবং দেখতেও নজর করা । ল্যাপটপের গঠন প্রকৃতি নিয়ে আসলে ব্যাখ্যা করার মতো তেমন কিছু নেই এটা আমাদের সকলেরই কম বেশি জানা । ল্যাপটপটির ওজন ১ কেজি ৪০০ গ্রাম হওয়ার কারণে এটিকে হ্যান্ডেল করাটা কিছুটা কষ্টসাধ্য বলে মনে হতে পারে । এছাড়াও বডিতে ইউএসবি পোর্ট এবং মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট এর অবস্থান সঠিক স্থানেই বলে মনে হয়েছে আমার কাছে । Walton Tamarind MX3 pro মডেলটি মূলত অসিয়ান ব্লু কালারের রয়েছে । আপনি যখন একটি মনোরম ওয়েদারে ল্যাপটপটি ব্যবহার করবেন তখন কিন্তু সেটি আপনাকে বেশ চমৎকার সুট করবে বলে আমার ধারণা । সাউন্ড সিস্টেমে আমরা স্টেরিও স্পিকারের দেখা পেয়েছি যেটা আসলে অবাক হওয়ার মতো কিছু নয় । এবার আমরা আলোচনা করবো ল্যাপটপটির কিবোর্ড সম্পর্কে । কিবোর্ডে আমরা বিভিন্ন ধরনের লে-আউট ব্যবহার করতে পারবো এবং এখানে বিভিন্ন ধরনের ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করার সুবিধা রয়েছে ।
ডিসপ্লে ফিচার
ওয়ালটন তাদের Tamarind Mx3 pro মডেলটিতে একটি খুবই আকর্ষণীয় মানের ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে যেটিকে আমরা বাজেট হিসেবে মোটামুটি ভালো বলতে পারি । ১৪ ইঞ্চি বা ৩৫.৫৬ সেন্টিমিটার সাইজের একটি এফএইচডি ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে । ডিসপ্লেটির রেজুলেশনে আমরা দেখতে পেয়েছি 1080 × 1920 পিক্সেল । ব্রাইটনেস এর দিকে আমরা যদি একটু নজর দেই তাহলে দেখতে পাবো সেখানে ৩০০ নিটস দেওয়া হয়েছে যেটিকে আমরা ইনডোরে ভালো দেখতে পারলেও আউটডোরে কিছুটা ঝামেলা হতে পারে অনেকের কাছে । কালারফুলের কথা যদি আমরা বলি তাহলে ডিসপ্লেতে কাজ করার সময় বেশ কিছু জায়গায় আমরা কালারফুলের দেখা পাবো । বাজেটের মধ্যে দাঁড়িয়ে স্মার্টফোনটির ডিসপ্লে গ্রাহকদেরকে বেস্ট পারফরম্যান্স দিতে পারবে বলে আমার ধারণা রয়েছে । ডিসপ্লেটির যে সাইজ দেওয়া হয়েছে সেটা মূলত অনেকটা কমফরটেবল এবং ব্যবহারযোগ্য ।
ব্যাটারি লাইফ টাইম
ল্যাপটপটির অন্যতম একটি আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এর ব্যাটারি লাইফ টাইম । কোম্পানিটির দেওয়া অ্যাডভার্টাইজমেন্ট থেকে আমরা জানতে পেরেছি এখানে 4900 কিলোওয়াট এর একটি ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে । Lithium- Lon টাইপের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে যেটা আমরা মূলত আমরা বেশিরভাগ ল্যাপটপে ব্যবহার করতে দেখে থাকি । এখানে যে ডিসি আউটপুট রয়েছে সেখানে দেওয়া হয়েছে ১৯ ভোল্ট । এছাড়াও ল্যাপটপটি চার্জ দেওয়ার জন্য 65 ওয়াটের একটি চার্জার রাখা হয়েছে । ল্যাপটপটির অ্যাডভার্টাইজমেন্ট থেকে আমরা জানতে পেরেছি এর ব্যাটারি লাইফ পাওয়া যাবে 480 মিনিট । মোটামুটি ভালো ব্যবহারেই আমরা একটি ভালো ব্যাটারি লাইফ ব্যাকআপ পেয়ে যাবো ল্যাপটপটিতে । যদিও বাজেট হিসেবে আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে সেটা হলো এখানে আরো কিছুটা ব্যাটারি লাইফটাইম বাড়িয়ে দিলে হয়তো ভালো হতো ।
প্রসেসর হাইলাইটস
Walton Tamarind MX3 pro ডেক্সটপ বা ল্যাপটপটিতে Intel Core i3 প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে । প্রসেসরের কয়েকটি জেনারেশন রয়েছে যেগুলো আমরা অনেকেই হয়তো জানি আবার অনেকেই জানিনা । জেনারেশনগুলো হল কোর , ডুয়াল কোর এবং Octa-Core । এই ল্যাপটপটিতে আমরা ডুয়াল কোর প্রসেসরের দেখা পেয়েছি । অপরদিকে ল্যাপটপটির অপারেটিং সিস্টেমে আমরা উইন্ডোজ এলিভেন জেনারেশন এর ব্যবহার দেখেছি । এটাকে আমরা একটি ভালো দিক বলতে পারি । Core i3 প্রসেসর সম্পর্কে আমরা এর পূর্বেও বেশ কিছু ল্যাপটপে ভালো পারফরম্যান্স দেখতে পেয়েছি । তো এখন আপনার মনে একটি প্রশ্ন জাগতে পারে ? আর সেটি হলো এই প্রসেসরটির মাধ্যমে আপনারা কি কি সুবিধা পেতে পারেন ? নরমালি শর্ট ভিডিও এডিটিং , অনলাইন গেমিং সাইট এন্ড ডেটা ট্রান্সফার কাজগুলো খুব ভালোভাবে করা যাবে ।
মেমোরি পারফরমেন্স
স্টোরেজের কথা যদি আমরা বলি তাহলে এখানে 8 জিবি রেম এবং ৫১২ জিবি রোম এর একটি দারুন কম্বিনেশন দেখতে পারবো । এটা আমরা হয়তো অনেকেই জানি মেমোরি পারফরম্যান্স একটু বেশি হলে ল্যাপটপ বার ডেক্সটপ গুলো ব্যবহার করতে অনেকটাই সুবিধা পাওয়া যায় । তবে আপনার যদি আরও বেশি স্টোরেজের প্রয়োজন হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনি একটি পেনড্রাইভ ইউস করতে পারেন । ল্যাপটপে যে ram দেওয়া হয়েছে সেটি আমার কাছে পারফেক্ট বলেই মনে হয়েছে তবে রোম কিছুটা বাড়িয়ে দিতে পারতো তবে কোম্পানি এখানে দেয়নি কিছু করারও নেই । তবে আমি এটা আশা করি ল্যাপটপটি দিয়ে ব্রাউজিং অথবা ব্যবহার করার সময় মেমোরি পারফরম্যান্স জনিত কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না । সব মিলিয়ে একটি গ্রেট ফিচার এখানে দিয়েছে ওয়ালটন ।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য ল্যাপটপটির পারফরম্যান্স
আউটসোর্সিং অথবা ফ্রিল্যান্সিং এর কাজগুলোর সমাহার এখন পৃথিবী জুড়েই বিস্তৃত । স্টুডেন্টদের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষ রয়েছে যারা এখন জীবিকা নির্বাহের জন্য এই কাজগুলোকে বেছে নিয়ে থাকে । ফ্রিল্যান্সিং পেশার এক একটি কাজের সাথে একেক জন আলাদা ভাবে জড়িত । এই ল্যাপটপটির মাধ্যমে আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাহলে আপনি কিন্তু ঠকবেন না । ফটো অথবা ভিডিও এডিটিং থেকে শুরু করে গ্রাফিক্স ডিজাইন বা ওয়ার্ডপ্রেসের যে কাজগুলো রয়েছে সেগুলোর প্রতিটি সাইড আমরা এখানে আলাদাভাবে বেশ ভালো ফিচার পাব । ফ্রিল্যান্সিং এর অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো আমরা স্মার্টফোনের মাধ্যমে ততটা ভালো পারফরমেন্স পাই না বা করতে পারি না সেগুলো কিন্তু আমরা ওয়ালটনের এই ল্যাপটপটি দিয়ে খুব সহজেই করতে পারবো । ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে শুরু করে ফ্রিল্যান্সিংয়ের যে কাজটি আপনি করতে চাচ্ছেন ল্যাপটপটির মাধ্যমে সেই কাজটি খুব অনায়াসেই করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ ।
অনলাইন গেমিং পারফরমেন্স
অনলাইন গেমিং পারফরম্যান্সে এই ল্যাপটপটি কেমন ফিচার দিতে সক্ষম এটি জানার কৌতুহল অনেকের মধ্যেই থেকে যায় । তার কারণ হলো অনলাইন গেমিং মার্কেটপ্লেস এখন একটি বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে । তাছাড়া এখন অনেকেই রয়েছে যারা অনলাইন গেমসগুলো ল্যাপটপের মাধ্যমে গেম প্লে করতে আগ্রহী । প্রথমে কথা বলা যাক গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে , ফ্রী ফায়ার এবং pubg এর মতো অনলাইন গেমস গুলো এই ল্যাপটপটির মাধ্যমে আমরা হাই কোয়ালিটির গ্রাফিক্স ডিজাইন উপভোগ করতে পারব । এছাড়াও কিবোর্ডের যে টাইপিং ইমপ্রুভমেন্ট এখানে রয়েছে সেটির সাহায্যে অলমোস্ট আমরা একটি ভালো ফিচার পেয়ে যাব । ইনকাম করার জন্য বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আমরা এই গেমগুলোর সাহায্যে লাইভ স্ট্রিম করে থাকি । আর আমি আশা করি সেখানেও একটি ভালো ফলাফল আসবে এই ল্যাপটপটি থেকে ।
অনলাইন থেকে অর্ডার
অনলাইন থেকে শপিং করা বা কিছু কেনাকাটা করার অন্যতম কিছু ইজি মাধ্যম রয়েছে । আর সেগুলোর কথা যদি বলি তাহলে আমরা দারাজ , আলিবাবা ডট কম , আমাজন এর মত আরো বেশ কিছু অনলাইন অর্ডার সাইট । আপনি যদি ঘরে বসেই এই ল্যাপটপটিকে অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার করতে চান তাহলে কিন্তু সেটি খুব কঠিন কিছু নয় । উপরে উল্লেখিত অনলাইন শপিং সাইড গুলো থেকে আপনি খুব সহজেই ওয়ালটনের নতুন এই ল্যাপটপটি অর্ডার করতে পারবেন । এছাড়াও আপনি চাইলে ডিরেক্ট ওয়ালটনের ভেরিফাই করা ওয়েবসাইট থেকে এই ল্যাপটপটি কালেক্ট করে নিতে পারেন । তবে অনলাইনের কাজগুলোতে সাকসেসফুল হতে হলে আপনাকে অবশ্যই চোখের সাথে সাথে কান দুটিকে খোলা রাখতে হবে । তার কারণ হলো বেশ কিছু ফেক ওয়েবসাইট রয়েছে সেগুলো থেকে অর্ডার করার পর আপনি ঠকে যেতে পারেন । আর এমনটা প্রায় সময় আমরা নিউজ পেপারের হেড লাইনে দেখতে পাই । এডভাইস হিসাবে আপনাকে দুটি কথা না বললেই নয় ল্যাপটপটি অর্ডার করার সময় অবশ্যই আমাদেরকে ভেরিফাই করা ওয়ালটনের ওয়েবসাইট খুঁজে বের করতে হবে ।
প্রাইস বা মূল্য
ল্যাপটপের ফুল স্পেসিফিকেশন আমরা উপরের আলোচনায় জানতে পেরেছি । ডেক্সটপটির বা ল্যাপটপটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে দেশীয় মার্কেটে ৫২,০০০ টাকা । এবার আমরা যদি টোটাল স্পেসিফিকেশন অ্যারাউন্ডে বিবেচনা করি তাহলে স্পেসিফিকেশন এর চেয়ে বাজেট কিছুটা বেশি বলে মনে হবে । কোম্পানিটি একটি ভালো সুযোগ করে দিয়েছে গ্রাহকদের জন্য আর সেটি হল ল্যাপটপটির সাথে থাকছে দুই বছরের ওয়ারেন্টি । সেম বাজেটের মধ্যে আমরা অন্যান্য যে ল্যাপটপ রয়েছে সেখানে আমরা আরও বেশ কিছু জায়গায় প্লাস পয়েন্ট দেখতে পেয়েছি তো সেখানে ওয়ালটনের প্রতি আমার অবশ্যই একটি আবেদন থাকবে আপডেট আনার জন্য ।